সংগ্রাহকদের উৎসাহ দিতে কলকাতায় শুরু হয়েছে মুদ্রা উৎসব
সম্রাটের আকবরের মুদ্রা হাতে নিয়ে দেখার সুযোগ পেলে, সেই আনন্দের রেশ রয়ে যায় জীবনভর
- Total Shares
ক্যালকাটা নিউমিসম্যাটিক সোসাইটি বা কলকাতা মুদ্রা পরিষদের বয়স তেমন বেশি না হলেও এই শহরে অনেক দিন ধরেই সমমনস্ক লোকজন মুদ্রা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে আসছেন যাঁদের মধ্যে রয়েছেন বসন্ত চৌধুরী ও নায়ার। তবে সংগ্রহ করা বা সংগ্রহ দেখানো নয়, এই প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুদ্রা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা। প্রথম থেকেই চেষ্টা ছিল, পড়াশোনার মাধ্যম নিউমিসম্যাটিক অর্থাৎ মুদ্রা সংক্রান্ত বিষয়টি ছোটদের পাশাপাশি বড়দের মধ্যেও পড়াশোনার মাধ্যমে ছড়য়ে দেওয়া যায়।
মুদ্রার প্রদর্শনীতে দর্শকরা
বহুদিন থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত মুদ্রা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চর্চা হয়ে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি এশিয়াটিক সোশ্যাইটিতেও এ নিয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। আমরা কলকাতা মুদ্রা পরিষদেও মুদ্রা প্রদর্শনীর পাশাপাশি গবেষণামূলক প্রবন্ধ পাঠের উপরে জোর দিই। এখনও এশিয়াটিক সোশ্যাইটিতে এই ধরনের গবেষণামূলক প্রবন্ধ পাঠ করা হয়, আমাদের প্রদর্শনী ও উৎসবের পাশাপাশি এই ধরনের প্রবন্ধ পাঠের সুযোগ থাকে।
স্কুল ও কলেজের পড়ুয়াদের আমরা বিশেষ ভাবে উৎসাহ দিয়ে থাকি। এখানে এসে কেউ যদি মোগলসম্রাট আকবরের একটি মুদ্রা দেখে এবং সেটি হাতে নিয়ে দেখার সুযোগ পায় তা হলে ভীষণ আনন্দিত হয়। শুধু ছাত্রছাত্রীরা কেন, তাদের অভিভাবকরাও এই সুযোগ পেলে খুশিই হবেন। যাঁরা আসেন তাঁদের এ ভাবে আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি মুদ্রা সংক্রান্ত পড়াশোনার মধ্য দিয়ে যাতে এই বিষয়ে চর্চা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, আমরা সেই চেষ্টাও করি। আমার মনে হয় কলকাতা মুদ্রা পরিষদের উদ্যোগ এ ব্যাপারে যথেষ্ট কৃতিত্বের দাবিদার।
কলকাতা মুদ্রা উৎসব এবার ২১ বছরে পা দিল। আমরা চাই আরও বেশি লোক যোগ দিন। তবে আমরা এমন আশা করি না যে শীতকালে চিড়িয়াখানা ও ইকোপার্কের ভিড় এখানে হবে। কারণ এটি অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট বিষয়। খুব কম লোকই এ নিয়ে পড়াশোনা করে এসেছে এবং এখনও খুব কম লোকই এ নিয়ে পড়াশোনা করেন। তাই এখানে আমাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য থাকে – দেখে আনন্দ পাওয়া।
মুদ্রা পরখ করে নিচ্ছেন আগ্রহীরা
কোনও একটি মুদ্রার কত ওজন, কোন সময়ের, কী ধাতুতে তৈরি, ব্যাস কত এ সবে কারও আগ্রহ নাও থাকতে পারে, কিন্তু আকবরের একটি মুদ্রা হাতে ধরার অভিজ্ঞতা সারা জীবন একজনকে আনন্দ দিতে পারে।
অনেকে বলেন আজকাল ইন্টারনেট-মোবাইল ফোনের যুগে লোকে মুদ্রা নিয়ে আগ্রহী হচ্ছেন কিনা, আমার মতে লোকে একই ভাবে মুদ্রা নিয়েও ঘাঁটাঘাঁটি করছেন। আমরা যখন কোথাও কয়েন নিয়ে পড়াতে বা বক্তৃতা করতে যাই (মূলত প্রবীণরাই যান) তখন সেটাও লোকে দেখছেন। তবে এই সংখ্যাটি খুবই কম, এ নিয়ে আলোচনা করার লোকও খুবই কম।
আমরা বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে বলে আসছি, সোসাইটির পক্ষ থেকে স্কুলে স্কুলে ক্লাস নেওয়া হয়। আমাদের প্রদর্শনী দেখতেও স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীরা আসে, ভালোই ভিড় হয়। লোকে একেবারে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে এ কথা মনে করার কোনও কারণ নেই।
আমি প্রতি বছর অন্তত দু’টি করে নতুন মুখ দেখি যারা মুদ্রা সম্বন্ধে আদ্রহী। তার মধ্য থেকে যদি অন্তত দু’জন এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে পড়াশোনা শুরু করে, সংগ্রহ শুরু করে তা হলেই তো অনেক। অনেকে যে চাকরি করার পরেও সময় দিচ্ছেন এটা খুবই আশাপ্রদ। তা না হলে ত দিন ধরে সংগ্রহ চলে আসত না।
দেশ-বিদেশের টাকাপয়সার কেনাকাটা চলছে মেলায়
এখন ডাকটিকিটের চল প্রায় নেই। কাগজের তৈরি বলে এটি রক্ষণাবেক্ষণর জন্যও আলাদা করে পড়াশোনা করতে হয়। কিন্তু কয়েনের ক্ষেত্রে সেই ঝক্কি নেই। প্রথমত এটি হাতে পাওয়া যায়, দ্বিতীয়ত একটি কৌটোয় রেখে দিলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম রয়ে যায় কোনও রকম রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই। তাই ডাকটিকিট ও ডাক সংক্রান্ত স্মারক সংগ্রহে আগ্রহ কমে গেলেও মুদ্রা সংক্রান্ত সংগ্রহের ক্ষেত্রে এখনও সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তা ছাড়া কয়েনের আদানপ্রদান অন্য ভাবেও হয়ে চলে। হয়তো পরিচিত কেউ নেপালে গেলেন, সেখানকার স্মারক হিসাবে কাউকে দু’টি বা তিনটি মুদ্রা দিলেন। তিনি সেগুলি রেখে দিলেন। দেখা যায় বলে লোকে এখনও সংগ্রহে উৎসাহিত হয়।
আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করলে আমরা পরামর্শ দিই যাতে বাজারে যে সব মুদ্রা এখন পাওয়া যাচ্ছে (যাকে সংগ্রাহকদের ভাষায় বলা হয় রিপাবলিক অফ ইন্ডিয়া কয়েন) সেগুলি দিয়েই সংগ্রহ শুরু করতে। তাতে শুরু করাটা অনেক সহজ হয়।
কলকাতা মুদ্রা উৎসবেব আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
কোনও স্কুল যদি চায় তা হলে আমরা সেখানে মুদ্রা নিয়ে শিক্ষা (সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের পাঠ) দিতে চাই। হরিয়ানার মতো রাজ্যে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আর্কিয়োলজি, সেখানে এলাকার ইতিহাস নিয়ে চর্চা করার সুযোগ রয়েছে। আমরাও চাই এ রাজ্যে মুদ্রা সংক্রান্ত পড়াশোনা শুরু হোক বিদ্যালয় স্তর থেকে। কলকাতায় এই দাবি ওঠা শুরুও হয়েছে। অতিরিক্ত বিষয় হিসাবে যেন এটি পড়ার সুযোগ থাকে। তাতে ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে, সংগ্রাহকের সংখ্যাও বাড়বে। এ জন্য সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত।