ধর্মঘটের দিনে আমার অভিজ্ঞতা: দিনটি আর পাঁচটি দিনের মতো স্বাভাবিক ছিল না
পথে নামার সাহস দেখিয়েছে বলে বাস যাত্রীদেরদের সন্দেশ-রসগোল্লা বিতরণ করা হল
- Total Shares
২৬ সেপ্টেম্বর বাংলা বনধ ডেকেছিল বিজেপি। যদিও, তৃণমূল কংগ্রেস সরকার ওই দিনটিকে আর পাঁচটা দিনের মতো দেখানোর চেষ্টা করেছিল, বাংলার কাছে এই দিনটি অবশ্য একেবারেই সাধারণ ছিল না।
অন্য দিনগুলোতে শহরে বাসে চাপতে রীতিমতো কসরত করতে হয়। আপনার যাত্রা কোনও মতেই সুখের হয়না - ট্রাফিক জ্যাম, রাজনৈতিক মিছিল, পথ অবরোধ আবার কখনও কখনও মহানগরীর বুকে ফ্লাইওভারও ভেঙে পড়ে।
কষ্টের যেন শেষ নেই।
এই অভিজ্ঞতাগুলো যদি তিলোত্তমার একটি সাধারণ দিনের রোজনামচা হয়, তা হলে গত বুধবারের অভিজ্ঞতা আর যাই হোক না কেন সাধারণ কোনও মতেই নয়।
সেদিন হাওড়া স্টেশন থেকে যাঁরা বাস ধরছিলেন তাঁদের সন্দেশ ও রসগোল্লা সহযোগে জলযোগ করানো হচ্ছিল, কারণ তারা ধর্মঘটের দিনেও পথে নামার সাহস দেখিয়েছেন। অন্যদিকে, বিজেপি ও তৃণমূল সমর্থকরা শহর জুড়ে দাপিয়ে বেড়ালেন। এক দল ধর্ঘটের সমর্থনে, অন্যটি ধর্মঘটের বিরোধিতা করে।
সত্যি, পাড়ার রাজনৈতিক নেতারা হাতে মিষ্টি নিয়ে আর মুখে এক গাল হাসি বাসযাত্রীদের মিষ্টি বিতরণ করছেন এ জিনিস তো রোজরোজ দেখা যায় না।
ধর্মঘট ডেকেছিল বিজেপি, বিরোধিতা করল তৃণমূল
যদি ধর্মঘটের দিন পথে নামার 'সাহস' দেখানোর জন্যে বাসযাত্রীদের বরাতে একটি করে মিষ্টি জোটে তা হলে অন্যদিন রাস্তায় নামার জন্য রাজকীয় ভোজনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিদিন শহরের রাস্তায় যে ভাবে বেপরোয়া হয়ে যানবাহন চলে তাতে তো জীবনের ঝুঁকি আরও অনেক বেশি।
বরঞ্চ, বুধবারের কলকাতা পথে নামার পক্ষে অনেক বেশি আদর্শ ছিল।
শহরটাকে কেমন যেন অন্যরকম লাগছিল। যানবাহনের সংখ্যা অনেক কম থাকার সৌজন্যে দূষণের মাত্রা অনেক কম ছিল, রাস্তাঘাটে ভিড়ভাট্টা ছিল না।
বাস ডিপোগুলোতে সারিবদ্ধ হয়ে বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে - 'সাধারণ' দিনে এমন দৃশ্য তো চোখে পড়ে না। যাত্রী না থাকলেও বাস রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে - এমন দৃশ্যও চোখে পড়ে না। কিন্তু বুধবার এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। হাজার হোক আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতো ওই দিনটিকেও প্রমাণ করতে হবে।
ভাঙচুর হল, পোড়ানো হল বাস, তবু সরকারের দাবি জনজীবন স্বাভাবিক
ইউরোপ সফরে ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদেশ থেকে হুঙ্কার দিয়েছিলেন যে ১২ ঘণ্টার বাংলা বনধ ব্যর্থ করতেই হবে। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছে আদেশেরই সমান আর সেই আদেশ পূরণে দিন-রাত এক করে ফেলল প্রশাসন।
এর পরিণাম: রাস্তায় একের পর এক বাস নামল। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে বাসের সংখ্যা যাত্রীর চেয়েও বেশি হল। তেলের খরচ কী ভাবে উঠবে তা নিয়ে কেউই চিন্তিত নয়, তারা পথে নেমেছে সরকারের তৃণমূল স্তরের সৈনিক হিসেবে। সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে আটটি বাসে ভাঙচুর হয়েছে ও বাসগুলোকে পোড়ানো হয়েছে। কিন্তু, বাস ভাঙচুরের আসল সংখ্যাটা ঠিক কত - এই নিয়ে কারও কোনও মাথা ব্যাথা নেই।
পথে বাস দেখা গিয়েছে - তার মানে 'যুদ্ধ জয়' সম্পন্ন হয়েছে। সন্ধ্যাবেলা সরকারি বিবৃতিতে বলা হল ধর্মঘট ব্যর্থ। সরকার ধর্মঘট ব্যর্থ করতে সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিয়েছে।
যদিও, দিনটিকে স্বাভাবিক দেখতে সরকারকে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করতে হয়েছিল।
আর পাঁচটা স্বাভাবিক দিনে যা তিনি করেন না সে দিন তাই করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। স্কুল, কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ধর্মঘটের দিন খুলে রাখার জন্যে হুমকি দিলেন। সে দিন কাজে যোগ না দিলে সরকারি কর্মচারীদেরও বেতন কেটে নেওয়ার কথা ঘোষণা করা হল।
সত্যি সত্যিই অন্য কোনও স্বাভাবিক দিনে এই ধরণের ঘটনা ঘটে না।
এই টানটান চিত্রনাট্যের মধ্যে জনগণের ভূমিকাটা ঠিক কী ছিল? পথে নামবেন কি নামবেন না - এই ভাবতে ভাবতেই দিন কেটে গেল তাদের।
আর যাই হোক সেদিনটা তো আর পাঁচটা স্বাভাবিক দিনের মতো ছিল না।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে