নরেন্দ্র মোদীর #বাজেট২০১৯-এ কোনও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি নেই, তা সত্যিই প্রাসঙ্গিক
কোনও ধরণের জনদরদী পদক্ষেপ থেকে বিরত থেকে মোদী সরকার সকলকে অবাক করেছে
- Total Shares
মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদীর একটা সুনাম আছে। তবে তাঁর শাসনকালে পেশ করা পাঁচটি বাজেটেই ধারাবাহিকতা লক্ষ করা যায় এবং এই পাঁচটি বাজেটই বেশ সংযত। অনেকেই মনে করছিলেন #বাজেট২০১৯ হয়ত অনেকটা স্লগওভারের 'হেলিকপ্টার' শটের মতো হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সকলকে অবাক করে দিয়ে তিনি কোনও রকম জনদরদী পদক্ষেপ করা থেকে বিরত ছিলেন।
অনেকেই হয়ত আমার কথা শুনে রে-রে করে উঠবেন এবং কর ছাড় ও কৃষকদের সুবিধার্থে ঘোষিত প্রকল্পগুলো তুলে ধরবার চেষ্টা করবেন। কিন্তু তাঁদের কে আমার একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে - #রাহুলগান্ধীর 'প্রাক নির্বাচন বাজেট' কী রকম হতে পারত তা কি তাঁরা ভেবে দেখেছেন?
নির্বাচনের আগে তিনি যে ভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন তাতে মনে হয়েছিল এই বাজেটেও তার প্রতিফলন দেখা যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি।
পীযূষ গয়ালের বাজেট বক্তৃতা শুনে মনে হয়নি অর্থমন্ত্রী ব্যাকফুটে রয়েছেন [ছবি: পিটিআই]
প্রথমত, পীযূষ গয়ালের বাজেট বক্তৃতা শুনে কখনই মনে হয়নি যে অর্থমন্ত্রী ব্যাকফুটে রয়েছেন। অরুণ জেটলি ছুটিতে থাকার জন্য তাঁকে হয়তো বাজেট বক্তৃতা দিতে হয়েছে। কিন্তু একটা বিষয়ে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে, বিজেপি পুনরায় ক্ষমতায় এলে তিনিই হয়তো অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব পাবেন।
সম্প্রতি গয়ালের স্বভাবে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছিল। হয়তো তিন তিনটে মন্ত্রকের চাপ এর জন্যে দায়ী। কিন্তু আমি নিশ্চিত, গয়ালের শিল্পপতি বন্ধুরা একটা জিনিস খেয়াল করেছেন - অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই গয়াল তাঁর পুরোনো হাসিটা আবার ফিরে পেয়েছেন।
শেষ পাঁচ বছরে দেশের অর্থনীতির উপর তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত যে প্রভাব ফেলেছে তা নিয়ে একবারের জন্যেও অনুশোচনা করতে দেখা যায়নি গয়ালকে। মোদী-জেটলি বেশ চিন্তাভাবনা করে একটা ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেছিলেন এবং শত চাপের মাঝেও নিজেদের পথ থেকে সরে আসেননি। তার মানে, তাঁরা নিজেদের মতো করে রিপোর্ট কার্ড পেশ করবার পর্যাপ্ত সময় পেয়েছেন।
শেষ পাঁচটি বছরের হিসেবে যদি এক সঙ্গে করা যায় তাহলে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে মোদী সরকারকে কেউই অ্যাভারেজ নম্বরের থেকে বেশি দেবেন না।
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করাই এই সরকারের সবচাইতে বড় লক্ষ ছিল।
প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের প্রভাব কৃষকদের উপর কী ভাবে পড়তে পারে তা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা তর্ক করতেই পারেন। এর আগে বিজেপি পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে শিক্ষা পেয়েছিল। কিন্তু নেড়া তো বেলতলায় একবারই যায়। তাই মোদী সরকার যদি দৈনন্দিন পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তাহলে বিজেপির অতি বড় সমর্থকও তা নিয়ে সমালোচনা করতে পারবেন না। ইউপিএ ২ সরকারের আমলে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মনমোহন সিং যা বলেছিলেন তাও উদ্ধৃতি করতে ছাড়েননি পীযূষ গয়াল।তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, "যতটা আশা করা গিয়েছিল সেই তুলনায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এর প্রধান কারণ খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে।"
নিঃসন্দেহে, রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্যেও প্রশংসা দাবি করতে পারেন অরুণ জেটলি। কিন্তু ব্যাঙ্কের অনাদায়ে ঋণের পরিমাণ কমানো তাঁর প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল।
যে ভাবে বেআইনি ট্রানজাকশন আইনের মতো বিভিন্ন ধরণের আইন প্রণয়ন করা হয়েছে তার জন্য প্রশংসার দাবি করতে পারে মোদী-জেটলি জুটি।
কিন্তু লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে মোদী সরকার তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলাটি খেলেছে। নোটবন্দির প্রভাব অর্থনীতির উপর যায় পড়ুক না কেন নোটবন্দি, জিএসটি ও আধার কিন্তু একত্রে 'কালো' অর্থনীতির অনেকখানি পরিবর্তন ঘটিয়েছে। কালো টাকা আয়ের প্রবণতা অনেকখানি হ্রাস করা গিয়েছে।
মোদী-জেটলি জুটি কৃতিত্ব দাবি করতেই পারে [ছবি: পিটিআই]
সুতরাং ধরেই নেওয়া যায় কিছুটা অংশ কর ছাড় দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।
এর থেকে উপকৃত হয়েছে দেশের মধ্যবিত্তরা যাঁরা এতদিন নিজেদের উপেক্ষিত বলে মনে করতেন।
যিনিই কর প্রকল্পগুলো সাজিয়ে থাকুক না কেন তিনি বেশ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সাজিয়েছেন। করদাতার ন্যূনতম আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নিচের স্তরের করদাতারা খুশি হবেন। আবার, উচ্চশ্রেণীর জনগণও খুশি হবেন কারণ নিজের মালিকানার দ্বিতীয় বাড়ির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কর মকুব করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই দুই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কংগ্রেস যে অভিযোগই আনুক না কেন তা যে অচিরেই গুরত্ব হারাবে তা বলাই বাহুল্য।
বিরোধীদের এই বাজেট খানিকটা ধাক্কাও দিয়েছে।
পিএম-কিষান প্রকল্প নিয়েও অবিলম্বেই অভিযোগ উঠবে যে ছোট কৃষকদের নিয়ে সরকার বেশ উদাসীন, কিন্তু অর্থমন্ত্রী এর পাশাপাশি জানিয়েও দিয়েছেন যে সরকার বিভিন্ন ধরণের কল্যাণমূলক প্রকল্প জারি রাখবে।
এ ছাড়াও প্রতিরক্ষা এমনকি গরু নিয়েও কার্পণ্য করেননি পীযূষ গয়াল, অংসংগঠিত ক্ষেত্রে বিভিন্ন পেনশন প্রকল্পে করহীন গ্র্যাচুইটি চালু করা হয়েছে।
প্রতিরক্ষা, এমনকি গড়ুন কথাও মাথায় রেখে বাজেট তৈরি করেছেন গয়াল [ছবি: পিটিআই]
এছাড়া জিএসটির নতুন গঠনরূপও ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের স্বস্তি দেবে। জমি-বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে জিএসটির মাত্রা যদি হ্রাস করা হয় তাহলে নির্মাণশিল্প আবার জেগে উঠবে।
তার মানে কি এই বাজেট সত্যিই পরিবর্তনশীল?
একদমই নয়। আর এর জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতেই হবে। এর চেয়ে বেশি কিছু করতে গেলে মনে হত সরকার বোধহয় আতঙ্কে রয়েছে। বরঞ্চ পরের দশকের কথা মাথায় রেখেই মোদী ও তাঁর সরকার এই বাজেট পেশ করেছেন।
যে ভাবে শেষ পাঁচটা বছর সোজা ব্যাটে খেলেছে তাতে সকলের কাছে একটা বার্তাই গিয়েছে - এই সরকার নিজেদের প্রতি নিশ্চিত এবং তারা কী চায় তা তারা জানে।
সব মিলিয়ে এই বাজেটের জন্য পীযূষ গয়াল ও নরেন্দ্র মোদীকে বাহবা দিতেই হচ্ছে। এই বাজেটে কোথাও কোনও মিথ্যে প্রতিশ্রুতি নেই।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে