কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের হত্যা: উত্তরপ্রদেশের জনতা সাংঘাতিক পথ বেছে নিয়েছেন
পুলিশের উপর রাগের বহিঃপ্রকাশ ক্ষিপ্ত জনতার, এর কারণ খুঁজে বের করতেই হবে
- Total Shares
ঘটনা দু'টি কাকতলীয়, একই সঙ্গে বেদনাদায়ক। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে উত্তরপ্রদেশের দুই পুলিশকর্মী অত্যন্ত নির্মম ভাবে প্রাণ হারালেন।
দেখা যাচ্ছে, উত্তরপ্রদেশের জনতা অল্পেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন যার বহিঃপ্রকাশ রাজ্যের পুলিশকর্মীদের উপর পড়ছে। কেন এমন হচ্ছে সেই কারণগুলো খুঁজে তা বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে বৈকি।
পুলিশকর্মী নিহত হলেই উত্তরপ্রদেশ সরকার আর্থিক ক্ষতিপুরণ ও পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দেয়। কিন্তু কর্তব্যরত অবস্থায় একজন পুলিশকর্মীর মৃত্যুর ক্ষতি কোনও ভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়। পরিবারের একজন চাকরি পেলেও পরিবারের সেই সদস্যটিকে তো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়!
কনস্টেবেল সুরেশ বৎসকে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে [সৌজন্য: টুইটার]
ডিসেম্বর মাসের তিন তারিখে উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে ক্ষিপ্ত জনতার হাতে নিহত হয়েছিলেন ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমার সিং। একবার সেই ঘটনা ফিরে দেখা যাক।ইতিমধ্যেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লোকটিকে প্রাথমিক ভাবে জেরা করার পর পুলিশ জানতে পেরেছে, হত্যা করার আগে সুবোধ সিংয়ের উপর নির্মম অত্যাচার করা হয়েছিল। তাঁর সার্ভিস রিভলভারটিও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।
জনতার এই আচরণে একটি কথাই প্রমাণিত হয় - সমাজের এক শ্রেণী ধর্মীয় চরমপন্থার প্রভাবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
বিস্বস্ত সূত্রের খবর অনুযায়ী, সুবোধ সিংয়ের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক ছিল না। এলাকায় হিংসা ছড়িয়েছে - এই খবর শুনে তিনি কর্তব্য পালনের জন্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন। আর শুধুমাত্র কর্তব্য পালন করতে গিয়েই তাঁকে তাঁর প্রাণ হারাতে হল।
ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করার পরিবর্তে এক বিজেপি নেতা সম্প্রতি বলেছেন, পুলিশ ইন্সপেক্টর নিজের দোষেই নিজের জীবন হারিয়েছেন। কারণ উন্মত্ত জনতার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায় তাঁর জানা ছিল না। যে সময় রাজ্য জুড়ে ধর্মীয় উত্তেজনা তুঙ্গে ও আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থার ক্রমশ অবনতি হয়ে চলেছে সেই সময় রাজ্যের শাসক দলের এক নেতার এহেন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য সত্যিই বিস্ময়কর।
Devendra Singh Lodhi, BJP MLA, on death of Inspector Subodh Kumar during #BulandshahrViolence: He became hopeless and shot himself in haste while trying to save himself. He was not targeted; it was a mob that got aggressive as the police was not filing an FIR. pic.twitter.com/XHBjgqkZmy
— ANI UP (@ANINewsUP) December 28, 2018
সুবোধ কুমারের মৃত্যুর মাত্র ২৬দিনের মাথায়, পূর্ব উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর জেলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভার পরেই হেড কনস্টেবল সুরেশ বৎসকে (৪৯) লক্ষ করে পাথর ছোড়া হয়। পাথরের আঘাতে মারা যান বৎস। এ ক্ষেত্রেও কিন্তু এই পুলিশকর্মী শুধুমাত্র তাঁর কর্তব্য পালন করছিলেন।
এই ঘটনাগুলো থেকে একটা জিনিস প্রকাশিত হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশ জুড়ে জনতা পুলিশের উপর বেশ ক্ষিপ্ত। এই প্রবণতা বেশ সাংঘাতিক এবং তা অবিলম্বে রোধ করা উচিত। নিহতের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া কোনও ভাবেই এই সমস্যার সমাধান নয়।
ইন্সপেক্টর সুবোধ সিংয়ের মৃত্যুর পর রাজনৈতিক নেতারা দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন [ছবি: পিটিআই]
গাজিপুর বরাবরই স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। রাজ্যের পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোর মধ্যে এই জেলাটিকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। অতি সম্প্রতি এখানে রেল সংযোগ-সহ কয়েকটি পরিকাঠামোগত উন্নয়ন লক্ষ করা গিয়েছে। এই পরিবর্তনগুলোর পাশাপাশি স্থানীয়দের মানসিকতার পরিবর্তনেরও প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে আইন রক্ষকদের আক্রমণ করা যে ঠিক নয়, স্থানীয়দের সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
পুলিশকর্মীদের উপর অসহিষ্ণুতা বন্ধ করতে পুলিশ প্রশাসনকে আরও সজাগ হতে হবে। জনতার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে জনতার বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পুলিশ ও জনতাকে একযোগে কাজ করতে হবে।
এই কাজগুলো যত দ্রুত করা যাবে তত দ্রুতই পুলিশের উপর মানুষের অবিশ্বাস কমবে। আস্থা বাড়বে। কিন্তু পুলিশের সেই সাহায্যের হাতটা যে অদূর ভবিষ্যতেও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে