এশিয়াডের পদক জয়ের উৎসব বন্ধ করে চিনকে অনুসরণ করুন
১০৬টি সোনা, ৬৮টি রুপো ও ৫০টি ব্রোঞ্জ নিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র পদক তালিকার শীর্ষে রয়েছে
- Total Shares
২০১৪ সালে সোচিতে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিক্সের চলাকালীন চিন প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং বলেছিলেন যে অ্যাথলেটিকদের সাফল্য শুধুমাত্র তাঁদের পদক জয়ের সংখ্যার উপর নির্ভর করবে না, দেখতে হবে যে তাঁরা কতটা উন্নতি করে নিজেদের পারফর্মেন্সকে ছাপিয়ে গিয়েছে।
চার বছর আগে চিন কিন্তু চিন্তাভাবনায় ভারতের থেকে কয়েক কদম এগিয়ে ছিল।
২০১৮ সালের এশিয়াডের পদক তালিকায় একবার চোখ বুলিয়ে নিলে দেখা যাবে যে এই ধরণের মানসিকতা চিনের কাছে জাদুমন্ত্র হিসেবে কাজ দিয়েছে। ১০৬টি সোনা, ৬৮টি রুপো ও ৫০টি ব্রোঞ্জ নিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি পদক তালিকার শীর্ষে রয়েছে।
উল্টোদিকে ভারতকে দেখুন - ১১টি সোনা, ২০টি রুপো ও ২৩টি ব্রোঞ্জ।
এর পরেও আসমুদ্রহিমাচল জুড়ে উৎসব পালন চলছে।
গেমসের কবাডি সেমিফাইনালে ইরানের বিরুদ্ধে ভারত [ছবি: পিটিআই]
'স্লাম ডগ মিলিয়নেয়ার' মার্কা গল্প নিয়ে বাড়াবাড়িটা যেন ভারতীয়দের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। প্রান্তিক অঞ্চলের কোনও দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসে একজন অ্যাথেলিটিক যদি শীর্ষে পৌছিয়ে যান, তাহলে তো আর কোনও কথাই নেই।
স্বপ্না বর্মণের উঠে আসার গল্প খুব সাধারণ নয়। আর সেই গল্পগুলো নিয়ে মাতামাতি করতে আমরা বেশ পছন্দ করি। স্বপ্নার দুটো পায়ে ছ'টি করে আঙ্গুল। যে জুতো তাঁর পায়ে আঁটে না সেই জুতো পড়েই এশিয়াডে সোনা জয় করলেন স্বপ্না।প্রতিটি ইভেন্টেই আমরা লক্ষ করছি যে নিম্নবর্ণের শ্রেণীর প্রতিনিধি দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে এশিয়াডে সোনা জিতেছে - এই বিষয়টি নিয়ে আমরা কেমন জানি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। আমরা গর্ববোধ করি। সময় এসেছে এই নিয়ে খুশি না থেকে কী ভাবে পদকের সংখ্যা বাড়ানো যায় সেদিকে মনোনিবেশ করার।
দেশের প্রতিটি পদকই আমরা এমন ভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করে থাকি যে দেখে মনে হয় বৃষ্টির আশা আমরা অনেকদিন আগেই ছেড়েই দিয়েছে। ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়লেই এখন আমরা যারপরনাই খুশি।
ইন্ডিয়ান আইডল বা কোন ব্যানেগা করোরপতির মতো রিয়ালিটি অনুষ্ঠাগুলোরও একই অবস্থা। সেখানেও বারংবার বোঝাবার চেষ্টা করা হয় যে এই অনুষ্ঠানগুলো প্রান্তিক এলাকার পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষেদের নিজেদের মেলে ধরার মঞ্চ।
Pain is the best motivator. ????Glad to have won a historic gold medal in Women's Heptathlon in the @asiangames2018 for my country.Thank you everyone for the endless love and support! ???????? #AsianGames2018 #TeamIndiaAthletics pic.twitter.com/Mcsw6oHbSW
— Swapna Barman (@Swapna_Barman96) 30 August 2018
কিন্তু খেলার মাঠ তো টিভির পর্দার রিয়ালিটি অন্যূস্থান নয়। তা সত্যিকারের রিয়াল।
অ্যাথলেটদের সাফল্য যে হাতে গোনা তা ক্রীড়া সংস্থাগুলো কোনওদিনও লোকাতে পারবে না। ভবিষ্যতে ভারতের সাফল্যের রোডম্যাপটা কী? আমি নিশ্চিত সেরকম কিছু নেই।
জনসংখ্যার বিচারে যথাক্রমে এক ও দুই নম্বরে রয়েছে চিন ও ভারত। গোটা বিশ্বের জনসংখ্যার ৩৭ শতাংশ এই দুটি দেশে বসবাস করে। কিন্তু ক্রীড়া ক্ষেত্রে চিনের ধারেকাছেও আসে না ভারত।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, একটি দেশের মাথাপিছু অলিম্পিক মেডেলের সংখ্যা হিসেবে করলে দেখা যাবে ভারত সবচাইতে পিছিয়ে রয়েছে।
Rio Olympics 2016: India medal tally shows worst country performance https://t.co/p4qxxVkHDf Some action somewhere is required !!!!!
— Neeraj (@imNkansal) 24 August 2016
পদক সংখ্যার বিচারে রিও অলিম্পিক্সে ৬৭তম স্থান অধিকার করেছিল ভারত। মাত্র দুটি পদক জিতেছিল ভারত - পিভি সিন্ধু ব্যাডমিন্টনে রুপো পেয়েছিলেন আর কুস্তিতে সাক্ষী মালিক ব্রোঞ্জ জিতেছিল। দেশের জনসংখ্যা যেখানে ১,৩২৬,৮০১,০০০ থেকে বেশি সেখানে জনসংখ্যার মাথাপিছু পদক হিসেবে করলে ভারতের স্থান কিন্তু সবার শেষে হওয়া উচিৎ।
তাই বলে যে ভারতীয়রা পদক জিতেছেন তাঁদের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখবার কোনও মানে হয়না। যাঁরা মনে করছেন যে ভারত খারাপ সময় কাটিয়ে উঠে এখন জেগে উঠেছে তাদেরকে সতর্ক করাটাই উদ্দেশ্য।
অনেকেই বলছেন যে চিনের এহেন ভালো পারফর্মেন্সের পিছনে মূল কারণ সে দেশে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করাটা বাধ্যতামূলক এবং এই শিশুদের ভালো খেলতে হবে বলে সর্বদাই চাপে রাখা হয়।
শুরুতেই এই ধরণের ভ্রান্ত ধারণা আমাদের ঝেড়ে ফেলতে হবে।