জনপ্রিয় হলেই মূল কাহিনি দীর্ঘায়িত করে বছরের পর বছর চালানো হয় বাংলা ধারাবাহিক
ধারাবাহিক দীর্ঘায়িত করার জন্য মূল কাহিনি থেকে বিচ্যুতি ঘটে চিত্রনাট্যের
- Total Shares
সম্প্রতি টলিপাড়ায় শুটিংয়ের কাজ এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার ফলে যেমন কলাকুশলী ও শিল্পীদের মাথায় হাত পড়েছিল তেমনই প্রতিটি বাড়ির বৈঠকখানায় সন্ধ্যাবেলার অতি পরিচিত চেহারাটা যেন একটু ম্লান হয়ে গিয়েছিল। তবে সুখবর হল বাংলা ধারাবাহিকগুলো স্বমহিমায় আবার প্রত্যাবর্তন করেছে।
বাংলা চ্যানেল বলুন কী হিন্দি চ্যানেল, এমন কোনও বিষয় বাদ নেই যার উপর ভিত্তি করে ধারাবাহিক ও মেগা ধারাবাহিক হয়নি। পুনর্জন্ম বলুন বা টিভিতে দেশের দর্শকের সামনে নিজের স্বামী নির্বাচন করা বলুন বা বৃহন্নলার স্ত্রী হয়ে ওঠার লড়াই বলুন-- কোনও বিষয়ই তাঁদের সিলেবাসের বাইরে নয়।
কমপক্ষে তিন থেকে চার বছর আবার কখনও গল্পের ফর্মুলাটা বেশ হিট হয়ে গেলে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের ইচ্ছায় পাঁচ বছর পর্যন্ত টানা চলে মেগা ধারাবাহিকগুলো।
একটি ধারাবাহিক শেষ হতে না হতেই আবার শহর জুড়ে বিজ্ঞাপন পড়ে যায়... অপেক্ষার আর মাত্র কটা দিন... আসছে নতুন ধারাবাহিক। আবার রমরম করে সাধারণ মানুষের বহু না বলতে পারা ঘরকন্নার ও সুখ-দুঃখের চেনা-অচেনা অনুভূতির গল্প নিয়ে শুরু হয়ে যায় এক নতুন ধারাবাহিক।
একটি ধারাবাহিকের একটি দৃশ্য (উপস্থাপনামূলক)
বাস্তবে সম্ভব এমন ঘটনা দিয়ে একটা গল্প শুরু হয়, যা নিজগুণেই দর্শকদের মন টানতে শুরু করে। নেশার মতো সংসারের সমস্ত কাজ বাদ দিয়ে পরিবারের অনেকে ধারাবাহিকগুলো দেখতে বসে যান। ধারাবাহিকের এক মুহূর্তও বাদ গেলে আর দেখতে নেই! তবে অচিরেই গল্পের গোরু গাছে উঠতে শুরু করে। ধারাবাহিকগুলোকে দীর্ঘায়িত করার জন্য আসল লেখকের মূল কাহিনি উপরে নতুন গল্প সৃষ্টি হতে শুরু করে। কখনও আবার কোনও ধারাবাহিকের জন্য লেখা কোনও গল্প শেষ না করে দীর্ঘায়িত করার জন্য চাপ আসে গল্পকারের উপরে।
তাই অপ্রিয় হলেও সত্যটা হল এই ধারাবাহিকগুলো গোড়ার দিকে বেশ ভালো হলেও ক্রমশ জলো হতে থাকে। মূল গল্প ও প্রধান চরিত্রগুলো থেকে সরে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় চরিত্র ভিড় করে। মজার বিষয়টা হল, দর্শকও গল্পের এই অপ্রয়োজনীয় বিস্তার দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, তবে টিভির সামন তাঁদের হাজির হওয়া বন্ধ হয় না। এখানে নির্দেশককে বা শিল্পীদের দোষ দিলে চলবে না, কারণ সমঝদার দর্শকদের ধরে রাখতে সত্যিকারের ভালো গল্প চাই। সেই গল্প কোথায়। ধারাবাহিকগুলোর ক্ষেত্রে সেই ভালো গল্পই পাওয়া যায় না।
আর একটা বিষয় হল ধারাবাহিকগুলোতে শিল্পীদের পারফরম্যান্সের মানের তেমন একটা বালাই নেই, কারণ ধারাবাহিকটিকে ৪০০ এপিসোড পর্যন্ত টানতে হলে ধর তক্তা মার পেরেক তো করতেই হবে। তারপর আবার আছে ডাবল শিফটে কাজ করার ব্যাপার। চ্যানেল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ধারাবাহিকগুলোকে লম্বা সময় ধরে টানতে হয়।
মাঝে মাঝে আমার সত্যি মনে হয় গল্প, চিত্রনাট্য, অভিনয় ক্ষমতা, শিল্পীদের বাচনভঙ্গি, ঘটনা অতিরঞ্জিত করার জন্য অবাস্তব সব সংলাপ এবং চিত্রনাট্যের যে মূল ধারা ছিল তা থেকে বেরিয়ে নতুন চরিত্র এনে গল্পটিকে অন্য খাতে বইয়ে দেওয়া -- হয়তো দর্শক এমন কিছু চান বলেই তাঁদের চাহিদা মেটাতেই মূল চরিত্রগুলো গৌণ হয়ে যায় আর গল্প নতুন খাতে বইতে থাকে।
তবে একটা কথা মানতে হবে তর্ক-বিতর্ক যাই থাকুক না কেন কিংবা বাংলা ধারাবাহিকের সমালোচনা যতই হোক না কেন সোজা কথাটা হল দর্শক এগুলোই উপভোগ করেন।