মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন আদালতের নির্দেশ মেনে বকরি ঈদে যত্রতত্র পশুবলি নিয়ন্ত্রণ চান না
হাইকোর্টে হলফনামায় বেশ কিছু অদ্ভুতুড়ে কারণ দেখিয়েছে তৃণমূল সরকার
- Total Shares
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার আবার সংখ্যালঘু তোষণ শুরু করে দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এবার কলকাতা হাইকোর্টে আর্জি জানান হয়েছে যে বকরি ঈদের সময় যত্রতত্র পশুবলি নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার অপারগ।
সম্প্রতি, একটি নির্দেশে, বকরি ঈদের সময় যত্রতত্র পশু বলি নিয়ন্ত্রণ করবার জন্য আদালত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল। আদালত নির্দেশ জানিয়েছিল, এ ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে সংবাদপত্র ও বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপনও জারি করতে হবে। আদালতের এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা পেশ করে সরকার জানিয়েছে যে পরিকাঠামোগত সমস্যার জন্যে সরকার এই মুহূর্তে যত্রতত্র পশুবলি বন্ধ করতে পারবে না।
সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের কথা ভেবে আদালতের নির্দেশ মানছে না তৃণমূল [ছবি: পিটিআই]
এই হলফনামায় সরকারের তরফ থেকে বেশ কিছু অদ্ভুত কারণ নির্দিষ্ট করা হয়েছে:
১) ঈদ-উল-জুহা রাজ্যের প্রতিটি মহকুমার প্রতিটি ব্লকে পালিত হয়ে থাকে।
২) এই আইনের সব ক'টি ধারাকে কঠোর ভাবে প্রয়োগ করবার মতো পরিকাঠামো রাজ্যে সরকারের নেই।
৩) রাজ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যায় পশুচিকিৎসক ও প্রাণিসম্পদ আধিকারিক নেই।
৪) রাজ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে কসাইখানা নেই।
এই হলফনামায় সরকার জানিয়েছে যে আগামী ইংরেজি বছরের মধ্যে তারা এই আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে। তার আগে কোনও ভাবেই সরকারের পক্ষ থেকে পরিকাঠামো উন্নয়ন করে এই আইন প্রয়োগ করা সম্ভব নয়।
হাইকোর্টের আগের নির্দেশে বলা হয়েছিল যে সরকারকে শংসাপত্র দিয়ে জানাতে হবে যে কোন পশুটি বলির জন্যে উপযুক্ত। সেই শংসাপত্র ছাড়া কোনও পশুকে (যেমন গরু, ষাঁড় বা মোষ প্রভৃতি) বলি দেওয়া যাবে না। একমাত্র পৌরসভা বা আঞ্চলিক প্রশাসন দ্বারা নির্দিষ্ট কসাইখানা ছাড়া আর কোথাও পশু কাটা চলবে না।
সরকারের এই হলফনামার উপর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় গোরক্ষা সেনার সভাপতি আশু মোঙ্গিয়া জানিয়েছেন, "রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের এই হলফনামার কোনও মানেই হয় না। বকরি ঈদের সময় গো-হত্যা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মুসলমানদের অহেতুক তোষণ করে চলেছে। অথচ হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের পরিষ্কার নির্দেশ রয়েছে যে কুরবানির নামে গোহত্যা করা যাবে না। আদালতের তরফ থেকে এও বলা হয়েছিল যে বকরি ঈদের সময় গোহত্যা করবার কোনও ধর্মীয় অধিকারই মুসলমানদের নেই। কিন্তু সরকার আদালতের নির্দেশ পালন না করে ভোটব্যাঙ্ক রক্ষা করতে বেশি উৎসাহী।"
নির্দিষ্ট কসাইখানা ছাড়া পশুবলি দেওয়া যাবে না [ছবি: রয়টার্স]
এই হলফনামায় মিথ্যা কথা লেখা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মোঙ্গিয়া। তাঁর কোথায় প্রতি মাসে সরকার মোটামুটি ১,৫০০ পশুচিকিৎসককে বেতন দেয়। অথচ হলফনামায় লেখা হয়েছে যে সরকারের কাছে পর্যাপ্ত পশু চিকিৎসক নেই।
রাজ্যর নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, "পশ্চিমবঙ্গে আমরা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে উৎসব পালন করে থাকি। এটা আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধের ঐতিহ্য। আমরা দুর্গোৎসব, ঈদ ও বকরি ঈদ একসঙ্গে পালন করে থাকি। হিন্দুরা যেমন বকরি ঈদে যোগ দিয়ে থাকে, তেমনই মুসলমানরাও দুর্গোৎসবে যোগ দিয়ে থাকে। বিজেপির ভেদাভেদ রাজনীতি এ রাজ্যে চলবে না। আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম ও ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবকে অনুসরণ করে থাকি। তাই তো বলছি, বিজেপির এই কৌশলপূর্ণ রাজনীতি অন্য রাজ্যে কাজ দিলেও এ রাজ্যে দেবে না।"
হাকিম অবশ্য জানিয়েছেন যে সরকারের হলফনামা সম্পর্কে তিনি ঠিক ওয়াকিবহাল নন।
অনেকেই মনে করছেন যে রাজ্য সরকার ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে আদালতের নির্দেশ অমান্য করছে। এই মুহূর্তে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। সে ক্ষেত্রে, কেন্দ্রে যদি জোট সরকার গঠন হয়, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৪২টি আসন জিতে নিতে পারলে মমতার প্রধানমন্ত্রীর পথটা আরও মসৃণ হবে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে