নামে আর কী আসে যায়: একজন ইলাহাবাদী চিরজীবন ইলাহাবাদী হয়েই থাকবেন
সব বিজেপি সমর্থক যে প্রয়াগরাজ সমর্থন করছেন এমন নয়
- Total Shares
এলাহাবাদের নতুন নাম হয়েছে প্রয়াগরাজ।
অনেকেই বলতে পারেন যে নামে আর কী আসে যায়। কিন্তু একজন এলাহাবাদীর (বলা ভালো ইলাহাবাদী) কাছে এ যে বিনা মেঘে বজ্রপাত।
ইলাহাবাদীরা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে তাঁদের অতি প্রিয় ঐতিহাসিক শহরটির নাম পরিবর্তন হয়ে গেছে। তাও আবার এতো অনাড়ম্বরভাবে।
এই মুহূর্তে শহরবাসীরা দু'ভাগে বিভক্ত। এদের মধ্যে কয়েকজন প্রয়াগরাজ নামটিকে সমর্থন করছেন। আবার অনেকেই মনে করছেন পুরোনো নামটিকে রেখে দেওয়া উচিত। জন্মলগ্ন থেকেই বিভিন্ন অবিস্মরণীয় ঘটনার সাক্ষী থেকেছে এই শহরটি। বিভিন্ন সময়ে বহিরাগতদের আক্রমণের মুখে পড়া, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং বিভিন্ন সময়ে অসাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা - এলাহাবাদীরা অনেক কিছুরই সাক্ষী থেকেছেন।
এলাহাবাদ প্রেমীরা নাম পরিবর্তনে খুশি নয় [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
দেশকে শুধুমাত্র কয়েকজন প্রধানমন্ত্রী উপহার দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি এলাহাবাদ। এই শহর বেশ কয়েকজন উল্লেখযোগ্য রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ, আমলা এবং বিভিন্ন জগতের বেশ কয়েকজন সনামধন্য লোককে জন্ম দিয়েছে। শুধুমাত্র, দেশ ও সমাজের প্রতি এই ব্যক্তিত্বদের অবদান নয়, শহরের নামটির প্রতি এই ব্যক্তিত্বদের যে আবেগ জড়িয়ে আছে, তা ভেবেই এলাহাবাদের বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষ এই নাম পরিবর্তন মেনে নিতে পাচ্ছেন না।
এই নাম পরিবর্তন নিয়ে শহর জুড়ে বিতর্ক এমনকি প্রতিবাদের সুর ও দানা বেঁধেছে। এলাহাবাদকে মনে প্রাণে ভালোবাসেন এমন কিছু শহরের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব নিজেদের নামের সঙ্গে ইলাহাবাদী শব্দটি ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। অনেকে তো আবার আদালতের দ্বারস্থ হয়ে শহরের নামকে প্রয়াগরাজ থেকে পুনরায় এলাহাবাদ করার জন্য আর্জি জানাবেন বলে ঠিক করে ফেলেছেন। তাঁদের দাবি সরকারি হলফনামায় একটি মস্ত বড় 'ভুলের' সন্ধান তাঁরা পেয়েছেন।
হলফনামায় শুধু জেলার নাম পরিবর্তনের কথা বলা আছে [ছবি: টুইটার]
তাঁদের দাবি, হলফনামায় বলা হয়েছে, "শুধুমাত্র এলাহাবাদ জেলার নাম পরিবর্তন করা হয়ে প্রয়াগরাজ করা হল, শহরের নাম নয়।" তাঁরা আশাবাদী যে তাঁরা আর্জি জানালে আদালত তাঁদের আর্জি নাকচ করতে পারবে না।
শহরের শিক্ষাবিদরাও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যযুগ ও আধুনিক ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন প্রধান হেরম্ব চতুর্বেদী জানিয়েছেন, সম্রাট আকবর ১৫৭৪-৭৫ খ্রিস্টাব্দে যমুনা নদীর তীরে এলাহাবাদ দুর্গের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। ১৫৮ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদকে (তার আগে নাম ছিল ইলাহাবাস) একটি আলাদা প্রদেশ ঘোষণা করা হয়, যে প্রদেশের তিনটি প্রশাসনিক বিভাগ, ১০টি স্থানীয় প্রশাসন ও ১৭৭টি পরগনা ছিল।
এই স্থানীয় প্রশাসনগুলোর এক্তিয়ারে গাজীপুর, বেনারস, কালিঞ্জর ও ভাদৈয়ের মতো অঞ্চলগুলো ছিল। মধ্যযুগের সময়কার ঘটনা এগুলো। এলাহাবাদের অনেক ঐতিহাসিক আবার মনে করেন যে প্রাচীন কালে সত্যি সত্যিই প্রয়াগ বলে একটি জায়গার অস্তিত্ব ছিল কিন্তু গঙ্গার প্লাবনে সেই অঞ্চলটির অনেকটাই বিলীন হয়ে গিয়েছে।
এলাহাবাদ সফরে এসে যোগী কিন্তু নাম পরিবর্তনের কথা বলেননি [ছবি: পিটিআই]
অনেকে আবার আরও একটি তত্ব দিচ্ছেন। রামচন্দ্র যখন ১৪ বছরের জন্য বনবাসে গিয়েছিলেন তখন তাঁর শহরে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ ছিল। তবেই সময়ে ভরদ্বাজ ঋষির আশ্রম থেকে বনাঞ্চল শুরু হত আর এই অঞ্চলগুলো পুরোটাই অরণ্য ছিল।
এই নাম পরিবর্তনের খেলায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে - এর সঙ্গে জাত ধর্ম বা রাজনীতির যে বিশেষ সম্পর্ক আছে তা নয়। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যখন কুম্ভ মেলার ব্যবস্থা পরিদর্শন করতে এলাহাবাদে এসেছিলেন তখন এই নাম পরিবর্তনের কথা একবারের জন্যেও উল্লেখ করেননি। কিন্তু এর কিছুদিনের মধ্যেও সরকারি হলফলনামা প্রকাশ করা হল।
সব বিজেপি সমর্থকই যে প্রয়াগরাজ নামটিকে সমর্থন করছেন এমন নয়। আবার সব অ-বিজেপি সমর্থকই যে এলাহাবাদ নামটা সমর্থন করছেন এমনও নয়। অনেক বিজেপি সমর্থকই এলাহাবাদ নামটি রেখে দেওয়ার পক্ষে।
তাঁরা নাম পরিবর্তনের তীব্র বিরোধিতা করছেন। আসলে এই সমর্থন বা এই বিরোধিতা দল মত নির্বিশেষে হচ্ছে। আর এটাই কিন্তু ইলাহাবাদীদের বিষেশত্ব। একমাত্র যদি আদালত পারে তো তো পারবে। তা না হলে কেউই আর প্রয়াগরাজকে এলাহাবাদ করতে পারবে না।
তাই বলে ইলাহাবাদীরা কিন্তু চিরজীবনের জন্য ইলাহাবাদী রয়ে যাবেন।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে