সংবিধানে উল্লেখিত সমতায় উপর আস্থা রেখে প্রতিবন্ধী যুবককে মারধর বিজেপি নেতার
'দোষ' করলে সাজা পেতেই হবে, প্রতিবন্ধী বলে ছাড় পাবেন না!
- Total Shares
সম্প্রতি, উত্তরপ্রদেশের একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভিডিয়োতে বিজেপির এক নেতাকে দেখা যাচ্ছে তিনি এক প্রতিবন্ধী যুবককে বেধড়ক প্রহার করছেন। স্বভাবতই একজন দুর্বলের উপর অত্যাচার ও নিপীড়ন করার দৃশ্য দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া।
'বোকা বোকা' শুনতে লাগলেও এই বিষয়টির অন্য একটি দিকও রয়েছে - বিজেপি নেতা তাঁর কাজের মাধ্যমে সমতার বার্তা পাঠাতে চাইছিলেন। দোষ করলে প্রহৃত হতেই হবে। প্রতিবন্ধী বলে ছাড় পাওয়া যাবে না। হাজার হোক, একই দোষে সকলেরই একই সাজা হবে।
এই ভিডিওটি ২৫ ডিসেম্বর থেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভিডিয়োতে আমরোহার বিজেপি নেতা মহম্মদ মিয়াঁকে এক প্রতিবন্ধী যুবকের উপর আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে। ভিডিয়োর এক জায়গায় দেখা যাচ্ছে যে তিনি মনোজ গুজ্জর নামের সেই প্রতিবন্ধী যুবকের মুখে লাঠি ঢুকিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করছেন (যদিও বিজেপি নেতা এই কথাটি অস্বীকার করেছেন)।
এই ভিডিয়োতে গুজ্জার বারংবার বলেছেন, "আমি অখিলেশকে ভোট দেব।"
মোহম্মদ মিয়াঁর সেই বিতর্কিত ভিডিয়ো [ভিডিয়োগ্র্যাব]
মিঞা অবশ্য গুজ্জারের দোষের ফিরিস্তি শুনিয়েছেন।
BJP's Mohd Miya on video of him assaulting a specially abled man: He was abusing Modi ji & Yogi ji, I tried to first explain things, he was drunk, it was a conspiracy to malign BJP, I was just trying to make him leave the place. I didn't shove stick in his mouth. pic.twitter.com/9WbJaDdmLR
— ANI UP (@ANINewsUP) December 26, 2018
মহম্মদ মিয়াঁর অভিযোগ, "তিনি মোদীজি ও যোগীজিকে গালাগালি করছিলেন (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ)। আমি প্রথমে তাঁকে বোঝাবারই চেষ্টা করছিলাম। এর পর আমি শুধু তাঁকে অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য বাধ্য করছিলাম। আমি ওঁর মুখে লাঠি ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করিনি। আসলে এটা বিজেপিকে অপদস্থ করার একটি প্রচেষ্টা।"
অভিযোগুলো সত্যি মারাত্মক।
তিনি মদ্যপান করে ছিলেন।
তিনি মোদীজি ও যোগীজিকে গালাগালি করছিলেন।
বিজেপিকে অপদস্থ করার চেষ্টা চলছিল।
এই অবস্থায় একজন একনিষ্ঠ দলীয় নেতা কী ভাবে প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বিচলিত হবেন? মহম্মদ মিয়াঁর ঠিক যে কাজটি করা উচিত ছিল তিনি সেই কাজটি করেছেন। লাঠি উঁচিয়ে ন্যায়ের খোঁজ করেছেন।
গুজ্জর যা করেছেন তা দিয়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির কোনও ধারায় তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না। কিন্তু তাই বলে তিনি যা করেছেন তা অপরাধ হবে না কেন? গুজ্জর মোদীজি ও যোগীজির সমালোচনা করেছেন। তাও আবার আর একজন বিজেপির নেতার সামনে, সামান্য কোনও বিজেপি কর্মীর সামনে নয়, এমন একজন বিজেপি নেতার সামনে যিনি লাঠি চালাতে সিদ্ধহস্ত।
আশা করা যায় লাঠির স্বাদ এখনও গুজ্জর ভুলতে পারেননি।
এই পুরো ঘটনায় অবশ্য উত্তর প্রদেশের প্রশাসন কৃতিত্বের দাবি করতেই পারে। মহম্মদ মিয়াঁকে এখনও অবধি গ্রেফতার করা হয়নি, বরঞ্চ তাঁকে তাঁর ব্যবহারের কারণ দর্শাতে সময় দেওয়া হয়েছে। গুজ্জরকে অবশ্য আটক করা হয়েছে। খবরের প্রকাশ, মহম্মদ মিয়াঁ কয়েকজন বিজেপি নেতা ও সম্ভল জেলার বিজেপি সভাপতি রাজেশ সিঙ্ঘলকে নিয়ে যখন মহকুমা শাসকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তখন এই ঘটনাটি ঘটেছে। মহম্মদ মিয়াঁ যখন গুজ্জরকে তাঁর অন্যায়ের সাজা দিচ্ছিলেন তখন ওখানে উপস্থিত সরকারি আধিকারিকরা কী করছিলেন তা অবশ্য জানা যায়নি।
গত সপ্তাহে আর একজন বিজেপি নেতাকে একজন মহকুমা শাসকের দফতরে গিয়ে হম্বিতম্বি করতে দেখা গিয়েছিল।
BJP MLA Uday Bhan Singh threatening Agra's Kirawali SDM Garima Singh in full public view. MLA can be heard saying: "Meri Taqat ka ehsaas nhi" He also incited the mob which started sloganeering against SDM Singh.pic.twitter.com/Nwc3Rxi4TT
— Piyush Rai (@Benarasiyaa) December 17, 2018
যেই যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ।
সুতরাং মহম্মদ মিয়াঁকে খামোখা দোষ দিয়ে লাভ নেই। তিনি গুজ্জরকে শিক্ষা দিয়ে একটা কথা বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন - দোষ করলে সাজা পেতেই হবে, প্রতিবন্ধী বলে ছাড় দেওয়া যাবে না।
সংবিধানে উল্লেখিত সমতার উপর আস্থা রয়েছে মহম্মদ মিয়াঁর, তাঁর এই কর্মকে শতকোটি প্রণাম।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে