একটি রাস্তা ও পরিকাঠামোর উন্নয়ন ভারতীয় সেনাদের দুর্বিসহ পরিস্থিতির থেকে রক্ষা করতে পারে
সীমান্তের উল্টোদিকে চিন কিন্তু সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর প্রভূত উন্নয়ন ঘটিয়ে চলেছে
- Total Shares
১৯,০০০ ফিট উঁচুতে অবস্থিত চিন সীমান্তের তাপমাত্রা বছরের অধিকাংশ সময়তেই -৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকে। আর, শুধুমাত্র ভালো মানের রাস্তা না থাকার জন্যে, এহেন প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে ভারতীয় দিবারাত্রি বছরে ৩৬৫ দিন লড়াই করে চলতে হয়।
উল্টোদিকে, চিনের সেনাবাহিনীর জওয়ানরা কিন্তু শীতকালে সীমান্ত এলাকায় থাকে না।
উত্তর সিকিমের এই স্পর্শকাতর সীমান্তের উপর সর্বক্ষণ নজরদারি চালিয়ে চলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ানরা। কিন্তু সীমান্তের মাত্র ২০ কিলোমিটার ওপারে খাম দাজং বলে একটি শহর রয়েছে। জায়গাটি এতটাই উন্নত যে সেখান থেকে প্রয়োজন পড়লে কয়েকমিনিটের মধ্যেই চিন সেনারা সীমান্তে পৌছিয়ে যেতে পারে।
-৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সীমান্ত রক্ষা করে ভারতীয় সেনাবাহিনী [ছবি: লেখক]
ভারত চিন সীমান্তের অন্যান্য অঞ্চলগুলোতেও পরিস্থিতি একই রকম।
সীমান্তের এদিকের অঞ্চলগুলো এতটাই প্রত্যন্ত যে সেই অঞ্চলগুলোর জনসংখ্যা নিতান্তই কম। অথচ, উল্টোদিকে চিনের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলি যাতে জনবহুল থাকে তা সর্বদাই নিশ্চিত করে চলেছে চিন। ভারতীয় প্রশাসকদের এর থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটাতে পারলে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে দিনের পর দিন সীমান্ত রক্ষা করতে হবে না।
সেনাদের নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা কিংবা সেনাদের ব্যবহার্য জিনিস সীমান্তে পৌছিয়ে দেওয়াও কিন্তু সেনাবাহিনীর কাছে বিরাট বড় চ্যালেঞ্জ। ১৯,০০০ ফিটের ওপর অবস্থিত সেনাবাহিনীর ঘাটিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন কিন্তু খুবই ধীর গতিতে হয়ে থাকে।
উত্তর সিকিমের একটি ব্যাটালিয়নের দায়িত্বে থাকা কর্নেল বিএস ছিকারা জানালেন, "কতৃত্ব দেখানোটা কিন্তু বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিপক্ষকে বোঝাতে হবে আমরা তোমাদের থেকে অনেক বেশি কর্মঠ অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই তো -৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গাড়ি না চললেও আমাদের জওয়ানরা পায়ে হেটে নজরদারি চালায়।"
৩৬৫ দিন দিনে ২৪ ঘণ্টা প্রবল ঠান্ডায় জওয়ানদের সীমান্তে পাহারা দিতে হয় [ছবি: লেখক]
কিন্তু চিনেরা তো সম্পূর্ণ অন্য কারণে সীমান্তের হাড় কাঁপানো ঠান্ডা থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে। কারণ তারা জানে, প্রয়োজন খুব দ্রুত তারা সীমান্তে প্রত্যাবর্তন করতে পারবে।
এক সেনাবাহিনী আধিকারিক জানালেন, "রাস্তা ভালো থাকলে আমাদেরও নিত্যদিন এই প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে হত না।"
ইন্ডিয়া টুডে ভারত চিন সীমান্ত বরাবর প্রায় ৫৪ কিলোমিটার ঘুরে দেখেছে যে চিন যেখানে সেনাবাহিনীর সুবিধার্থে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর পরিকাঠামো উন্নয়ন করে চলেছে সেখানে শীতকালে ভারী তুষারপাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ঘাঁটিগুলোর সঙ্গে একেবারেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো এতটাই প্রত্যন্ত যে পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা কেউ চিন্তাই করে না।
প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য জওয়ানদের উপর মানসিক প্রভাব পড়ে [ছবি: লেখক]
এই পরিস্থিতি শুধু সেনাবাহিনীর কাছেই চ্যালেঞ্জ নয়, এই পরিস্থিতিতে থাকার দরুন জওয়ানদের উপর মানসিক প্রভাব পড়ে।
শীতকালে জওয়ানরা অক্সিজেনের অভাবে ভোগে এবং নানাবিধ পাহাড়ি রোগে আক্রান্ত হয়।
কতৃপক্ষ কি চিনেদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে এই দুর্বিসহ পরিস্থিতি থেকে ভারতীয় সেনাদের উদ্ধার করবে?
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে