এশিয়ান গেমসে পদকের বন্যা, নতুন ভারতবর্ষে আপনাকে স্বাগত
ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা এখন শুধুই অংশগ্রহণ করে খুশি নন, তাঁরা পদকের মঞ্চে উঠতে চান
- Total Shares
দেশের অন্যতম সেরা টেনিস খেলোয়াড় তথা ২০১০ সালে এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক জয়ী সোমদেব দেববর্মন একবার বলেছিলেন, "ঝড় উঠেছে। উপযুক্ত পরিকাঠামো আর সঠিক সুযোগ পেলে আমরা কী না করতে পারি। বহু বছর ধরেই আমরা বলে আসছি যে ভারতে প্রতিভার অভাব নেই। এখন তার রোমান আমরা পাচ্ছি।"
এবং, উনি ঠিক কথাই বলেছিলেন।
হিমা দাসের কথাই বলুন বা দ্যুতি চান্দের, এ বছরের এশিয়ান গেমসে ভারতীয়দের সত্যিকারের ক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে। বছর দেড়েক আগেই বেশ মনমরা ছিলেন দ্যুতি। নিজের সম্মান ও প্রতিভার অখণ্ডতা বজায় রাখতে দিনরাত খেটেছেন তিনি। আর, এই মুহূর্তে তিনিই দেশের নতুন 'পোস্টার গার্ল'।
দ্যুতি চান্দ
দ্যুতির লড়াই থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার অদম্য জেদ আর কঠিন পরিশ্রমের সঙ্গে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে মানুষ নিজের লক্ষ পূরণে সফল হবেই। এই মুহূর্তে দ্যুতি হায়দরাবাদে গোপীচাঁদ অ্যাক্যাডমিতে প্রশিক্ষণ নেন।
শার্দুল বিহান, সৌরভ চৌধুরী, বজরং পুনিয়া, ভিনেশ ফোগাত, সিন্ধু ও সানিয়া - তালিকায় নামের শেষ নেই। কঠোর লড়াই করে বেশ কিছু পুরুষ ও মহিলারা এ বার এশিয়াডে পাদপ্রদ্বীপের আলোয় উঠে এলেন। মনজিৎসিংয়ের মতো কেউ একজন যখন হটাৎ করেই উদয় হয়ে জিনসন জনসনের মতো তারকাকে ৮০০ মিটারে হারিরে দেন তখন মনে হতেই পারে পদক তালিকায় নিচের দিকে থাকা ভারতের মতো একটি রাষ্ট্র এবার আওয়াজ খুঁজে পাবে।
হিমা দাস
একজন দুধওয়ালার ছেলে যিনি কোনওদিনও কোনও আন্তর্জাতিক পদক জেতেননি হটাৎ করেই এশীয় প্রযায়ের তাঁর প্রতিভা আবিষ্কার করে ফেললেন এবং কোটি কোটি ভারতবাসীর সোনার স্বপ্নটা পূরণ করে ফেললেন।
এই এশিয়ান গেমস থেকে ভারতীয়দের মধ্যে প্রভূত আশার সঞ্চার হয়েছে।
একটা জিনিস প্রমাণিতও হয়েছে যে রিওর হতাশা কাটিয়ে উঠে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি।
তাঁর এই বক্ত্যবে বিন্দ্রা কিন্তু আসলে লক্ষভেদ করেছেন। চতুর্থ স্থান পাওয়াটা ভালো কিন্তু চতুর্থ স্থানে শেষ করলে পোডিয়ামে ওঠা যায়না। বহুদিন ধরেই ভারতীয়রা এই কথাটা মানতে চাননি এবং চতুর্থ স্থানে শেষ করেও ভালো খেলেছি বলে আত্মতুষ্টিতে ভুগেছে। কিন্তু আর নয়।
নীরাজ চোপড়া
২০১৮ এশিয়ান গেমস আসলে টোকিও ২০২০ র প্রস্তুতি পর্ব। গোটা ক্রীড়া বিশ্বকে বার্তা পাঠানো গেল যে ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা বিশ্বমানের প্রতিযোগিতার জন্যে তৈরি। ভারত আর এখন প্রতি চার বছর অন্তর জেগে উঠে পরিকাঠামোর অভাবের কথা শোনাবে না। ব্যর্থতা এখন আর নিয়মে পরিবর্তন হবে না।
অভিনব বিন্দ্রার কথা আবার লিখতে হচ্ছে, "অলিম্পিক প্রতি চার বছর অন্তর আসে না। অলিম্পিক প্রতিদিনই হয়।" নতুন ভারতে ভালো পারফর্ম করতে পারাটা রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে - ২০১৮ এশিয়ান গেমসে যা প্রকাশ পেল।
মনজিৎ সিং ও জিনসন জনসন
এই গেমস দেখে মনে হচ্ছিল যে ভারতীয়দের মধ্যে একটা ক্ষিদে রয়েছে। বজরং পুনিয়াকে দেখুন। চোট নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত সোনা জিতলেন। দীপক কুমারকে দেখুন। পিছনে থেকে শুরু করেও ১০ মিটার রাইফেলে রূপ জিতে নিলেন। ভিনেশ ফোগাতকে দেখুন কী ভাবে সোনা জিতলেন। রাও থেকে চোটে কাতর হয়ে দেশে ফিরেছিলেন। জাকার্তা থেকে এবার মাথা উঁচু করে দেশে ফেরার পালা।
এই ভারতবর্ষটা কিন্তু অনেকটাই অন্যরকম।
এই ভারত কিন্তু অল্পের জন্যে চার নম্বরে থাকতে পছন্দ করে না। এই ভারত খেলতে নামলেই প্রতিবারই পদক মঞ্চে উঠতে পছন্দ করে। শুধু অংশগ্রহণ করলেই চলবে না, জিততে হবে।
রিওতে অল্পের জন্যে চতুর্থ স্থান পেয়ে অভিনব বিন্দ্রা আমাকে মজা করে বলে ছিলেন, "আমাকে নিয়ে এবার ভারতে মাতামাতি শুরু হয়ে যাবে। ভারতীয়রা চতুর্থ স্থানকে খুব বেশি পছন্দ করে থাকে। খুব সম্ভবত, স্বর্ণ পদকের চাইতেও বেশি।"
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে