ঘামের দুর্গন্ধ: কিডনির সমস্যা বা রক্তশর্করার সমস্যা নেই তো?
রোগীর গায়ের গন্ধ থেকেই সেই রোগীর কোনও অসুখ আছে কী না ধরে ফেলা সম্ভব
- Total Shares
গায়ের মিষ্টিগন্ধ বা দুর্গন্ধ দিয়ে একজন মানুষকে চেনা যায়। প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব একটা গায়ের গন্ধ রয়েছে যেটা বেশ মিষ্টিও হতে পারে আবার বেশ দুর্গন্ধপূর্ণও হতে পারে। গায়ের গন্ধের নেপথ্যে থাকে অনেকগুলো কারণ যেমন খাওয়াদাওয়া, জীবনযাত্রার ধরণ, একজন ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা কিংবা কোনও ব্যক্তি বিশেষ কোনও ওষুধ খান কি না।
এক্রিন ও অ্যাপক্রিন সোয়েট গ্ল্যান্ড শরীরে ঘাম সৃষ্টি করায়। এক্রিন সোয়েট গ্ল্যান্ডের কারণে মানুষ কুলকুল করে ঘামেন অর্থাৎ যাঁদের একটু বেশি ঘাম হয়। এঁদের ক্ষেত্রে শরীরের এই গ্রন্থিটি খুব সক্রিয় থাকে। শরীরের চাপা জায়গাগুলোতে ঘাম হয় অ্যাপক্রিন সোয়েট গ্ল্যান্ডের কারণে। এই গ্ল্যান্ডগুলির একটা নিজেস্ব গন্ধ থাকে এবং সবার শরীরের গন্ধটাও সমান হয় না। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এই গ্ল্যান্ডগুলির গন্ধ একটু বেশি হয় এবং তা বেশ কড়াও হতে পারে। গায়ের গন্ধকে ডাক্তারি পরিভাষায় ব্রোম হাইড্রোসিস বা অস্মিডরোসিস কিংবা ওজোক্রটিয়া বলা হয়।
শরীরের বিভিন্ন চাপা অংশ ও চুল পরিষ্কার রাখুন
অনেকের আবার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থাকে যেমন কেউ খুব স্থুলকায় বা উচ্চ রক্ত শর্করার সমস্যা, এঁরা এমনিতেই একটু বেশি ঘামেন। তার ফলে সচেতন না থাকলে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়ে যেতে পারে। শরীরে ছত্রাকের সংক্রমণ হলে তার থেকে স্বাভাবিক ভাবে একটা গন্ধ বেরোতে পারে।
অনেকেই দিনের বেশ অনেকটা সময় হয়তো জলে পা ডুবিয়ে কাজ করেন কিংবা দীর্ঘক্ষণ ভেজা মোজা পরে থাকেন। এর থেকেও দুর্গন্ধ ছড়ায়। যার ফলে সেই ব্যক্তির আশপাশের লোকজন বেশ সমস্যায় পড়েন ও বিরক্ত হন। যাঁর মোজা থেকে গন্ধ ছাড়ছে, তিনি বিব্রত হন।
একজন যখন তার বয়ঃসন্ধিক্ষণে পদার্পন করে তখনও তার গা থেকে দুর্গন্ধ বেরতে পারে। যিনি খুব তেল-মসলা দেওয়া খাবারদাবার খান তাঁর গা থেকেও গন্ধ বেরতে পারে।
সব সময় পা পরিষ্কার রাখুন
কারও কিডনিতে হয়তো কোনও সমস্যার রয়েছে তার থেকেও গায়ে গন্ধ হতে পারে। তাই অতিরিক্ত গায়ের গন্ধকে অবহেলা করাটা কোনও কাজের কথা নয়। কারণ তা বড় কোনও অসুখের লক্ষণও হতে পারে যেমন কিডনির সমস্যা আগেই বললাম এছাড়া যকৃতের কোনও সমস্যা। শরীরের পরিপাকক্রিয়া ঠিক না থাকলে গায়ে দুর্গন্ধ দেখা দিতে পারে।
অনেক সময় চিকিৎসকরা রোগীর গায়ের গন্ধ থেকেই সেই রোগীর কোনও অসুখ আছে কী না তা ধরে ফেলতে পারেন।
যাঁর এই ধরণের সমস্যা রয়েছে তাঁর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত কারণ যেমন বললাম গায়ের দুর্গন্ধ বড় কোনও রোগের বার্তা বহন করে আনতে পারে। তবে আপনারই কোনও সহকর্মী যিনি হয়তো আপনার পাশেই বসেন তাঁর এই ধরণের সমস্যার জন্য বাকিদের অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়েছে আর খুব দুঃখের ব্যাপার হল তিনি নিজে এই বিষয় সচেতন থাকেন না। কারণ তিনি সব সময় সেই গন্ধটার মধ্যেই রয়েছেন বলে তাঁর নাকের কোষ সেই গন্ধটা চিহ্নিত করতে পারেন না তাই তিনিও কোনও গন্ধ পান না। তাই যাঁর গায়ে গন্ধ তিনি বুঝতেই পারেন না আর তাঁকে বললে তিনি খুব অপমানিতও বোধ করেন। এই পুরো বিষয়টাই খুব দুঃখের।
তা হলে করণীয়:
বিভিন্ন সামাজিক দিক এবং শারীরিক সমস্যার কথা ভেবে গায়ের দুর্গন্ধকে খুব ছোট্ট সমস্যা বলে অবহেলা করা উচিত হবে না। যাঁদের এরকম সমস্যা রয়েছে গরমকালে তাঁদের গায়ের দুর্গন্ধ আরও বেড়ে যায়। তাই গরমকালে অন্তত পক্ষে দু’বার স্নান করতে হবে।
গায়ে কোনও রকমের সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন।
শরীরের ওজনের দিকে নজর দেওয়া এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
তবে সুগন্ধী যেমন ডিয়োডরেন্ট অথবা কড়া জাতীয় পারফিউম মাখাটা কোনও সমাধান নয়, তাতে সাময়িক সুরাহা হতে পারে তবে দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কারণ সুগন্ধীর থেকে যে সুন্দর গন্ধ ছড়ায় তার একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে যার পর আর গন্ধ থাকে না তখন গায়ের দুর্গন্ধ আবার বেরোতে থাকে। তাই সমস্যার নিরাময়ের দিকে নজর দিতে হবে।
শরীরের বিভিন্ন চাপা অংশ ও চুল পরিষ্কার রাখুন।
খুব বেশি পরিমাণে তেল-মসলা দেওয়া খাবার এড়িয়ে চলুন।
সবসময় চাপা-ঢাকা জুতো না পরাই ভালো।
সুগন্ধি মাখলে সাময়িক সুরাহা হয়
সুতির পোশাক পরুন বিশেষ করে যাঁরা একটু বেশি ঘামের তাঁরা গরমকালে সুতির জামাকাপড় পরুন। প্রত্যেকদিন অন্তর্বাস এবং মজা পরিবর্তন করতে হবে। জুতো ভিজে গেলে বাড়ি ফিরে জুতোটাকে শুকোতে দিন।
তাতেও যদি তেমন সুরাহা না হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।