অযোধ্যা মামলা যতই বিলম্বিত হবে বিজেপির অবস্থা ততই খারাপ হবে
বেকারত্ব, কৃষিসমস্যা ও বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত বিজেপির নির্বাচনী বৈতরণী পারে রামই ভরসা
- Total Shares
রাম মন্দির-বাবরি মসজিদ মামলার শুনানির দিন পিছিয়ে গেল। ১০ জানুয়ারি এই মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সাংবিধানিক বেঞ্চের পাঁচ বিচারপতির মধ্যে এক বিচারপতি ইউ ইউ ললিত, শুনানি পর্ব থেকে অব্যাহতি চাওয়ায় শুনানির দিনক্ষণ ফের পিছিয়ে গেল।
বর্ষীয়ান আইনজীবী রাজীব ধাওয়ান এর আগে আদালতে তথ্য দিয়ে জানিয়েছিলেন, বিচারপতি ললিত ১৯৯৭ সালে উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংয়ের আইনজীবী হিসাবে আদালতে দাঁড়িয়েছিলেন আর এই কল্যাণ সিং মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল। এর পরেই শুনানি পর্ব থেকে অব্যাহতি চান বিচারপতি ললিত।
ধাওয়ান বিষয়টি আদালতের সামনে আনার পরেই পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ নিজেদের মধ্যে একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে মিলিত হয়ে বিচারপতি ললিতকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও বিচারপতি ললিত ছাড়াও এই পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে রয়েছেন বিচাপরপতি এস এ ববডে, এনভি রামন এবং ডিওয়াই চন্দ্রচূড়।
বিচারপতি ললিত এর আগে কল্যাণ সিংয়ের আইনজীবী হয়ে আদালতে দাঁড়িয়েছিলেন - এই তথ্য পেশ করার সময়ে রাজীব ধাওয়ান অবশ্য জানিয়েছিলেন যে বিচারপতি ললিত যদি এই মামলার শুনানি পর্বে থাকেন তা হলে তাঁর কোনও আপত্তি নেই।
সাংবিধানিক বেঞ্চ পুনর্গঠিত হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে আবার এই মামলা ২৯ জানুয়ারি শুরু হবে।
অযোধ্যা ইস্যুতে আগে লাভবান হয়েছিল বিজেপি [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
এই মামলাটি এমনিতেই ছ'দশকের বেশি সময় ধরে চলছে। এর পর এই ধরণের একটি নাটকীয় ঘটনা এই মামলার শুনানি আরও পিছিয়ে দিল।
২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট এই মামলার রায়দানের পর মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের কাছে আসে। এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছিল, বিতর্কিত জমিকে তিন ভাগ করা হোক। এর মধ্যে এক ভাগ রামের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে, এক ভাগ পাবে নির্মোহী আখড়া ও আর এক ভাগ বরাদ্দ হবে মামলার আরেক পক্ষ মুসলমানদের জন্য।
এই মামলার ফলাফলের প্রভাব শাসক দল বিজেপির উপর পড়তে পারে কারণ অনেকদিন ধরেই দলের ইস্তাহারে অযোধ্যায় রামমন্দির গঠনের কথা বলা হয়ে চলেছে।
এই আবেগপ্রবণ ইস্যু থেকে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ফায়দা তুলতেও সক্ষম হয়েছে বিজেপি।
এখন বিজেপি যদি তাদের মূল প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সক্ষম না হয় তা হলে দলের দক্ষিণপন্থী সমর্থকরা বিষয়টি মেনে নেবে না। এই ডানপন্থী ভোটব্যাঙ্কই কিন্তু ২০১৪ সালে বিজেপিকে বিপুল ভোটে জয়ী হতে সাহায্য করেছিল। এই ধরণের কোনও নেতিবাচক ঘটনা অবশ্য নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথের বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এই মুহূর্তে এমনিতেই উচ্চবর্ণের ক্ষোভে জর্জরিত বিজেপি। এর পর মূল ভোটব্যঙ্কের উপর আর কোনও প্রভাব ফেলতে চাইবে না বিজেপি।
সম্প্রতি, আর্থিক দিক থেকে দুর্বল লোকেদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করে করেছে বিজেপি যা দলীয় সমর্থকদের খুশি করতে পেরেছে।
কিন্তু তাই বলে শুধু একটিমাত্র পদক্ষেপের উপর নির্ভর করে থাকা যায় না।
বিজেপির দক্ষিণপন্থী সমর্থকদের সঙ্গে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতও অযোধ্যা বিতর্কের দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি করে আসছেন। তিনি এই বিষয়ে একটি অধ্যাদেশ জারি করারও কথাও বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে।
বিজেপি অবশ্য এই বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করেই চলতে চাইছে। সম্প্রতি, এএনআই-এর স্মিতা প্রকাশকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার ন্যায়ালয়ের বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। এর পরই সরকার পরবর্তী পদক্ষেপের কথা চিন্তা করবে।
শুনানি পর্ব দেরি হওয়ার প্রভাব গেরুয়া শিবিরের উপর পড়তে বাধ্য।
বিজেপির পক্ষে সবচাইতে মঙ্গলজনক হত যদি ২০১৯ লোকসভার আগে এই মামলার রায় প্রকাশ হয়ে যেত। রায় যদি তাদের অনুকূলে না থাকত সে ক্ষত্রে বিজেপি অধ্যাদেশ জারি করার পর্যাপ্ত সময়ও পেয়ে যেত।
কিন্তু সেই সম্ভাবনা এখন অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছে।
বেকারত্ব, কৃষি সমস্যা এবং ভাবমূর্তি নষ্ট করার মত বিভিন্ন ধরণের কেলেঙ্কারিতে এই মুহূর্তে জর্জরিত বিজেপি। তাই ভগবান রামের উপর ভরসা করেই ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার করতে চায় বিজেপি।
সম্প্রতি, হিন্দি বলয়ে প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোটে হার স্বীকার করে নেওয়ার পর রাম মন্দিরই হয়োত একমাত্র বিজেপির রাজনৈতিক শাপমোচন করতে পারে। কিন্তু এই মামলা যতই বিলম্বিত হতে থাকবে বিজেপির অবস্থা ততই খারাপ হবে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে