ভাগাড়ের মাংস নিয়ে হইচইয়ের পরে রেস্তোরাঁয় কদর বাড়ছে মাছ ও নিরামিষের
রেস্তোরাঁয় মাংস খাওয়া কমিয়েছেন অনেকেই, চাইছেন বিভিন্ন নিরামিষ পদ
- Total Shares
সাম্প্রতিকালে ভাগাড়র কাণ্ড নিয়ে হৈচৈ হওয়াতে আমাদের হেঁশেলে মাংসের কদর আগের মতো আর নেই। ভাগাড়ের পচা মাংসের ত্রাস রাজ্যজুড়ে সবাইকে শঙ্কিত করেছে, তাই আমিষ খাবারের অতিবড় সমঝদারও এখন ওই পথ মাড়াচ্ছেন না তেমন একটা। আমার পরিচিত অনেক বাড়িতে এও দেখতে পেলাম যে তাঁরা নিরামিষ পদকেই একটু এদিক ওদিক করে বেশ আমিষ পদের মতো করে রান্না করেছেন। অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার মতো। পচা মাংসের ভয়ে আমরা একটু আতঙ্কিত তো অবশ্যই কিন্তু তাই বলে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ায় ভাটা পড়েনি তেমন, শুধু মেনুর রদবদল হয়েছে। মাংস ও চিকেনের জায়গায় ঢুকে পড়েছে বিভিন্ন তরকারি, ডিম, চিংড়ি ও মাছ।
ভাগাড় থেকে সোজা রেস্তোরাঁগুলোতে চালান হয়ে যাচ্ছে মরা গোরু, মোষ, ছাগল, কুকুর, শুয়োর, বিড়াল থেকে শুরু করে আরও না জানি কতকিছুই। তারপর সেগুলোকে রাসায়নিকের সাহায্যে দুর্গন্ধমুক্ত করে ভালো মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে বিভিন্ন সুস্বাদু পদ রান্না হচ্ছে। বাসে, ট্রামে, রাস্তায়, পাড়ার মোড়ে সর্বত্রই এখন গল্পের দুটি বিষয়: ভাগাড় কাণ্ড ও কর্নাটক নির্বাচন।
তাই এটাই সুযোগ যখন আমরা আমিষ বর্জনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার বদলে এই সুযোগে বরং দেখে নেওয়া যেতে পারে দুয়োরানি নিরামিষ পদগুলির কাটতি কেমন, কিংবা নিরামিষের কোন পদগুলো চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
ভেজ বিরিয়ানির বেশ ভালোই চাহিদা রয়েছে
শহরের নামজাদা রেস্তোরাঁ যেগুলোর খ্যাতি মূলত তাঁদের আমিষ পদের জন্য, তাঁরাও এখন নিজেদের নিরামিষ পদের বৈচিত্র্যের ডালি সাজিয়ে তৈরি রসনা তৃপ্তির জন্য।
আরসালানের ম্যানেজার মুস্তাফা জানালেন, ভাগাড় কাণ্ড নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে তখন সাময়িক ভাবে তিরিশ শতাংশ মতো বিক্রি কমে গিয়েছিল, কিন্তু মোটের উপর তাঁদের ব্যবসার তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। প্রতিষ্ঠানের সুনাম বজায় রাখার তাগিদেই তাঁরা খাবারের গুণমানের ব্যাপারে কোনওরকম সমঝোতা করতে নারাজ। তবু নিত্যনতুন খাবারের জন্য যাতে খরিদ্দাররা তাঁদের প্রিয় রেস্তোরাঁতে খেতে আসতে পারেন, তার জন্য এঁরা নানা রকমের নিরামিষ পদের সম্ভার রেখেছেন।
কাজেই আমিষের থেকে যাঁরা সাময়িক বিরতি নিয়েছেন তাঁরা এই সুযোগে অবশ্যই নিরামিষ বিরিয়ানি কিংবা নিরামিষ কাবাব খেয়ে পারেন। আরসালানের ম্যানেজার কথায়, এই সময় নিরামিষ খাবারের মধ্যে ভেজ বিরিয়ানির বেশ ভালোই চাহিদা রয়েছে তাঁদের দোকানে।
রেস্তোরাঁয় রয়েছে নানা রকমের নিরামিষ পদের সম্ভার
দক্ষিণ কলকাতার একটি নিরামিষ রেস্তোরাঁ সাত্ত্বিকের ম্যানেজার সুপ্রতীক রায় জানিয়েছেন, ভাগাড় কাণ্ডে রাজ্যের সবকটি নিরামিষ খাবারের দোকানগুলোর লাভ হয়েছে নিঃসন্দেহে, কারণ সাধারণ মানুষ পচা মাংসের আতঙ্কে নিরামিষ রেস্তোরাঁ মুখী হয়েছেন। তাঁদের রেস্তোরাঁয় আগে বাঙালিরা তেমন একটা আসতেন না, কিন্তু গত দু'মাসে অনেক বাঙালি তাঁদের রেস্তোরাঁয় এসে নিরামিষ খাবার খেয়েছেন, এমনকি তাঁরা ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও খাবার খেয়ে যাচ্ছেন।
আগে যে নিরামিষ খাবার যেমন সয়াবিন, টোফু, পানির, ব্রকোলি, বেবিকর্ন বা মাশরুমের অতটা কদর ছিল না, সেগুলোর চাহিদাও এখন বেড়েছে।
এদিকে আবার শহরের যে রেস্তোরাঁগুলো দক্ষিণ ভারতের খাবার বিক্রি কররেন সেই সব দোকানেও দেখা যাচ্ছে মানুষের ভিড়।
দক্ষিণ ভারতের খাবার খেতেও ভিড় জমছে রেস্তোরাঁয়
প্রথমে ভেবেছিলাম শুধু মাত্র নিরামিষ পদের কোথায় বলব এখানে। কিন্তু সরজমিন তদন্ত করতে গিয়ে দেখলাম যে এই সময় যাঁরা মাংস খেতে বিশেষ পছন্দ করেন তাঁরা দোকানে গিয়ে মাছ, চিংড়ি কিংবা ডিম খাচ্ছেন। তাই মাছ বা চিংড়ির কথা না বললে হয়ত লেখাটার প্রতি সুবিচার করা হবে না।
যাঁদের আমিষ না হলে একেবারেই চলে না তাঁরা রেস্তোরাঁতে গিয়ে মূলত মাছ ও বাগদা কিংবা গলদা চিংড়ি খাচ্ছেন বেশি।
যাঁরা মাংস খেতে বিশেষ পছন্দ করেন তাঁরা দোকানে গিয়ে মাছ, চিংড়ি কিংবা ডিম খাচ্ছেন
শহরের একটি বাঙালি রেস্তোরাঁ ষোলোআনা বাঙালির মালিক কস্তুরী বসু রায় যেমন জানান যে এই সময় তাঁদের দোকানে কিছুটা হলেও মাংসের বিক্রি কমেছে। তা ছাড়া কোনও রকম বিতর্ক এড়াতে তাঁরা দোকানে মাংসের কোনও পদই তেমন রাখছেন না। তবে কেউ যদি আগের থেকে অর্ডার দেন তাহলে তাঁদের জন্য বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আজকাল তাঁরা নিরামিষের হরেক পদ মেনুতে রাখছেন এবং যাঁরা তাঁদের দোকানে খেতে আসছেন তাঁরা এই পদ খাচ্ছেনও। তিনি বলেন, "আগে নিরামিষ খাবারের এত রকম বৈচিত্র আমাদের দোকানে তেমন একটা হত না। এখন বিভিন্ন নিরামিষ পদ যেমন পালং শাক দিয়ে ধোকা, থোড়ের কুড়ো, পোস্তবাটার ঝাল, মোচার পাতুরি ও এমন অনেক নিরামিষ পদ আমাদের দোকানে যাঁরা খেতে আসছেন তাঁরা বেশ পছন্দ করছেন। এই সময় চিংড়ি ও মাছের চাহিদা খুব বেড়েছে। তাই মাছ ও চিংড়ি দিয়েও আমরা বিভিন্ন পদ রান্না করছি যেমন কচুচিংড়ি বাটা, দুধিপাবদা ও পলতা চিংড়ি।"
মাংসের পদগুলোর ভিড়ে ভাগাড়ের মাংসের উৎপাতে হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন মোগলাই, চাইনিস কিংবা বাঙালি পদ এখন জায়গা করে নিয়েছে আমাদের পাতেও, বাড়িতে কি বাইরে।