সর্বোচ্চ ভাড়ার সঙ্গে কতটা সারচার্জ ধার্য করা যাবে তাও সরকারের ঠিক করে দেওয়া উচিৎ
দিল্লি হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে দিল্লি সরকারও সর্বোচ্চ ভাড়া বেঁধে দিয়েছে
- Total Shares
রোদ্দুর থাকলে ভাড়া যদি ১৪০ টাকা হয়, মেঘ ডাকলে সেই একই দূরত্ব অতিক্রম করতে ২৫০ টাকা মতো লাগে। আর ঝড় বৃষ্টি হলে তো কোনও কথাই নেই। ইংরেজি ভাষায় একটি প্রবাদ আছে স্কাই ইজ দ্য লিমিট। শহরে ঝড় বৃষ্টি হলে সেই ১৪০ টাকার ভাড়া হয়ে যায় আকাশ ছোঁয়া।
শনিবারও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সখ্যাৎকারে আলিপুর হাওয়া অফিসের কর্তারা বৃষ্টির কোনও পূর্বাভাস দিতে পারেননি। অথচ রবিবার দুপুরেই শহর জুড়ে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল। আবহাওয়াবিদরা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হলেও নগরবাসীদের কাছে অ্যাপ ক্যাবের ভাড়ার পূর্বাভাস এখন কিছুটা জলভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের যানজট বা আবহাওয়া পরিস্থিতি সামান্য বিগড়ে গেলেই অ্যাপ ক্যাবের ভাড়া আকাশ ছোঁয়া হয়ে যাবে।
২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময় কলকাতায় অ্যাপ ক্যাবের সূচনা হয়। সেই সময় বাংলার পরিবহণ দপ্তরের দায়িত্বে মদন মিত্র। কিন্তু তিনি তার মন্ত্রিত্বের মেয়াদকালের অনেকটা সময় (অ্যাপ ক্যাব সূচনা হওয়ার পর অধিকাংশ সময়) জেল হেপাজতে থেকে হাসপাতালে কাটিয়েছেন। এর পর মদন মিত্রের পরিবর্তে পরিবহণ মন্ত্রী হন শুভেন্দু অধিকারী। দায়িত্ব পেয়েই তিনি ঘোষণা করেছিলেন অ্যাপ ক্যাবের সর্বোচ্চ ভাড়া বেঁধে দিতে হবে।
অ্যাপ ক্যাবের সর্বোচ্চ ভাড়া বেঁধে দিতে হবে
দিল্লি হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে দিল্লি সরকার ইতিমধ্যেই অ্যাপ ক্যাবের সর্বোচ্চ ভাড়া বেঁধে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও সেই সময় জানিয়েছিল যে দিল্লি হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে এই রাজ্যেও অ্যাপ ক্যাবের সর্বোচ্চ ভাড়া বেঁধে দেওয়া হবে। কিন্তু বছর দুয়েক কেটে যাওয়ার পরেও সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয় কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। অবশেষে শনিবার সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয় প্রথম পদক্ষেপটি করা হল।
অ্যাপ ক্যাবগুলোর মালিক ও চালক সংগঠনের চাপে পরে সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাপ ক্যাবের ভাড়া নির্ণয়ের ভিত্তি নিয়ে সওয়াল করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে ১৫ দিনের মধ্যে ভাড়া ও বর্ধিত ভাড়া (সারচার্জ) নির্ণয় ঠিক কী ভাবে করা হয় তা অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলোকে জানাতে হবে। সহজ সরল ভাষায়, অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলো প্রতি কিলোমিটার কত টাকা ভাড়া ও কত টাকা বর্ধিত ভাড়া দাবি করে তারই হিসেবে দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া, কোন কোন পরিস্থিতিতে কী ভাবে কত টাকা সারচার্জ যোগ করে অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলো তাও বিশদে জানাতে হবে। এর পাশাপাশি, অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলো কী হিসেবে মালিকদের কাছে কমিশন ধার্য করে তাও জানাতে বলা হয়েছে।
সরকারের এই নির্দেশে যাত্রীরা আশার আলো দেখতেই পারেন। একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করবার জন্য অ্যাপ ক্যাবের সর্বোচ্চ ভাড়াও বেঁধে দেওয়ারর সম্ভাবনা রয়েছে প্রবল। তবে এই সর্বোচ্চ ভাড়া বেঁধে দেওয়ার একটি খারাপ প্রভাবও দেখা দিতে পারে। এর ফলে অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলো অধিকাংশ সময়েই সর্বোচ্চ ভাড়া ধার্য করতে পারে।
যাত্রীরা আশার আলো দেখতেই পারেন
ধরুন, গড়িয়াহাট থেকে ধর্মতলায় যেতে সাধারণত ১২০ টাকা ভাড়া হয় এবং সারচার্জ যোগ করে হয়তো কখনও কখনও সেই ভাড়া ৩৫০ টাকা হয়ে যায়। সরকারের পক্ষ থেকে যদি এবার গড়িয়াহাট থেকে ধর্মতলার সর্বোচ্চ ভাড়া ২৫০ টাকায় বেঁধে দেওয়া হয় তাহলে হয়তো দেখা যাবে যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অ্যাপ ক্যাবগুলো গড়িয়াহাট থেকে ধর্মতলা যাওয়ার জন্য ২৫০ টাকা ভাড়া চাইছে। এই পরিস্থিতি এড়াবার একটি মাত্র উপায় আছে। কোন কোন ক্ষেত্রে কত শতাংশ সারচার্জ ধার্য করা যাবে তাও ঠিক করে দিক সরকার। একই সঙ্গে ট্যাক্সি বা বাসের মতো এই হিসেবে তালিকা জনসমক্ষে প্রচার করুক।
শুধুমাত্র এই পন্থা অবলম্বন করলেই অ্যাপ ক্যাবের ভাড়ায় স্বচ্ছতা আসবে। আর তা না হলে যানজট হলে আর বৃষ্টি পড়লেই অ্যাপ ক্যাবের দাম আকাশ ছোঁয়া।