'চলো জিতে হ্যায়' সিনেমায় খুব সুন্দর করে মোদীর চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে
বায়োপিকে দেখান হয়েছে দারিদ্র্য নিয়ে সত্যিই কতটা স্পর্শকাতর গুজরাটের ভাদনগরের নাড়ু
- Total Shares
কোনও চরিত্রকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর জন্যে বায়োপিকগুলোর দুর্নাম রয়েছে। 'চলো জিতে হ্যাঁয়' (চলুন অন্যের জন্য বাঁচি) নামের একটি বায়োপিকে নরেন্দ্র মোদীর স্কুল জীবনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এবং, তা একবারের ফোলানো ফাঁপানো নয়। এই সিনেমায় দেখান হয়েছে যে সেই বাল্যবয়স থেকেই মোদী গরিবদের দুঃখে মর্মাহত থাকতেন। আজকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও মোদি গরিবদের জন্য যথেষ্ট চিন্তিত আর এর সঙ্গে গরিবদের খুশি করার কোনও সম্পর্ক নেই।
এই সিনেমার নায়কের নাম নাড়ু (নরেন্দ্র মোদি) যার মনে সর্বদা একটি প্রশ্নই উঁকি মারত: "আপনি কার জন্যে বাঁচি।" একটি জীর্ন বাড়ির রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে নাড়ু তার মাকে এই প্রশ্ন করছে। মা এবার তাকে তার বাবার কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। নাড়ুর বাবা ভাদনগর স্টেশনে চা বিক্রি করেন। কিন্তু তিনিও নাড়ুর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না। উল্টে, তিনি নাড়ুকে পরমার্শ দেন তার বিদ্যালয়ের শিক্ষককে এই প্রশ্নটি করতে।
নাড়ুর এক সহপাঠীর নাম হরিশ সোলাঙ্কি। এই হরিশ একটি দলিত মেথর পরিবারের ছেলে। বেশ কিছুদিন ধরেই হরিশ স্কুলে আসছে না। মাস্টারমশাই যখনই হরিশের নাম ধরে ডাকেন গোটা ক্লাসে একসঙ্গে জবাব দেয়, 'অনুপস্থিত, অনুপস্থিত'।
অবসর সময় স্টেশন চত্বরে বাবাকে সাহায্য করতে করতে নাড়ু হরিশ ও তার মাকে জিজ্ঞাসা করে হরিশ কেন স্কুলে যায় না। হরিশের মা বিরক্ত হয়ে উত্তর দেন যে তিনি তাঁর রোজগারের পয়সা দিয়ে পরিবারের পেট চালাতে পারেন। হরিশের স্কুলের মাইনে দেওয়া তার সাধ্যের বাইরে।
নাড়ু বুঝতে পারে যে তার বন্ধু হরিশের পরিবার এতটাই গরিব যে হরিশের স্কুলে যাওয়ার পোশাক কেনার সামর্থ্য তাদের নেই। এর পর নাড়ু তার স্কুলের মাস্টারমশাইকে অনুরোধ করে সে যেন হরিশকে বাড়ির পোশাক পরে স্কুলে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়। কিন্তু মাস্টারমশাই জানান যে একজনের জন্য নিয়ম ভঙ্গ করলে স্কুলে বিস্তর ঝামেলার সৃষ্টি হতে পারে।
এখানে সিনেমার পরিচালক মঙ্গেশ হাডেয়ালে আসলে মোদীর সুশৃঙ্খল জীবনের রহস্যটা বোঝাতে চেয়েছেন।
এর কিছু দিন বাদে নাড়ু গ্রামের একটি যাত্রায় অভিনয় করবার সুযোগ পায়। একটি দলিত বালকের ভূমিকায় অভিনয় করে উপস্থিত দর্শকদের কাঁদিয়ে দিয়েছিল নাড়ু। দর্শকের মধ্যে একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি নাড়ুর অভিনয়ে মোহিত হয়ে তাকে কিছু অর্থ দিয়ে পুরষ্কৃত করেন।
ওই টাকা দিয়ে নাড়ু হরিশের জন্য স্কুলের পোশাক কিনলেন।
পরেরদিন উপস্থিতি নেওয়ার সময় মাস্টারমশাই যখন হরিশের নামের পাশে অনুপুস্থিত লিখতে যাচ্ছিলেন তখনই স্কুলের পোশাক পড়ে হরিশ ক্লাসরুমে উপস্থিত হয়। মাস্টারমশাই সহ সকলেই খুশিতে ফেটে পড়ে।
সিনেমার নির্মাতা আনন্দ এল রাই ('যিনি তনু ওয়েডস মনু'-র নির্মাতা ছিলেন) ও মহাবীর জৈন এবং পরিচালক হাডেয়ালে নাড়ুর দারিদ্র্যকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেননি। সিনেমায় দেখা যাচ্ছে নাড়ু পরিষ্কার পরিছন্ন জামা কাপড় পড়ে স্কুলে যায় যা কিন্তু মোদীর স্বভাবের সঙ্গে একেবারে মাননসই। দরিদ্র্য পরিবার থেকে উঠে এলেও মোদী কিন্তু সর্বদাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ইস্ত্রি করা জামা কাপড়ই পড়তে পছন্দ করেন।
সিনেমাটির চিত্রায়ন করা হয়েছে ভাদনগরে, যেখানে সত্যি সত্যিই মোদীর ছেলেবেলা কেটেছে। যে বাড়িতে মোদী থাকতেন তা অবশ্য বিক্রি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মোদীর তুতো ভাই বোনেরা যে বাড়িতে থাকতেন তা এখনও একই অবস্থায় রয়েছে। এই সিনেমায় যে স্কুলে শুটিং হয়েছে তা সত্যি সত্যিই মোদীর সখুল ছিল। সিনেমায় নাড়ু ও হরিশের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেছে ধৈর্য্য দর্জি ও দেব মোদী।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলে যাঁরা থাকেন তাঁরা খুব ভালোই জানেন যে মোদীকে সামলানো খুব সহজ নয়। অথচ দারিদ্র্যের প্রসঙ্গ এলেই মোদী কিন্তু স্পর্শকাতর হয়ে পড়েন।
এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ গুজরাট সরকারের ইউএন মেহতা ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিওলজি, যেটি আহমেদাবাদে রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে গরিবরা এক হয় বিনামূল্যে না হয় খুবই কম খরচে চিকিৎসা করায়। ২০০১ সালে মোদী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সময় এই প্রতিষ্ঠানের বাজেট ছিল ২ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে তিনি যখন গুজরাট ছেড়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন তখন এই প্ৰতিষ্ঠানের বাজেট প্রায় ৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানে মোদী একটি নতুন বিলিডিং গড়েন যার পরিকাঠামো নাকি আহমেদাবাদের অ্যাপোলো হাসপাতালের থেকে উন্নতমানের।
সাংবাদিক হিসেবে আমার সঙ্গে মোদীর সম্পর্ক ১৯৮৭ সাল থেকে। তাই আমি হলফ করে বলতে পারি এই বায়োপিকে একেবারেই মোদীকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখান হয়নি।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে