কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম কী? আপনিও এই সমস্যায় ভুগছেন না তো?

ঠান্ডা ঘরে বসে কম্পিউটার করার ফলে অশ্রুগ্রন্থি শুকিয়ে যেতে পারে

 |  3-minute read |   27-08-2018
  • Total Shares

কাজের জন্য বা পড়াশোনার জন্য আমাদের অনেককেই দীর্ঘক্ষণ টানা কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করতে হয়। এর ফলে বহু মানুষের বিভিন্ন রকম চোখের সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং তা নিয়ে তাঁদের বেশ ভুগতেও হচ্ছে।

তবে তা বলে আমরা কী কম্পিউটারে কাজ বন্ধ করে দেব? সেটা তো সম্ভব নয়।

তবে প্রথমেই যে কথাটা বলব এবং যে কথাটা ছেলেবেলায় আমরা যখন খুব কাছ থেকে টেলিভিশন দেখতাম তখন বাড়ির বড়রা হামেশাই বলে থাকতেন, "খুব কাছে থেকে টেলিভশন দেখ না, তা হলে চোখ খারাপ হয়ে যাবে।" ঠিক একই কথা আমরা রোগীদেরকেও বলি- খুব কাছে থেকে কম্পিউটারে কাজ করবেন না।

body1_082718030915.jpgকম্পিউটার স্ক্রিন থেকে মোটামুটি ২৫ থেকে ২৬ ইঞ্চি অর্থাৎ এক হাত মতো দূরত্ব রাখা উচিত

কম্পিউটারের খুব কাছ থেকে স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলে বাচ্চাদের ও অল্পবয়সীদের চোখের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।

দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করার ফলে যে ধরণের চোখের সমস্যা হয় তাকে ডাক্তারি পরিভাষায় কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম (computer vision syndrome) বলা হয়।

সাধারণ ভাবে আমরা যখন আমাদের চোখটা কুঁচকে কম্পিউটারের স্ক্রিনে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করি তখন চোখের পেশী ও স্নায়ুর উপর ভীষণ চাপ পড়ে এর ফলে আমাদের চোখ খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও চোখে পেশী যাকে আমরা অকুলার মাসেল বলি সেগুলোর উপর চাপ পড়ে তাই চোখে ব্যথা করে এবং ক্রমশ দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে।

যদিও আগে রোগীদের আমরা আলাদা করে আর একটি মোটা স্ক্রিন লাগিয়ে নিতে বলতাম যাতে রোগীর চোখ অনেকটা সুরুক্ষিত থাকে।  তবে এখন আর তার খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না কারণ প্রযুক্তির উন্নতির ফলে কম্পিউটার স্ক্রিনগুলো এমন ভাবেই তৈরি করা হয় যাতে চোখের ক্ষতি না হয়। তবে অতিরিক্ত কাছে থেকে বা দীর্ঘক্ষণ অথবা কম আলোয় কম্পিউটার ব্যবহার করলে চোখের ক্ষত হয়। 

বেশিক্ষণ কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ খসখস করে, ডাক্তারি ভাষায় যাকে চিকিৎসকরা 'ড্ৰাইআই' বলেন।

body3_082718031025.jpgবাচ্চাদের ক্ষেত্রে যদি সময় থাকতে অভিভাবক সচেতন না হন তাহলে বাচ্চাদের টেরা হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে

এখন প্রায় সব অফিস শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ঠান্ডা ঘরে বসে কম্পিউটার করার কারণে চোখ খসখস করতে পারে, চোখ থেকে জল পড়তে পারে ও মাথার যন্ত্রণা শুরু হতে পারে।

যাঁদের বয়স চল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছে তাঁরা যদি কম্পিউটারে কাজ করার সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রোগ্রেসিভ বাইফোকাল চশমা ব্যবহার করেন তাহলে এই বয়সী মানুষদের অতিরিক্ত কম্পিউটার করার ফলে চোখের যে সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে সেগুলো অনেকটা কম হয়। এই ধরণের চশমা পড়ার ফলে কাছের ও দূরের দৃষ্টির একটা সমন্বয় বজায় থাকে। চোখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়।

এ ছাড়াও ঘাড় বেঁকিয়ে কম্পিউটার করার ফলে ঘাড়ে ও পিঠে যে ব্যথা হয় এই চশমা পরলে তারও উপশম ঘটে। চোখের পেশীর ও স্নায়ুর উপরেও কম চাপ পড়ে।

কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে মোটামুটি ২৫ থেকে ২৬ ইঞ্চি অর্থাৎ এক হাত মতো দূরত্ব রাখা উচিত।  কম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিন চোখের ঠিক সমান জায়গায় থাকে। স্ক্রিনের রং (কালারকন্ট্রাস্ট) এবং আলো মাঝামাঝি রাখতে হবে যাতে খুব অন্ধকার না হয় বা খুব আলো না হয়ে যায়। 

body2_082718030953.jpgঠান্ডা ঘরে বসে কম্পিউটার করার কারণে চোখ খসখস করতে পারে

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যদি সময় থাকতে অভিভাবক সচেতন না হন তা হলে বাচ্চাদের দৃষ্টি তির্যক হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। পাশাপাশি সব সময় তাদের চোখে একটা চুলকানি ভাব হয়, একটা অস্বস্তি থাকে, চোখ জ্বালা করে ও চোখ থেকে জল পড়বে এবং চোখটা লাল হয়ে থাকে।

তা ছাড়া বাচ্চারা বার বার চোখে হাত দিয়ে ফেলে বলে সংক্রমণের আশঙ্কা আরও বেড়ে যেতে পারে।  তাই বাবা-মায়েদের এই বিষয় সচেতন থাকতে হবে। দেখতে হবে বাচ্চারা যেন অকারণে দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে না থাকে। আর যদি মনে হয় শিশুর চোখের সমস্যা হচ্ছে, তাহলে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

যদি কোনও শিশুর জন্মগত কোনও চোখের সমস্যা থাকে তা হলে অবশই চিকিৎসকের পরামর্শ  নিয়ে তাকে কম্পিউটার ব্যবহার করতে দিন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ASIM KUMAR GHOSH ASIM KUMAR GHOSH

Professor & Head of Retina- Vitreous unit, RIO, Medical College Kolkata

Comment