সতর্ক থাকুন, কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন
সুরক্ষা কর্মী মোতায়ন নেই এমন সব এটিএম থেকে টাকা না তোলাই শ্রেয়
- Total Shares
এটিএম কার্ড ব্যবহার কিংবা কার্ডের পিন ব্যবহার করে ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের টাকা লোপাট হয়ে যাওয়ার খবর আমরা অনেক সময়ই দেখেছি। শহরে আবার এই ধরণের জালিয়াতির শিকার হলেন ব্যাঙ্ক গ্রাহকরা। এক ধরণের যন্ত্র যার নাম 'স্কিমার', সেই যন্ত্র ব্যবহার করে গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে গেল লক্ষ লক্ষ টাকা।
স্কিমার এমন একটি বিশেষ যন্ত্র যেটা এটিএম মেশিনে লাগানো হয়, তাই যেই মাত্র কোনও গ্রাহক মেশিনে তাঁর কার্ড ঢোকাচ্ছেন কার্ডে থাকা যাবতীয় তথ্য স্কিমারে চলে আসে। এই ভাবেই চুরি হয়েছে ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের প্রচুর টাকা। এখন প্রায় সবকটি অনলাইন শপিং ওয়েবসাইটে এই ধরণের ক্রেডিট কার্ড স্কিমার মেশিন বিক্রি হচ্ছে।
জাল কি-প্যাড
তাই আমার মনে হয় এই বিশ্ব ব্যাপী দুর্নীতির যুগে বিভিন্ন জালিয়াতির মাত্রা বাড়তেই থাকবে আর কিছু অসাধু লোকজন নতুন সব ফিকিরও বার করবে মাথা থেকে। তা কোনও ভাবেই ঠেকানো সম্ভব নয়। আর ক্রেডিট কার্ড অথবা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন রকম জালিয়াতি হতে পারে। তাই নিজেকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে এবং সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
শুধুমাত্র স্কিমারের ব্যবহারই নয় অন্যান্য আরও উপায় যেমন নকল কি-বোর্ড ব্যবহার করে কিংবা এটিএমে যে ক্যামেরা বসানো থাকে সেই ক্যামেরার মাধ্যমেও টাকা চুরি হতে পারে।
তা হলে করণীয়:
*যখনই হাতে নতুন ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড পাবেন তার পিছনে নির্দিষ্ট জায়গায় নিজের সই করুন।
*যত দ্রুত সম্ভব নতুন কার্ডটি ব্যবহার করে একবার হলেও কিছু টাকা তুলুন। কারণ এখন দেখা যাচ্ছে যে, যে সব কার্ডের সময় সীমা পেরিয়ে গেছে অর্থাৎ কার্ডটি 'এক্সপায়ার' করে গেছে তেমন কার্ড দিয়েও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বেরিয়ে গেছে।
হাতে নতুন কার্ড পেয়ে কার্ডের পেছন দিকে সই করুন
*খুব দরকার না হলে এটিএম থেকে টাকা তুলবেন না, প্রয়োজনে আমরা যেমন চেকের মাধ্যমে ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা তুলি সে ভাবেই টাকা তুলুন।
*যেখানে সেখানে নিজের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করাই ভালো।
*আমাদের শহরে এমন বহু এটিএম আছে যেখানে নিপাপত্তা কর্মী থাকেন না। যে সব এটিএমে নিপাপত্তা কর্মী মোতায়ন নেই সে সব এটিএম থেকে টাকা না তোলাই শ্রেয়।
*ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কোনও রকম টাকার লেনদেন হলেই যাতে আপনি আপনার ফোনে কিংবা ই-মেলে অ্যালার্ট পেয়ে যান সেই পরিষেবা চালু রাখুন।
*আমরা যখন কোনও রেস্তোরাঁয় খেতে যাই বা পেট্রল পাম্পে যাই অথবা কেনাকাটা করার পর দাম মেটাতে অনেক সময় নিজেদের কার্ডটা অন্য কাউকে দিয়ে থাকি সোয়াইপ করার জন্য। এটা করবেন না, সেই ব্যক্তিকে নিজের গোপন পিনকোডটিও বলে দেবেন না। যাতে কার্ড সোয়াইপ করা হয়, সেই রিডিং মেশিনেটিকে আপনার কাছে নিয়ে আসতে বলুন কিংবা আপনি নিজে গিয়ে ওই মেশিনে পাসওয়ার্ডটি দিন।
যে এটিএমে সুরক্ষার অভাব রয়েছে সেখানে টাকা তুলবেন না
*আমরা অনেকেই মনে করি আমার কাছে যদি আমার কার্ডটাই থাকে তাহলে অন্য কেউ আমার পিন নিয়ে কী করতে পারবে। এই ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। সব সময় সচেতন থাকুন।
*অনলাইনে কেনাকাটা করার পর দাম মেটানোর সময় আমরা আকছার কার্ড ব্যবহার করি। অনেক ওয়েবসাইটে 'এক্সপ্রেস চেকআউট' বলে একটি পরিষেবা দেওয়া থাকে। আমরা যখন অনলাইনে কোনও কিছু কেনাকাটা করি তখন কার্ডে দাম মেটানোর সময় সেই ওয়েবসাইটে নিজেদের কার্ডের কয়েকটি তথ্য লিখতে হয়। তাই যাতে প্রত্যেকবার কেনাকাটা করার পর কার্ডের খুঁটিনাটি লিখতে না হয় তাই 'এক্সপ্রেস চেকআউট'-এর পরিষেবা দেওয়া থাকে। এর ফলে ওই ওয়েবসাইটটি আপনার কার্ডের সব তথ্য সংগ্রহ করে রাখবে। এই পরিষেবাটি এড়িয়ে চলুন।
*এমন অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে 'https' শুরু না হয়ে শুধু 'http' দিয়ে শুরু হয় সেই সব ই-কমার্স ওয়েবসাইটে কিছু কেনাবেচা করবেন না কারণ 's' কথাটির অর্থ এখানে হল 'secured'। তাই পরিষ্কার যে সেই ওয়েবসাইটটি সুরক্ষিত নয়। এসব ক্ষেত্রে এগুলো জাল ওয়েবসাইট হয়ে থাকে।
*কার্ডের পিনকোড নিয়মিত বদলাতে হবে। অন্য কাউকে আপনার হয়ে পিন পরিবর্তন করতে বলবেন না।
এটিএম কার্ড চুরি হয়ে গেলে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্ককে জানান
*এটিএমের ঘরে ঢোকার সময় নজর রাখুন কেউ আপনার পিছু নিয়েছে কি না এবং এটিএম-এর ঘরে একা ঢুকে টাকা তুলুন।
*পুরোনো কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নতুন কার্ড হাতে পাওয়ার পর পুরোনো কার্ডটিকে ফেলে দেওয়ার আগে সেটিকে তিন বা চার টুকরো করে কেটে তারপর ফেলুন।
*এটিএম কার্ড চুরি হয়ে গেলে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্কে জানান। এবং কার্ডটির মাধ্যমে কোনও রকম লেনদেনের সুবিধা বন্ধ করে দিন।
এটিএম থেকে টাকা তোলার সময় যদি দেখেন যে কি-প্যাডটির কোনও অংশ একটু ভাঙা কিংবা কোনও রকম আঠা বা সেলোটেপের সাহায্যে সেটিকে জোড়া হয়েছে তাহলে সেই এটিএম থেকে টাকা তুলবেন না।
*মিনি স্টেটমেন্ট-এর উপর নিয়মিত নজর রাখুন।