বাংলাদেশে পরিবেশ দূষিত হওয়ার মাত্রা আশঙ্কাজনক

পরিবেশ মানের সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ২৯.৫৬, অবস্থান বিশ্বে ১৭৯ নম্বরে

 |   Long-form |   05-06-2018
  • Total Shares

বিশ্ব পরিবেশ দিবস আজ। সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচিতে দিবসটি পালিত হলেও দেশটিতে পরিবেশ দূষিত হওয়ার মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। শিল্প বর্জ্য, মেডিক্যাল বর্জ্য, প্রাণিজ এবং অন্যান্য বর্জ্য-সহ বিভিন্ন রাসায়নিক বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ু, পানি ও শব্দ দূষণ যেন আজ স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্যের ওপর। জলবায়ুর প্রতিকূল প্রভাবও পরিবেশের উপর পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বিভিন্ন প্রাণীর জটিল ও কঠিন রোগ দেখা দিচ্ছে। পরিবেশের উপর জলবায়ুর প্রভাবের জন্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত, খাদ্যাভাবজনিত রোগ-সহ নানা জটিল ও অপরিচিত রোগ হয়ে থাকে। বেড়ে গেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম। আর বায়ুদূষণের দিক দিয়ে বিশ্বের ১৭৮টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে পেছনে বাংলাদেশের অবস্থান। গত এক যুগে দূষণ ও পরিবেশের বিচারে বাংলাদেশ পিছিয়েছে। পরিবেশের বিপর্যয় মানে জীবনের বিপর্যয়।

জলবায়ু ও পরিবেশ

পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ রইছউল আলম মণ্ডল জানান, পরিবেশ ও জীবন একে অপরের পরিপূরক। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে অব্যাহত থাকে জীবনচক্র। তবে মানুষের জীবনচক্রে গৃহপালিত প্রাণীর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আবার প্রাণীদেরও বেঁচে থাকতে নির্ভর করতে হয় পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার ওপর। পরিবেশের বিপর্যয় মানে জীবনের বিপর্যয়। প্রাণিস্বাস্থ্য, প্রাণী উৎপাদন ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন একটি আন্তঃসম্পর্কিত জটিল প্রক্রিয়া, যার উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে রোগের প্রাদুর্ভাব, উৎপাদন ব্যবস্থা-সহ আরও অনেক কিছু। বৈরী জলবায়ুর করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বাংলাদেশও।

এর পাশাপাশি যোগ হয়েছে পরিবেশদূষণ। দূষণের দোষে দূষিত হয়ে উঠছে চারপাশ। শিল্প বর্জ্য, মেডিক্যাল বর্জ্য, প্রাণিজ এবং অন্যান্য বর্জ্যসহ বিভিন্ন রাসায়নিক বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্যের ওপর। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গৃহপালিত প্রাণী। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে চারণভূমির অভাবে প্রাণী খাদ্যের অভাব হচ্ছে, তাপজনিত, ভেক্টরবাহিত এবং সংক্রামক রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে প্রাণিসম্পদ উৎপাদন হচ্ছে বাধাপ্রাপ্ত। অতিবৃষ্টি, উচ্চ তাপমাত্রা এবং খরার ফলে মানুষের অজান্তেই সৃষ্টি হচ্ছে একের পর এক শক্তিশালী ভাইরাস। জলবায়ু পরিবর্তনে বিভিন্ন প্রাণীর জটিল ও কঠিন রোগ দেখা দিচ্ছে। পরিবেশের ওপর জলবায়ুর প্রভাবের জন্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত, ভেক্টর প্রভাবিত এবং খাদ্যাভাবজনিত রোগসহ নানা রোগ হয়ে থাকে। নদীর এক কূল ভেঙ্গে গড়ে উঠছে আরেক কূল। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন পরিবেশ, যা অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের জন্য বাসযোগ্য হয়ে ওঠে না।

body_060518070759.jpgঢাকার প্রধান নদী বুড়িগঙ্গা এখন বর্জ্য কূপে পরিণত হয়েছে

নদ-নদী দূষণ

ঢাকার চার নদীকে দখল, দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে এ্যাকশন প্ল্যান নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা, অভিজ্ঞতা ও পারস্পারিক সহযোগিতা গ্রহণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া রাইন ও টেমস নদীর উদাহরণও কাজে লাগানো যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীদূষণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হলেও দূষণ রোধে কার্যকর কোন পদক্ষেপই করা হয়নি। দখল রোধে কয়েকটি অভিযান চালানো হয়েছে মাত্র। এ ছাড়া অন্য কোনও উপায়ে ঢাকার নদীগুলো রক্ষা করা যাবে না। তাঁরা বলছেন, গাজীপুর, টঙ্গী, সাভার, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, রূপগঞ্জ ঢাকা শহরের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চল থেকে নির্গত তরল বর্জ্য নির্গমনের মুখগুলো নদীর দিক থেকে ঘুরিয়ে নিতে হবে যাতে নদীতে বর্জ্য নিক্ষিপ্ত হতে না পারে। নতুন লাইন তৈরি করে নদীর ধার বরবার কিনারা দিয়ে দূরে বিশাল বাঁধানো কূপ, শোধনাগার বা কারখানা (রিসোর্স অব রিসাইকেল ইউনিট) স্থাপন করতে হবে।

ইউরোপে বর্জ্য নিক্ষেপের চার হাজার রিসাইকেল ইউনিট রয়েছে। এর মাধ্যমে মিথেন গ্যাস দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। ভারতের গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানে অনুরূপ প্রযুক্তি গ্রহণ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ভারতের অ্যাকশন প্ল্যানের হিসাবে দেখা গেছে, প্রতি এক লাখ নাগরিকের জন্য এ ধরনের একটি ইউনিট স্থাপন করা হলে মাথাপিছু ২৫ টাকা ব্যয় হবে। আয় হবে ৩৬ টাকা। এতে প্রকল্প গ্রহণকালীন সময়েই মাথাপিছু ১১ টাকা লাভ হবে। এ ছাড়াও ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ও শিল্প বর্জ্য গৃহস্থালি বর্জ্য নিষ্কাশন, পাগলা পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগার, মেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার উন্নতি সাধন, হাজারীবাগ ট্যানারি স্থানান্তর ও সেখানে সেন্ট্রাল পরিশোধনাগার স্থাপন করা যেতে পারে। শোধানাগারের নির্গত গ্যাস দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। এ ছাড়াও শিল্পকারাখানার বর্জ্য শোধনাগার বাধ্যতামূলক করা,বাসাবাড়ির পায়খানার জন্য সেপটিক ট্যাঙ্ক ও চোক অয়েল দ্বারা শোধনাগার বাধ্যতামূলক যেতে পারে। পানিতেও বিশেষ আলোড়নের মাধ্যমে অক্সিজেন সৃষ্টি করে রোগ-জীবাণু ও বীজাণুর বংশবিস্তার রোধ করা যেতে পারে।

উজানের প্রবাহ দ্বারা ঢাকার চারদিকের নদীর প্রবাহ বৃদ্ধি ও নদীর পানি নবীকরণ করা যেতে পারে। তাঁরা বলেন, ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও হাতিরঝিলের চারদিকে ২-৩ কিলোমিটার দূরত্বে রামপুরা খালে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। ঢাকার বর্জ্য পর্যায়ক্রমে বা স্তরে স্তরে শোধন-পরিশোধনের মাধ্যমে ভাটিতেও মেঘনা ও সাগরের সংযোগস্থলে ৩শ’ কিলোমিটার দূরত্বে নিরাপত্তা বেষ্টনী নিশ্চিত করে সাগরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে বর্জ্য নেয়া যেতে পারে।

শব্দদূষণ

মহানগরী ঢাকায় সহনীয় মাত্রার দেড় থেকে দু’গুণ বেশি শব্দ বিরাজ করছে। শব্দদূষণের কারণে উচ্চরক্তচাপ, অনিদ্রা, শ্রবণশক্তি হ্রাস,মনসংযোগ কমে যাওয়া, মাথাব্যথা ও মাথা ধরার জটিলতায় ভুগছে নগরবাসী। শুধু তাই নয়, রাজধানীবাসীকে খিটখিটে মেজাজ,বিরক্তি বোধসহ অস্বাভাবিক আচরণ করার মতো মানসিক ও দৈহিক নানা সমস্যার পড়তে হচ্ছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদফতর, সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, স্থানীয় সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) পরিচালিত বিভিন্ন স্থানের শব্দের মাত্রা পরিমাপের ভিত্তিতে পরিচালিত জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সোবহান জানান, রাজধানীতে নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৭৫ থেকে ৯৭ ডেসিবেল, যা মানমাত্রার চেয়ে দেড় থেকে দু’গুণ বেশি। আবাসিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৭৬ থেকে ১০৭ ডেসিবেল, যা মানমাত্রার চেয়ে দেড়গুণের বেশি। মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৭৩ থেকে ১০২ ডেসিবেল, যা মানমাত্রার চেয়ে দেড়গুণের বেশি। আর বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৭১ থেকে ১০৭ ডেসিবেল, যা মানমাত্রার চেয়ে দেড়গুণ বেশি।

জরিপ হতে প্রাপ্ত ফলাফল মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এ ভাবে শব্দদূষণ চলতে থাকলে শিশুদের মধ্যে বধিরতার হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে। আর লেখাপড়ায় অমনোযোগী ও বিকার মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠবে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, উচ্চশব্দ শিশু, গর্ভবতী মা এবং হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। আকস্মিক উচ্চশব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়, মাংসপেশীর সঙ্কোচন করে এবং পরিপাকে বিঘ্ন ঘটায়। কণ্ঠনালীর প্রদাহ, আলসার ও মস্তিস্কের রোগও হতে পারে। হঠাৎ খুব জোরে শব্দ, যেমন যানবাহনের তীব্র হর্ন বা পটকা ফাটার আওয়াজ মানুষের শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রবল চাপ দেয়। উচ্চশব্দ সৃষ্টিকারী হর্ন মোটরযানের চালককে বেপরোয়া ও দ্রুতগতিতে যান চালাতে উৎসাহিত করে। এতে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।

body1_060518070829.jpgট্যানারি বর্জ্য দূষিত করতে ঢাকার বিস্তুৃর্ন অঞ্চল

বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বনাঞ্চলের উপর আগ্রাসন বেড়েছে। প্রতিনিয়ত বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে। নিরাপদ আবাস হারিয়ে হিংস্র হয়ে উঠছে বন্যপ্রাণীগুলো। ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বন উজাড় হয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। চাষাবাদের জমি ও বাড়িঘর তৈরির জন্য ক্রমাগত ভাবে এ সব বন ধ্বংস হচ্ছে। বনাঞ্চলের সবুজ অবয়ব বিনষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে হাজার বছরের পরিচিত অনেক প্রজাতির পশু-পাখি চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনার ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মানুষ হিসেবে টিকে থাকার জন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তবে এজন্য নেতিবাচক মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যা আছে সেখান থেকে আমাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে শুরু করতে হবে। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, কোনওকিছুই অসম্ভব নয়। আমরা পারব এই মনোভাব ধরে রেখে কাজ করতে হবে। এক সময় সারাদেশে বাঘ ছিল, এখন তা শুধু সুন্দরবনে গিয়ে ঠেকেছে। বাংলাদেশের ঐতিহ্য বাঘ রক্ষায় আমাদের সবাইকে সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।

পরিবেশ দূষণ প্রভাব ফেলছে শিশুস্বাস্থ্যে

রাজধানীর ইস্কাটন এলাকায় ফ্ল্যাট বাড়িতে বসবাস করেন অনিমা রহমান। রাস্তার পাশেই তার ফ্ল্যাটটি। রাস্তার পাশে অবস্থান হওয়ায় দিনরাত প্রায় ২৪ ঘণ্টাই শব্দ দূষণের শিকার হতে হচ্ছে গৃহিনী অনিমা, তার পাঁচ বছর বয়সী শিশু তামান্না-সহ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে। তাদের প্রায় সবাই বর্তমানে কম শোনেন। পরিবারের ছোট্ট শিশুটির অবস্থাও তাঁদের মতোই। সেও এখন কম শোনে। চিকিৎসক তাদের রাস্তার পাশে ফ্ল্যাট ছেড়ে নিরিবিলি এলাকায় বাসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যথায়, তাঁদের শিশু সন্তানটি ভবিষ্যৎতে কানে আর কিছুই শুনতে পারবে না এবং অতিরিক্ত শব্দ দূষণে তার মস্তিস্কেও সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন চিকিৎসক।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, শব্দ দূষণের ফলে ০-৫ বছর বয়সী শিশুদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। মাত্রাতিরিক্ত শব্দ বাচ্চাদের মেজাজ খিটমেটে করে তোলে। ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। শ্রবণশক্তি নষ্ট করে দেয়। পরবর্তী সময়ে পড়াশোনায় অমনযোগী হয়ে পড়ে তারা। তাদের আচরণেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটায়। এ ভাবে শব্দ দূষণ চলতে থাকলে কোনও শব্দই ভবিষৎতে আর শুনতে পারবে না শিশুরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শহরে বেড়ে ওঠা শিশুরা মাঠের অভাবে খেলাধূলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে শিশুদের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাংঘাতিক ভাবে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এ সব শিশুরা নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। প্রতিবন্ধী শিশুর জন্মের পিছনে অনেকগুলো কারণের মধ্যে এই শব্দ দূষণও একটি কারণ বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন চিকিৎসকরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ১৫ বছরের নিচে প্রায় এক কোটি শিশু বিভিন্ন পরিবেশ দূষণ জনিত কারণ,দূষিত পানি, খাবার এবং দুর্ঘটনায় মারা যায়। ইউনিসেফ পরিচালিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশের মোট শিশুর প্রায় ৪৫ শতাংশ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। এদের সংখ্যা হবে প্রায় তিন কোটির অধিক। এসব শিশুর মাধ্যে আবার ৪১ শতাংশের কোনো আশ্রয় নেই। আবার ৬৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃসেবা থেকে বঞ্চিত। ৫৭ শতাংশ দৈহিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না। ১৬ ভাগ স্বাস্থ্য সেবা এবং ৩ ভাগ শিশু সুপেয় পানীয় জল থেকে বঞ্চিত। আর এ সমস্ত বঞ্চনার সাথে যখন যোগ হয় পরিবেশ দূষণ, তখন হতদরিদ্র, সুবিধা-বঞ্চিত পরিবারের শিশুরা মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আক্রান্ত হয়। পরিবেশ দূষণের কারণে বাংলাদেশের শিশুরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।

body2_060518070856.jpgযত্রতত্র ময়লা ফেলার কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ

পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে তলানিতে বাংলাদেশ

বিশ্বজুড়ে বড় উদ্বেগের নাম পরিবেশ দূষণ। দূষণের নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে উন্নত বিশ্ব নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। অথচ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান একদম তলানিতে।

সম্প্রতি প্রকাশিত এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্সে (ইপিআই) বাংলাদেশের হতাশাজনক চিত্র উঠে এসেছে। দূষণ রোধের অগ্রগতি সূচকে তলানির দিক থেকে দ্বিতীয় হয়েছে বাংলাদেশ। এতে প্রতীয়মান হচ্ছে উন্নয়ন ও পরিবেশকে সমান গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। পরিবেশ মানের সূচকে বাংলাদেশের নম্বর ২৯.৫৬। অবস্থান ১৭৯ নম্বরে। শুধুমাত্র বুরুন্ডির অবস্থান বাংলাদেশের নীচে। বাংলাদেশে উপরের তিনটি দেশ হলো কঙ্গো (১৭৮), ভারত (১৭৭) ও নেপাল (১৭৬)।

স্বল্প ইপিআই স্কোরের অর্থ হল এই দেশগুলোকে পরিবেশের মান উন্নয়নে বিভিন্ন দিকে বিশেষ করে বাতাসের দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমণ হ্রাসে আরও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সুইৎজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনের সাইডলাইনে ইপিআই সূচকের ১৮০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সঙ্গে যৌথ ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি ও কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি এনভায়রনমেন্ট পারফম্যান্স ইনডেক্স তৈরি করেছে। প্রতি দুই বছর অন্তর এই পরিবেশের মান নিয়ে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।

তালিকায় ৮৭.৪২ স্কোর নিয়ে সরবার উপরে স্থান পেয়েছে সুইৎজারল্যান্ড। এরপর প্রথম পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে ফ্রান্স, ডেনমার্ক, মালটা ও সুইডেন। শুধু তাই নয়, তালিকায় প্রথম ১৫টি দেশের সবগুলোই ইউরোপের। আর যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে ২৭তম অবস্থানে।

ইপিআই তৈরিতে বায়ুর মান, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন, পানিসম্পদ, ভারী ধাতুর উপস্থিতি, কৃষি, বনায়ন, মৎস্য সম্পদ,জীববৈচিত্র্য, আবহাওয়া ও জ্বালানির মতো ২৪টি সূচককে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

দূষণমুক্ত রাখতে চাই সমন্বয়

পরিবেশ দূষণমুক্ত করতে আইনের কার্যকরী প্রয়োগে উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বর্তমানে দেশে পানি ও পরিবেশ আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় নদী দখল ও দূষণ বাড়ছে। বাংলাদেশে পরিবেশ খাতের ব্যবস্থাপনায় সরকারের অন্তত ১৩টি মন্ত্রণালয় যুক্ত থাকায় খাতটিকে অনেক জটিল উল্লেখ করে তারা বলেন, যদি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করা না যায় তাহলে জনস্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প উন্নয়ন, বাস্তু সংস্থানসহ মানুষের জীবন ও জীবিকা আশঙ্কার সম্মুখীন হবে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SAHIDUL HASAN KHOKON SAHIDUL HASAN KHOKON @hasankhokonsahi

Bangladesh Correspondent, TV Today.

Comment