দুদিনের সরকারি ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের বন্ধ থাকবে শহরের অন্তত ৯,৮০০ শাখা ও ২১,০০০ এটিএম
নোটবন্দির সময় যে ব্যাঙ্ককর্মীরা বাড়তি চাপ নিয়েছিলেন আজ তাঁরাই অবহেলিত
- Total Shares
ইউনাইটেড ফোরাম অফ ব্যাঙ্ক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ৩০ ও ৩১ মে দেশজুড়ে ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। ইউনাইটেড ফোরাম অফ ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন সঙ্গে নটি ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন যুক্ত রয়েছে। এই ধর্মঘটে পশ্চিমবঙ্গের ব্যাঙ্কের মোটামুটি ৯৮০০ শাখা আমাদের সঙ্গে থাকবে এবং প্রায় সাত লক্ষ মতো কর্মী যোগ দেবেন। একুশ হাজার এটিএম বন্ধ থাকতে পারে।
কেন্দ্র সরকার যখন তাঁদের বিভিন্ন নীতি ও প্রকল্প যেমন নোটবন্দি থেকে শুরু করে জনধন যোজনা, অটল পেনশন যোজনা, প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনা, প্রধানমন্ত্রী জীবনজ্যোতি বিমা যোজনার মতো বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছিল তখন আমরা দিনরাত এক করে মাসের পর মাস কোনও ছুটি না নিয়ে মাথার ঘাম পায় ফেলে কাজ করেছি ও গ্রাহকদের অনবরত পরিষেবা দিয়ে গেছি।
ফেয়ার ওয়েজ ৩৯,৬০০ টাকা এবং চতুর্থ শ্রেণির ব্যাঙ্ক কর্মীদের জন্য ফেয়ার ওয়েজ ৩৪, ৩৫০ টাকা চালু করার দাবি
নোটবন্দির সময় অতিরিক্ত কাজের চাপে এগারো জন ব্যাঙ্ক কর্মীর মৃত্যু হয় আজ সেই ব্যাঙ্ককর্মীরাই তাঁরাই অবহেলিত।
যদিও আমরা জানি যে মাসের শেষ দুদিন ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকবে আর এই দুদিনেই অধিকাংশ অফিসেই বেতন হয়, তাই সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির শেষ থাকবে না। ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকলে এটিএমগুলোতে টাকা মিলবে না। কিন্তু আমরা আজ দীর্ঘদিন ধরে দফায় দফায় আমাদের বিভিন্ন দাবিদাওয়াগুলো নিয়ে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন (Indian Banks' Association)-কে জানিয়েছি কিন্তু আমাদের কোনও কোথায় কর্ণপাত করা হয়নি দেখে অবশেষে আর কোনও উপায় না পেয়ে আমাদের ধর্মঘটের পথেই হাঁটতে হল।
প্রতি পাঁচবছর অন্তর ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার (Bipartite Wage Settlement) বা বেতন বৃদ্ধি হয়। এবার আমাদের বেতন বৃদ্ধি হওয়ার কথা ছিল পয়েলা নভেম্বর ২০১৭। কিন্তু ২০১৬ সালেই বিভিন্ন চিঠির মাধ্যমে আইবিএ-কে চিঠির মাধ্যমে এই বেতন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া আগেই সেরে ফেলতে চেয়েছিল। আমরা তখন ভেবেছিলাম যে এর পেছনে হয়ত সরকারের একটা সৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। কিন্তু তড়িঘড়ি বেতন বাড়ানোর পেছনে সরকারের আসল উদ্দেশ্যটা আমাদের কাছে অনেক পরে পরিষ্কার হয়। যাতে নোটবন্দির সময় সমস্ত ব্যাঙ্ক কর্মী ঝাঁপিয়ে পরে গ্রাহকে পরিষেবা দিতে পিচপা না হয় তাই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল আগেভাগেই। আমরা যখন গ্রাহকদের পরিষেবা দিয়েছিলাম যাতে তাঁদের কোনও রকম সমস্যায় না পড়তে হয়। এর জন্য কিন্তু তখন সরকার আমাদের বাড়তি টাকা বা ওভারটাইম হিসেবে এক পয়সাও দেয়নি।কাজ করতে গিয়ে আমরা যেই কর্মীদের হারিয়েছি তাঁদের কোনও রকম ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি।
এই ধর্মঘটে পশ্চিমবঙ্গের ব্যাঙ্কের প্রায় ৯৮০০ শাখা আমাদের সঙ্গে থাকবে এবং প্রায় সাত লাখের মতো কর্মী যোগ দেবেন
এর পর বেতন বাড়ানোর ইস্যুতে আইবিএ-র সঙ্গে পনেরো দফা বৈঠক করেছে কেন্দ্র সরকার। চলতি আর্থিক বর্ষের ৫ মে কেন্দ্র সরকার জানায় যে যেহেতু ব্যাঙ্কগুলো লোকসানে চলছে তাই তাঁরা দুই শতাংশের বেশি বেতন বৃদ্ধি করতে পারবে।
গত পাঁচ বছরে কোনও রকম লোকসান তো হয়ইনি বরং ২০১২-১৩/২০১৪-১/২০১৬-১৭ ব্যাপক মুনাফা করেছে ব্যাঙ্কগুলো এবং একদম শেষ আর্থিক বছরে ব্যাঙ্কগুলো ১ লক্ষ ৫৮ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তাহলে এখানে ব্যাঙ্কগুলো কোথায় লোকসান করল।
নোটবন্দির সময় জাল নোটের দায়ভারও আমরা নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলাম
আসলে সরকার নিজেদের দোষগুলোকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। ব্যাঙ্কগুলো যখন বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা আয় করেছে, তখন লাভের গুড় সরকারি মদতপুষ্ট কর্পোরেট দুনিয়ার পিঁপড়ে খেয়ে গেছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অনাদায়ী ঋণের বোঝা বা নন পারফর্মিং অ্যাসেস্টস। বারবার বলা সত্ত্বেও এই স্বেচ্ছায় ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনও রকম ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এবং তাঁদের নামও প্রকাশ্যে আনা হয়েনি। ২০০০ সালের পরে বিদেশি মুদ্রার প্রবেশ, পরিকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের বেসরকারিকরণ, ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া আর রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কগুলোকে অনুৎপাদক সম্পদে অর্থ লগ্নি করতে বাধ্য করা এবং সম্প্রতি রিসার্ভ ব্যাঙ্ক-এর নির্দেশে সমস্ত পুনর্গঠিত ঋণকে অন্যায় ঋণের তকমা দেওয়ার জন্য আজ এই অনাদায়ী ঋণের ভরে আমাদের মুখ ঢেকে গেছে।
এখানে আর একটা বিষয়ও ভুলে চলবে না সেটা হল সম্প্রতি আমরা দেখলাম কী ভাবে কয়েকজন ব্যাঙ্ক কর্মীর মদতে নীরব মোদী, মেহুল চোকসি, বিজয় মালিয়ার মতো কিছু পঁজিপতি ব্যাঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছে অথচ এইসব বোর্ডকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনও রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
আইবিএ-র কাছে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী ও রাজ্য সরাকরি কর্মীরা যেই মাইনে পান তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের বেতন বৃদ্ধি করতে হবে
আমাদের সংগঠনের দাবি হল তৃতীয় শ্রেণির ব্যাঙ্ক কর্মীদের জন্য ফেয়ার ওয়েজ ৩৯,৬০০ টাকা এবং চতুর্থ শ্রেণির ব্যাঙ্ক কর্মীদের জন্য ফেয়ার ওয়েজ ৩৪, ৩৫০ টাকা চালু করতে হবে৷ এ ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে কর্মী নিয়োগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকার ফলে কর্মরত কর্মীদের উপর চাপ বেড়েই চলেছে, এদিকেও সরকারের কোনও রকম নজর নেই। এর ফলে বর্তমা কর্মীরা চাপ সামলাতে নাপেরে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন এবং অনেকেই এই চাপ সহজ করতে না পরে আত্মহত্যার পথও বেঁচে নিয়েছেন।
আইবিএ-র কাছে আমাদের দাবি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী ও রাজ্য সরাকরি কর্মীরা যে বেতন পান তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের বেতন বৃদ্ধি করতে হবে। এই মর্মে আমরা আইবিএ-র কাছে গতবছর আমাদের দাবিগগুলো পেশ করি তখন সেখানে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছিলাম।
আমাদের দাবি যথাযত বিচার না পেলে আমরা লাগাতার ধর্মঘটের পথেই হাঁটব।