লেখা ছাড়াও মির্জা গালিবের প্রেম ছিল মাংস ও আমে

কবিতা লেখার বাইরে তাঁর অমোঘ টান ছিল আমের প্রতি, ভালবাসেতন কাবাবও

 |  4-minute read |   14-03-2018
  • Total Shares

বিখ্যাত কবি মির্জা আসাদুল্লা খান গালিবকে নিয়ে একটি অসাধারণ জীবনী লেখার জন্য আলতাফ হোসেন হালির কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকব।আমি একজন খাদ্য রসিক, রাঁধুনিও বটে।তাই হোসেনের লেখা বইটিতে গালিবের খাওয়াদাওয়ার যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে সেটা আমার বেশ ভালো লেগেছে।

হালি তাঁর বইতে লিখছেন প্রাতরাশে গালিব শুধু এক গ্লাস বাদাম-দুধ খেতেন।মাংস খেতে গালিব খুব ভালোবাসতেন, তাই পাতে মাংস না হলে তাঁর চলতই না।হালি লিখছেন, জীবনের শেষদিকে খাওয়ার ইচ্ছেটা তাঁর একেবারে চলে গিয়েছিল। কিন্তু তবুও দুপুরে খাওয়ার সময় ২৫০ গ্রাম ওজনের মাংসের কোর্মা না খেলে তাঁর চলত না।দু'টো বাটিতে আলাদা করে মাংস ও তরকারি পরিবেশন করা হত।আর একটা বাটিতে একটা ফুলকা বা ময়দা দিয়ে বানানো একটা হাত রুটির ওপরের পাতলা অংশটা তরকারিতে ভিজিয়ে তাঁকে দেওয়া হত।আর একটা পাত্রে রাখা থাকত খানিকটা দই।আবার কখনও খাবারে থাকত একটা ডিমের কুসুম।

ghalib_body1_031418043616.jpgছবি:ইউটিউব

সন্ধ্যেবেলায় শামি কাবাব বা শিখ কাবাব খেতেন তিনি।পরিমাণে কম খেলেও, কি খাচ্ছেন সেটা নিয়ে খুবই সচেতন ছিলেন গালিব।তিনি খুব সাধারণ জীবন যাপন করতেন।খাওয়ার আগে দস্তরখান বেছানো হতো এবং তার উপর থাকত খুব দামি থালা বাসন যদিও তাতে খুব সাধারণ সব খাবার পরিবেশন করা হত। তিনি মৃদু হেসে বলতেন, "ইয়াযীদের মতো পাত্রের বায়াজিদের মতো খাবারের।"

ইয়াযীদ ছিলেন উমায়্যাদ রাজবংশের দ্বিতীয় খলিফা।কারবালার যুদ্ধে ইয়াযীদ,নবী মুহাম্মদের নাতি, হুসেন ইবন আলীকে হত্যা করেছিল।নবম শতাব্দীর এক সুফী ছিলেন বায়েজিদ বাষ্টামী,যিনি নিজের ভক্তি ও আত্মত্যাগের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।

গরমকালে আম হয়।আমের কথা বলেই মির্জা গালিবের কথা বলতে হয়।আম ছিল ওনার অতি প্রিয় ফল।গরম পড়লেই কবির বন্ধুরা তাদের বাগানের সেরা আমগুলি তাকে পাঠাতেন।

আম নিয়ে গালিবের একটা বিখ্যাত গপ্প আছে।একবার মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জফর তার কয়েকজন সহচরকে সঙ্গে নিয়ে কিলা-ই-মুবারকে পায়চারি করছিলেন।সম্রাটের সঙ্গে গালিব ও ছিলেন।কিলা-ই-মুবারকে এখন যেটা লালকেল্লা, সেখানেই বাঘ-এ-হায়াত বকশ বা মাহতাব বাগানে ঘুরছিলেন।বাগানটির আম গাছগুলিতে নানা ধরণের আম ঝুলছিল।এই বাগানের আমে শুধুই রাজা,রাজপুত্র ও হারেমর মহিলাদের অধিকার ছিল।

ghalib_body2_031418043743.jpgগালিব খুব আম খেতে ভালোবাসতেন

গালিব প্রতিটি আম খুব ভালো করে খেয়াল করছে দেখে সম্রাট জিজ্ঞাসা করলেন,"এত মন দিয়ে কি দেখছ?" কবি কর জোড়ে অত্যন্ত নম্র ভাবে বললেন, "মহারাজা একজন কবি একবার বলেছিলেন প্রত্যেকটা ফলের গায়ে লেখা থাকে তা কার জন্যে তাই আমিও খুঁজছি কোন আমটার গায়ে আমার পিতামহ, আমার পিতা ও আমার নাম লেখা আছে!"

একথা শুনে সম্রাট মৃদু হেসে বাগানের কিছু শ্রেষ্ট আম ঝুড়ি ভোরে গালিবের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন।একদিন গালিব তার প্রিয় বন্ধু হাকিম রাজিউদ্দিন খানের সাথে নিজের বাড়ির বারান্দায় বসেছিলেন।হাকিম রাজিউদ্দিন খান আম পছন্দ করতেন না।রাস্তা দিয়ে একটি গাধা টানা গাড়ি যাচ্ছিলো।রাস্তায় এক রাশ আমের খোসা পড়েছিল।গাধাটা আমের খোসার ঘন্ধ শুঁকে নিজের মুখটা ফিরিয়ে নিল।দেখে হাকিম সাহেব গালিবকে বললেন,"দেখেছ, গাধারাও আম পছন্দ করে না।" গালিব একটু হেসে বললেন,"সত্যিই গাধারাই আম পছন্দ করে না!"

একদিন মৌলানা ফজল-ই-হক ও আরও কয়েকজন আমের পুষ্টগুণ নিয়ে কথা বলছিলো।মির্জাও ছিলেন সেখানে।শেষে মৌলানা ফজল-ই-হক মির্জার মতামত জানতে চাইলেন।কবি একটু হেসে বললেন,আমি অনেক আমি খেতে চাই আর প্রতিটা যেন মিষ্টি হয়।

গালিবের বন্ধুরা তাকে অনেক আম পাঠাতেন কিন্তু তাতেও যেন কবির মন ভরত না।তাই কবির আম ও কাবাবের প্রতি ভালোবাসাকে সম্মান জানিয়ে, আমার পরিবারে প্রচলিত একটি রান্না গালিবের স্মৃতি উদ্যেশে সমর্পণ করলাম এখানে। রান্নাটির নাম কালিয়াম্বা।শামি কাবাব ও কাঁচা আম দিয়ে রান্নাটি করা হয়।

কালিয়াম্বা

পার্ট-১:শামি কাবাব ১/২ কেজি কিমা করা শুকনো মাংস ১/২ কাপ চানার ডাল ১/২ ইঞ্চি আদা ১ ছোট করে কাটা পেঁয়াজ ১ বড় এলাচের দানা ৩ লবঙ্গ১/২ চা-চামুচ গোলমরিচের বীজ২ তেজ পাতা স্বাদ অনুসারে গোটা লাল মরিচস্বাদ অনুসারে নুন

১/৪ কাপ জলে সবকটি উপকরণ দিয়ে ফুটতে দিন।ফুটে উঠলে প্রেসার কুকারে ১০ মিনিটে রেখে দিন।তারপর ঠান্ডা হতে দিন।রান্নাটিতে জল থাকলে ঢাকনা খুলে রান্না করুন যাতে জল টেনে যায়।মিশ্রণটি বেশ আটো না হলে কাবাব ভেঙে যেতে পারে।এরপর মিশ্রণটিকে একটি ফুড প্রসেসরে চালিয়ে মিহি করে নিতে হবে।এবার এই মিশ্রণটিতে ছোট করে কাটা পেঁয়াজ,ধনেপাতা ও কাঁচালঙ্কা দিয়ে মেখে নিতে হবে। এরপর কাবাবের আকারে গড়ে নিয়ে কম তেলে ভেজে তুলে নিতে হবে।ভালো কাবাব বানাবার কৌশলটি হল খুব কম আঁচে অল্প তেলে একটি একটি করে কাবাব ভাজা।

পার্ট ২:মোরব্বা

২৫০ গ্রাম কাঁচা আম ১৫০ গ্রাম চিনি ১/২ কাপ জল খোসা ছাড়িয়ে আমগুলোকে একটা কাঁটা চামুচ দিয়ে ফুঁটো ফুঁটো করে নিতে হবে। আঁঠি বাদ দিয়ে পাতলা পাতলা করে আমগুলোর লম্বা ফালি করে নিতে হবে। আমের টুকরো গুলো জলে ফুঁটিয়ে নিতে হবে। ফুঁটে গেলে জলে চিনি মেশাতে হবে। চিনির শিরা গাঢ় হতে হবে।

পার্ট ৩: পুদিনাপাতা ও কাঁচালঙ্কা দিয়ে সাজাতে হবে

একটি ছড়ানো পাত্রে কাবাবগুলো সাজিয়ে রাখুন।এবার তৈরী করে রাখা মোরব্বা কাবাবের উপরে ঢেলে দিয়ে কম আঁচে ১৫ মিনিট রান্না করুন। এবার, মির্জা গালিবের একটি গজল শুনতে শুনতে খাবারটি উপভোগ করুন।যদিও, মির্জা গালিব খাবারটির সাথে তার পছন্দসই সুরাটিও নিশ্চয়ই পান করতেন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

RANA SAFVI RANA SAFVI @iamrana

The writer is the author of 'Where Stones Speak' and other books.

Comment