মানুষের ঈশ্বর হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষায় সে আবার ফ্রাঙ্কেস্টাইনের সৃষ্টি করে ফেলবে না তো?
হার্ভার্ডের একদল গবেষকের দাবি, এতে আয়ু বেড়ে হবে ১৫০ বছর পর্যন্ত
- Total Shares
ছেলেবেলায় একটা ইংরেজি ছবি দেখেছিলাম নাম "স্পিসিস''। একটি আমেরিকান কল্পবিজ্ঞান ভিত্তিক ভয়ের ছবি। ছবিটি এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করে যে পরে ছবিটির সিকুয়েল তৈরি হয়।
ছবিটিতে দেখানো হয় যে দেশের সরকারের সঙ্গে একদল বিজ্ঞানী যৌথ ভাবে একটি গবেষণা করে এবং সেই গবেষণার অঙ্গ হিসেবে তাঁরা ভিন গ্রহের ডিএনএ মানুষের ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে একটি নতুন মানুষের সৃষ্টি করতে চান। এর ফলে যে মানুষটি জন্মাবে সে শারীরিক, মানসিক ও মেধার দিক থেকে হবে সর্বশ্রেষ্ট। এভাবেই সৃষ্টি হয় সিলের। আর পাঁচটা শিশুর মতো দেখতে হলেও সিল তিন মাসের মধ্যেই ১২ বছর বয়সী একটি নাবালিকাতে রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ এভাবেই লাফিয়ে লাফিয়ে সিলের বয়স বাড়তে থাকে। তবে গবেষকদের আশা মতো কাজ হল না। উপকারের জায়গায় অপকারই হল অনেক বেশি। তাঁদের পরীক্ষার ফলে যে জীবের সৃষ্টি হল সে তার বুদ্ধি এবং শক্তি দিয়ে মানুষকেই হত্যা করতে শুরু করে। পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পেরে গবেষকরা সিলকে হত্যা করতে চেষ্টা করলে সিল তার অসম্ভব শক্তি ও বুদ্ধির জোরে গবেষকদের হাত থেকে পালিয়ে যায়।
পালিয়ে সে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পুরুষদের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে তাঁদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে যার ফলে সিল অজস্র সন্তানের জন্ম দিতে থাকে, যারা সিলের মতোই মারাত্মক। তারাও নিজেদের পথের কাঁটাগুলো সরাবার জন্য একের পর এক হত্যা করতে থাকে। ইতিমধ্যে পুলিশ তাদের ধরার জন্য তল্লাশি চালাতে থাকে বিভিন্ন জায়গায়। যে বা যারাই সিলের পথের কাঁটা হয় সিল তাঁদের হত্যা করে। অবশেষে সিলকে হত্যা করা হলেও যে ইঁদুর সিলের মৃতদেহটা খায়, সেই ইঁদুরের থেকে জন্ম নিতে শুরু করে ঠিক সিলের ডিএনএ সম্পন্ন অসংখ্য মারাত্মক ধরণের ইঁদুর।
'স্পিসিস' ছবির একটি দৃশ্য
১৮১৮ সালে প্রকাশিত মেরী শেলির উপন্যাস 'ফ্রাঙ্কেনস্টাইন'-এর সঙ্গে "স্পিসিস'' ছবিটির অনেক মিল। কল্পনা ছাপিয়ে বাস্তবের সঙ্গে এর অনেক মিল রয়েছে।
এটা নিছক একটা কল্পবিজ্ঞানের গল্প, ভাগ্যিস বাস্তবে সম্ভব নয়। সত্যিই কী সম্ভব নয়? কম্পিউটারের কথা ধরা যাক। এমন একটি মেশিন যার বুদ্ধির ধার যে মানুষ তাকে সৃষ্টি করেছে তার চেয়েও অনেকগুণ বেশি। সেই তো শুরু। তারপর একের পর একটি যুগান্তকারী সব আবিষ্কার হয়েছে।
তেমনই খুব কষ্ট করে খাবার না খেয়ে ডালের জন্য লাল বড়ি, ভাতের জন্য নীল বড়ি খেলেই ব্যস খাওয়া হয়ে গেল, পেটও ভরে গেল। একটি রোবট আমাদের ঘরবাড়ি ঝকঝকে তকতকে করে পরিষ্কার করে ফেলছে নিমেষেই, সে আমার মহিলা।
অধ্যাপক ডেভিড সিনক্লেয়ার
অতি সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক ডেভিড সিনক্লেয়ার সঙ্গে নিউ সাউথ ওয়্লেস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের একটি দল নতুন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তার ফলে মানুষের আয়ু বাড়াতে সহায়তা করবে। এই ওষুধটি খেলে একজন ব্যক্তি বাঁচতে পারে প্রায় ১৫০ বছর পর্যন্ত, দাবি তেমনই। পাশাপাশি শরীরের কোষ ও অঙ্গপ্রতঙ্গ পুনর্গঠিত হবে, যার ফলে যে সব মানুষ পার্কিনসন্স এবং পক্ষাঘাতে ভুগছেন তাঁরাও সেরে উঠবেন।
মানুষের ঈশ্বর হয়ে ওঠার ফলে আমরা আবারও আর এক ফ্রাঙ্কেস্টাইন যেন সৃষ্টি না হয় সে দিকে যেমন খেয়াল রাখতে হবে তেমনই এই সব ওষুধ যদি অসাধু মানসিকতার কোনও ব্যক্তির হাতে পড়ে যায় তা হলে তা থেকে স্পিসিসের মতো মারাত্মক কোনও ফল হতে পারে। তাই ভবিষ্যতে এই ধরণের গবেষণার ফল অপব্যবহারের মতো যে চরম বিপদ ঘটবে না সেটা কে বলতে পারে।
তবে সব ভালো কী আসলে ভালো? তা নাও তো হতে পারে। হিতে বিপরীতও তো ঘটে যেতে পারে? যেমনটা হয়েছিল মানিকবাবুর অনুকূলের ক্ষেত্রে। আবার ভালোর মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও বেজায় বিপদ।
দীর্ঘায়ু হতে কে না চায়
আর একটা দিকও ভাবা বিষয় আছে সেটা হল আমাদের গড় আয়ু অনেক বাড়লেও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিভিন্ন ধরণের নতুন সব অসুখের প্রকোপও। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আমরা হামেশাই এই ধরণের নতুন সব অসুখের সম্বন্ধে জানতে পারি। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা যেমন মানুষের জীবনে অনেক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে তেমনই তার উল্টো দিকটাও অস্বীকার করা যাবে না।
দীর্ঘায়ু হতে কে না চায়। থুড়ি। ব্যধিহীন দীর্ঘায়ু কে না চায়? আমি আপনি সবাই চাই। কিন্তু এখানে গবেষকের দল কোথাও এখনও পর্যন্ত বলেন নি যে যিনি এই ওষুধটি খাবেন তিনি ব্যধিহীন দীর্ঘায়ু লাভ করবেন।
তাই আমার মনে হয় কতদিন বেঁচে রইলাম সেই বিষয় মাথা না খুঁড়ে যে কোটা দিন বাঁচব সে কটাদিন যেন শান্তিতে এবং সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকি। সেটাই আমার কাম্য। আমার মনে হয় আমাদের সবার কাম্য।