বীর কোটাকের হাত ধরেই ভারতের ব্রিউয়ারি বাজারে প্রবেশ করল নতুন স্বাদের বিয়ার
সম্প্রতি মুম্বাইতে তিনি বার্কিং বিয়ার নামে একটি মাইক্রোব্রিউয়ারি শুরু করেছেন
- Total Shares
দিল্লির কস্তুরবা গান্ধী মার্গ ও জনপথের হট্টগোল থেকে দূরে তলস্তয় মার্গের মোহন দেব বিল্ডিংটির দশম তোলে বীর কোটাকের অফিস। তাঁর অফিসঘরটিতে ঢুকলে প্রথমেই একটা বড় টিভির পর্দা চোখে পড়বে দেখলে মনে হবে যেন কোনও বন্দরের যে টার্মিনালটিতে সমস্ত কন্টেনার ওঠানো নামানো হয়, সেখানকার সিসি ক্যামেরার ছবি বীর কোটাকের অফিসার ঘরের ওই টিভির পর্দায় ভেসে উঠছে। প্রথমটায় আপনার মনে হবে আপনি কি ঠিক লোকের কাছেই এসেছেন? কারণ আপনি আপনার প্রতিবেদনের জন্য এমন একজনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন যিনি দেশের মাটিতে তৈরি বিয়ার বাজারে সবেমাত্র প্রবেশ করেছেন।
আমি যে বীর কোটাকের কথা বলছি তাঁর সঙ্গে উদয় কোটাকের কোনও সম্পর্ক নেই। বীর কোটাক আমাকে বলেন, টিভির পর্দায় যে দৃশ্যগুলো দেখা যাচ্ছে, সেগুলো বিশাখাপত্তনমের একটি বন্দরের। তাঁরই পূর্বপুরুষদের জাহাজ ও পরিকাঠামো সংস্থা বিশাখাপত্তনমের বন্দরের এই অংশের দেখভাল করত। তাঁর পারিবারিক ব্যবসা জাহাজ সংক্রান্ত হলেও বিয়ার ব্যবসার সঙ্গে তাঁর একটা অন্যরকম আবেগ জড়িয়ে রয়েছে।
বিয়ারের প্রতি তাঁর এই ভালোবাসার সূত্রপাত আজ থেকে প্রায় আট আগে, যখন ব্যবসার সূত্রে পূর্ব চিনের কিংদাও থেকে ভারতের মধ্যে টেলিকম ব্যবসায় যে টাওয়ারের প্রয়োজন পড়ে তেমন একটি চালানের তত্ত্বাবধান করছিলেন। চিনের সবচেয়ে প্রিয় ও জনপ্রিয় সিংতাও বিয়ার এই কিংদাও-তেই বানানো হয়। ঔপনিবেশিক জার্মানি এই নামটি দিয়েছিল। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে ইংরেজ ও জার্মানদের তৈরি এই বিয়ারটি কোটাকের খুব ভালো লেগে যায়।
তিনি ভারতে সিংতাও বিয়ার আমদানি করা শুরু করলেন। সিংতাও ছাড়াও তিনি ব্যাভেরিয়ান উইসবিয়ার, সানাইডার উইসি ও তারপর স্পেনের ওয়াইন এল-সিরকার আমদানি করেন।
বিয়ার ব্যবসা সবসময়ই বির কোটাককে টেনেছে। তিনি একটা নতুন ব্র্যান্ড চালু করতে চেয়েছিলেন যাতে আমাদের দেশের যুব সম্প্রদায়কে তাঁর প্রিয় মধ্য ইউরোপের বিয়ারের স্বাদের সঙ্গে পরিচিত করতে চেয়েছিলেন।
বিভিন্ন নতুন সব ব্র্যান্ড যেমন বিরা ৯১, ওয়াইট রাইনো এবং সিম্বার হাত ধরে এই বিয়ারগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে। পাশাপাশি মাইক্রোব্রিউয়ারি বা যে সব কারখানায় বিয়ার তৈরি করা হয় সেগুলিও জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে আমাদের দেশে। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে রাজধানী দিল্লিতে বিয়ার কারখানা বা ব্রিউয়ারি খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
এই তিনটি দেশি ব্র্যান্ড ইন্দোর ও নাগপুরের বিরা, মধ্যপ্রদেশে চম্বলের হোয়াইট রাইনো ও ছত্তিসগড়ের সিম্বা যে পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়ে থাকে থার্স্ট বিয়ার বসনিয়ায় নানান হয়। উৎপাদনের পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধান করেন শেফিল্ডের পুরস্কৃত বিয়ার উৎপাদক অ্যালেক্স বার্লো। অ্যালেক্স বার্লো যে বিয়ারটি উৎপাদন করেন তার নাম সেন্টিনেল, এ ছাড়াও তিনি বিয়ার নিয়ে লেখালেখি করেন এবং তিনি একজন শিক্ষকও।
জাহাজ ও পরিকাঠামো তাঁর পারিবারিক ব্যবসা হলেও বিয়ার ব্যবসার সঙ্গে তাঁর একটা অন্যরকম আবেগ জড়িয়ে রয়েছে
কেন তিনি এমন একটি সিদ্ধান্ত নিলেন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতে যে বিয়ারগুলো উৎপন্ন হয় সেগুলির একটিরও মান তার দামের সমতুল্য বলে তাঁর মনে হয়নি।
বাজারে দুধরণের থার্স্টি বিয়ার পাওয়া যায়- একটির নাম হ্যাপি। হ্যাপি একটু হালকা ধরণের বিয়ার, যেটা খেলে বেশ তরতাজা অনুভূতি হয়। বিয়ারটি গত বছর মার্চ মাসে চালু হয় (দাম ৫০০এমএল-এর একটি ক্যানের দাম ১৭৫টাকা) ও সিমোনা-- এটি একটি ঐতিহ্যবাহী জার্মান বিয়ার যা গম থেকে তৈরি হয়। এই বিয়ারটি ভারতীয় কোনও খাবারের সঙ্গে খুব ভালো যায় (একটি ৩০০এমএল-এর বোতলের দাম ২০০টাকা)। বিয়ারটি এ বছর বাজারে এসেছে।
ইতিমধ্যে থার্স্টি বিয়ার দেশের আটটি বাজারে প্রবেশ করেছে, তাই বীর কোটাক এখন এই বিয়ারের সরবরাহের দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন। সম্প্রতি মুম্বাইতে তিনি বার্কিং বিয়ার নামে একটি মাইক্রোব্রিউয়ারি শুরু করেছেন। এ ছাড়াও তিনি এটি আরও ১২৭টি শহরে শুরু করতে চলেছেন।
আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে ইংরেজ ও জার্মানদের তৈরি এই বিয়ারটি বির কোটাকের খুব ভালোলেগে যায়
তাঁর নিজের ছোট বিয়ার উৎপাদনের কারখানা জেক ব্রিউয়ারি বলা হয় সেটি আছে তাই খুব দ্রুত আমরা এই থার্স্ট বিয়ার ব্যারেলের কল খুললেই ড্রট বিয়ারের মতো পড়বে থার্স্ট বিয়ার।
বিয়ার ভরা গেলাসে চুমুক দিয়ে তার স্বাদটা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করার সময় মনে মনে আমরা আমাদের দেশের এই সব বিয়ার ব্যবসায়ী যেমন বিরা ৯১-এর অঙ্কুর জৈন থেকে শুরু করে থার্স্টির বীর কোটাককে ধন্যবাদ দিতে পারি আমাদের ভারতের ব্রিউয়ারি (মদ জাতীয় পানীয়) বাজারে দেশি বিয়ারকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য।
(সৌজন্য মেল টুডে)
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন