পদ্মা সেতুর পরে বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ দেশবাসীর কাছে দ্বিতীয় গর্বের বিষয়
বঙ্গবন্ধু ১ উৎক্ষেপণের পর বাংলাদেশ বছরে ৫ কোটি মার্কিন ডলার আয় করতে পারবে
- Total Shares
১২ মে বাংলাদেশ সময় রাত ২ টা ১৪ মিনিট (২০:১৪ ইউটিসি ১১ মে ২০১৮)। ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান লেখা বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহটি মহাকাশে উৎক্ষপণের মাধ্যমে কৃত্রিম উপগ্রহের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল বাংলাদেশ। ওই দিন ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে উপগ্রহটির সফল উৎক্ষপণ হয়। যোগাযোগ ও সম্প্রচারের এই উপগ্রহটি নিয়ে মহাকাশে রওনা হয় যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কম্পানি স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেট। উৎক্ষেপণের আনুমানিক ৩৩ মিনিট পর উপগ্রহ বহনকারী রকেটটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রবেশ করে বলে জানায় গণমাধ্যম। সরকারের দাবি, এই স্যাটেলাইটটির বিস্তৃতি হবে বাংলাদেশ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া থেকে তাজিকিস্তান পর্যন্ত। পদ্মা সেতুর পর বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ দেশবাসীর জন্য দ্বিতীয় গর্বের বিষয়।
‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষপণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিভিশন বক্তৃতায় এর সফল উৎক্ষপণ ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তাঁর তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল ফ্লোরিডায় এই স্যাটেলাইট উৎক্ষপণ প্রত্যক্ষ করে। ফ্লোরিডার স্বচ্ছ আকাশে প্রায় ৭ মিনিট উপগ্রহটি দেখা যায়।
অপেক্ষা যত দিন থেকে
দেশের নিজস্ব এই উপগ্রহ উৎক্ষপণের জন্য অপেক্ষা চলছে প্রায় এক বছর ধরে। গত বছর এপ্রিলে ধারণা দেওয়া হয়, ‘বঙ্গবন্ধু-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ হতে যাচ্ছে ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বরের আগেই। ওই বছরের ১৭ এপ্রিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের তখনকার প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের রেপ্লিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করার পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমরা ১৬ ডিসেম্বরের আগেই সম্ভাব্য চারটি তারিখ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাব পাঠাব। তিনি যে তারিখ নির্ধারণ করে দেবেন সেই তারিখেই বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষপণ করা হবে।’
এরপর গত মার্চে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহম্মদ মেজবাহউজ্জামান বলেছিলেন, ফ্রান্স থেকে স্যাটেলাইটটি ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরালে যে কোনও সময় নিয়ে যাওয়া হতে পারে। এরপর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা রয়েছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসারও অনুমোদনের প্রয়োজন। এরপর স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠানোর তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
এই উপগ্রহটির বিস্তৃতি হবে বাংলাদেশ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া থেকে তাজিকিস্তান পর্যন্ত
পরে ৩ এপ্রিল নিউ ইয়র্কে এক সাংবাদিক বৈঠকে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ জানিয়েছিলেন, এপ্রিলের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে এটি উৎক্ষপণ হবে।
এদিকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ হতে পারে ধরে নিয়ে দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় পাঠাতে ২৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের জন্য গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ৫ মার্চ দুটি সরকারি আদেশ জারি হয়। এই আদেশে মার্চের শেষ সপ্তাহ বা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যাওয়া-আসার সময় বাদে চার দিনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।
গত ২৯ মার্চ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ফ্রান্সের অ্যানতোনোভ নাইস বিমানবন্দর থেকে একটি কার্গো বিমানে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সময় এর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের বরাতে জানানো হয়, এই স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষপণ হতে পারে ২৪ এপ্রিল।
এরপর ‘স্পেসএক্স’ স্যাটেলাইটটি উৎক্ষপণের সম্ভাব্য তারিখ জানায় ৩০ এপ্রিল। ওই তারিখ আবার পাল্টে ৪ মে নির্ধারণ করা হয়; কিন্তু সেটা ঠিক থাকেনি। গত ২৫ এপ্রিল ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: সম্ভাবনার মহাকাশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, ৭ মে রাত ১টা থেকে ৩টার মধ্যে বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহ মহাকাশে উৎক্ষপণ হতে যাচ্ছে। এর কয়েক দিন পর তিনি জানান, ৭ মে নয়, ১০ মে এটি উৎক্ষপণ হবে। সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
দেশের প্রথম এই যোগাযোগ ও সম্প্রচার স্যাটেলাইটের বিষয়ে বিটিআরসি ২০০৮ সালের এপ্রিলে একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি ২০১০ সালে পুনর্গঠন করা হয়। এরপর তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কার্যক্রমে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের লক্ষ্যে ২০১০ সালে এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) আহ্বান করা হয়। এতে সাড়া দেয় বিভিন্ন দেশের ৩১টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করা হলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তাদের কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব দাখিল করে। এরপর ‘সরকারি ক্রয় নীতি (পিপিআর)-২০০৮’ অনুসরণ করে ওই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়ন শেষে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল (এসপিআই) যথাযথ প্রতিষ্ঠান বিবেচিত হয়। এসপিআইয়ের কাজ হচ্ছে উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট উৎক্ষপণের জন্য বাজার পর্যবেক্ষণ, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, আইটিইউয়ের সঙ্গে তরঙ্গ সমন্বয়, স্যাটেলাইট সার্ভিস ডিজাইন, স্যাটেলাইট আর্কিটেকচারাল ডিজাইন, সিস্টেম ডিজাইন, দরপত্র প্রস্তুত, ম্যানুফ্যাকচারিং ও সুষ্ঠুভাবে উৎক্ষপণ পর্যবেক্ষণ। এ ছাড়া জনবল তৈরিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া।
২০১২ সালের ২৯ মার্চ এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রুস ক্রাসলসকি তাঁদের সঙ্গে বিটিআরসির চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, এ স্যাটেলাইট উৎক্ষপণ করার পর বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৫ কোটি মার্কিন ডলার আয় করতে পারবে।
বিটিআরসির কর্মকর্তাদের অনেকেরই ধারণা, বাংলাদেশ আইটিইউ থেকে নিজস্ব অরবিটাল লোকেশন ও প্রয়োজনীয় ফ্রিকোয়েন্সি পায়নি। এ ছাড়া প্রক্রিয়াটিও অনেক জটিল। এ কারণেই রাশিয়া থেকে অরবিটাল পজিশন ভাড়া নিতে হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিটিআরসির ১৪৭তম সভায় এ বিষয় বিস্তারিত ভাবে উপস্থাপন করা হয়।
সভায় জানানো হয়, আইটিইউ থেকে নিজস্ব অরবিটাল লোকেশন ও প্রয়োজনীয় ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়া একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার বিষয়। এ কারণে যথাসময়ে স্যাটেলাইট উৎক্ষপণ নিশ্চিত করার জন্য বিটিআরসির যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল(এসপিআই) অন্য কোথাও থেকে অরবিটাল পজিশন ভাড়া বা কেনার পরামর্শ দেয়।
এসপিআই জানায়, রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিক তাদের মালিকানাধীন অরবিটাল লোকেশন ১১৯ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ বিক্রির আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে ইন্টারস্পুটনিক বাংলাদেশকে এসপিআইয়ের মাধ্যমে এই তাগাদা দেয় যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বড়মাপের স্যাটেলাইট অপারেটর তাদের ওই অরবিটাল পজিশন ভাড়া বা কিনে নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর এ স্যাটেলাইটের উৎক্ষপণের জন্য রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে ১৫ বছরের জন্য ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্লট কেনে বাংলাদেশ। এ জন্য খরচ হয় ২১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেসের সঙ্গে বিটিআরসির বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট বিষয়ে মূল কাজ শুরুর চুক্তি সই হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্যাটেলাইটের কাঠামো, উৎক্ষপণব্যবস্থা, ভূমি ও মহাকাশের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ভূ-স্তরে দুটি স্টেশন পরিচালনা ও ঋণের ব্যবস্থা করে ফ্রান্সের ওই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে, তখন এর মাধ্যমে দুর্গত এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হবে
বিটিআরসি সূত্র জানায়, ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস ইউনিয়ন বা আইটিইউতে বাংলাদেশের নিজস্ব অরবিটাল পজিশন ৬৯ ডিগ্রি ও ১০২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে পাওয়ার জন্য ২০০৭ সালে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল, জাপান, সাইপ্রাস, আর্মেনিয়া ও উজবেকিস্তান তাতে আপত্তি জানায়। প্রক্রিয়াগত কারণে এ ধরনের আপত্তি অস্বাভাবিকও নয়। দেনদরবার এখনও চলছে। কিন্তু অনিশ্চয়তার মধ্যে না থেকে দ্রুত ইন্টারস্পুটনিকের সঙ্গে সমঝোতায় আসা হয়।
নির্মাণ ব্যয়
কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ সেবা পরিচালনার জন্য ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একনেক সভায় দুই হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় এক হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৪৪ শতাংশ। এ ছাড়া ‘বিডার্স ফাইন্যান্সিং’ এর মাধ্যমে এ প্রকল্পের জন্য এক হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে হংকং সাংহাই ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশনের (এইচএসবিসি) সঙ্গে সরকারের প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি হয়। এক দশমিক ৫১ শতাংশ হার সুদসহ ১২ বছরে ২০ কিস্তিতে এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রাশিয়ার সংস্থা ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে অরবিটাল স্লট অনুমোদন দেওয়া হয়। এর অর্থমূল্য ২১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহটি ১১৯.১° ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমার ভূস্থির স্লটে স্থাপিত হবে। এটিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে। ফ্রান্সের থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস কর্তৃক নকশা ও তৈরি করা হয়েছে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিমালিকানাধীন মহাকাশযান সংস্থা স্পেস এক্স থেকে উৎক্ষেপণ হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ১৬০০ মেগাহার্টজ ক্ষমতাসম্পন্ন মোট ৪০টি কে এবং সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার বহন করবে এবং এটির আয়ু ১৫ বছর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। স্যাটেলাইটের বাইরের অংশে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার রঙের নকশার উপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু-১। বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও সেখানে রয়েছে।
উৎক্ষেপণ
স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ উৎক্ষেপণ যানে করে ১২ মে বাংলাদেশ সময় রাত ২ টা ১৪ মিনিটে (২০:১৪ ইউটিসি ১১ মে ২০১৮ ) সফল ভাবে বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি ফ্যালকন ৯ রকেটির নতুন ব্লক ৫ মডেল ব্যবহার করে প্রথম পেলোড উৎক্ষেপণ ছিল।বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখ ঠিক করা হয়, তবে হারিকেন ইরমার কারণে ফ্লোরিডায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলে তা পিছিয়ে যায়। ২০১৮ সালেও কয়েক দফা উৎক্ষেপণের তারিখ পিছিয়ে যায় আবহাওয়ার কারণে।
চূড়ান্ত পর্যায়ে উৎক্ষেপণ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ৪ মে ২০১৮ তারিখে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে দুই পর্যায়ের এই রকেটের স্ট্যাটিক ফায়ার টেস্ট সম্পন্ন হয়। কৃত্রিম উপগ্রহটি ১০ মে ২০১৮ তারিখে উৎক্ষেপণের তারিখ ঠিক করা হয়; কিন্তু ১০ মে উৎক্ষেপণের সময় থেকে ৫৮ সেকেন্ডে এসে তা বাতিল করা হয়। শেষ মিনিটে কিছু কারিগরি সমস্যার কারণে উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয়। অবশেষে এটি ১১ মে উৎক্ষেপণ করা হয়।
কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ করার পর, বাংলাদেশ ১২ মে ২০১৮ তারিখে এটি থেকে পরীক্ষামূলক সংকেত পেতে শুরু করে।
ভূ কেন্দ্র
বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের ভূ-কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এই জন্য গাজিপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় ভূকেন্দ্র তৈরি করা হয়ছে। জয়দেবপুরের ভূ-কেন্দ্রটি হবে মূল স্টেশন। আর বেতবুনিয়ায় স্টেশনটি দ্বিতীয় মাধ্যম হিসেবে রাখা হয়।
কি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ
সরকারের দাবি অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট থেকে ৩ ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য স্যাটেলাইট ভাড়া করে। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট চ্যানেলের সক্ষমতা বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। আবার দেশের ভিটি চ্যানেলগুলো যদি এই স্যাটেলাইটের সক্ষমতা কেনে তবে দেশের টাকা দেশেই থাকবে। এর মাধ্যমে ডিটিএইচ বা ডিরেক্ট টু হোম ডিশ সার্ভিস চালু সম্ভব।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মোট ফ্রিকোয়েন্সি ক্ষমতা হল ১ হাজার ৬০০ মেগাহার্টজ। এর ব্যান্ডউইদথ ও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে ইন্টারনেট-বিহীন অঞ্চল যেমন পার্বত্য ও হাওড় এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া সম্ভব। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট ও ব্যাংকিং সেবা, টেলিমেডিসিন ও দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারেও ব্যবহার করা যাবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট।
বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে। তখন এর মাধ্যমে দুর্গত এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হবে।