সাইক্লিস্টদের কাছে অভিযানের চেয়েও বড় অভিযান অর্থসংগ্রহ

রাজ্যের সাইক্লিস্টদের সমস্যার সাতকাহন

 |  2-minute read |   19-03-2018
  • Total Shares

রামনাথ বিশ্বাস, বিমল মুখোপাধ্যায় হয়ে বিমল দে এবং বর্তমানে সোমেন দেবনাথ, বাঙালির সাইকেলে বিশ্বভ্রমণের বয়স কিন্তু কম নয়। ১৯২৪ সালে বিমল মুখার্জী যখন বেরোন তাকে প্রথম ভারতীয় ভু-পর্যটক বললে অত্যুক্তি হয় না। কিন্তু এত বছর পরেও সাইকেল অভিযানে বাঙালির সংখ্যা সত্যি নগণ্য। কারণগুলো নিয়ে একটু ছোট্ট আলোচনা করা যাক।

বাঙালিকে আর যাই হোক ঘরকুনো বলতে আমি রাজি  নই। কিন্তু সঠিক ভাবে একটা অভিযান সম্পন্ন করার পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। যার ফলে বেশ কিছু অভিযান শুরুর আগেই শেষ হয়ে যায় আবার কিছু অভিযান সফলভাবে শেষ না হয়ে মাঝপথে শেষ হয়। একটা সঠিক পরিকল্পনা এবং যে অঞ্চলে অভিযান হচ্ছে সেই অঞ্চল নিয়ে পড়াশোনা একটা অভিযানের সাফল্যের পথে অনেকটাই এগিয়ে দেয়।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অভিযান করায় কূটনৈতিক বেশ কিছু বাধার সম্মুখীন হতে হয়। বর্তমানে আমার আফ্রিকা অভিযান নিয়ে আমি বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে চলেছি। মূল কারণ হল ভিসা পেতে দেরি। অনেক ছোট ছোট দেশ আছে যেগুলো পেরোতে হয়ত দু-তিনদিন সময় লাগবে, কিন্তু ভিসা পেতে লেগে যায় একসপ্তাহ। আবার অনেক দেশের ভিসা পেতে আপনাকে মাঝপথে অভিযান ছেড়ে ভারতে ফিরে ভিসার আবেদন করতে হবে। এর ফলে বেড়ে যায় অভিযানের সময়, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে খরচ। অদ্ভুত ভাবে কিছু দেশ আবার সাইক্লিংয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যেমন ভুটান, ইরান, সৌদি আরব। আর একটা উদাহরণ দেই, ভারত এবং মিয়ানমার পাশাপাশি দেশ হলেও মিয়ানমার কোনওভাবেই আপনাকে রাস্তা দিয়ে সাইকেল নিয়ে ঢুকতে দেবে না। বিমানে মিয়ানমারে প্রবেশ করতে হবে। একটা সাইকেল অভিযানের জন্য যেটা কোনওভাবেই কাম্য নয়।

body_031918014621.jpgমিয়ানমারে কোনওভাবেই রাস্তা দিয়ে সাইকেল নিয়ে ঢুকতে দেবে না, সে দেশে বিমানে প্রবেশ করতে হবে [ছবি: প্রতিবেদক]

অর্থ অবশ্যই একটা বড় সমস্যা। আমরা বলে থাকি যে কোনও অভিযান শুরুর আগে অভিযানের অর্থসংগ্রহ আরও বড় 'অভিযান'। যে কোনও অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের প্রয়োজনীয় সামগ্রী (ইকুইপমেন্ট এবং গিয়ার) এখনও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। একে অত্যধিক দাম, তার উপর সঠিকভাবে স্পন্সর পাওয়া যায় না। অনেকাংশেই নির্ভর করতে হয় বন্ধুবান্ধব চেনাপরিচিতজন বা ক্রাউড ফান্ডিংয়ের উপর। অনেকে আবার ঋণ নিয়ে যান, সেক্ষেত্রে একটা প্রবল চাপ থাকে সেই ঋণ শোধ করার।

সরকারের সাহায্য পাওয়া এখনও দুরাশা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীন সংস্থা ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ফাউন্ডেশন’। কিন্তু পর্বতারোহণ ছাড়া অন্যান্য অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের জন্য সাহায্য পাওয়া যায় না বললেই চলে।

শেষে কলকাতার আঞ্চলিক সমস্যার কথাটা বলি। কলকাতার বেশীরভাগ রাস্তায় সাইক্লিং বন্ধ। সল্টলেক-নিউটাউন ছাড়া কলকাতার মোটামুটি ৬২টি রাস্তায় এই নিষেধাজ্ঞা আছে। ট্রাফিক তার একটা বড় কারণ। কিন্তু সারা পৃথিবীর প্রায় কোনও বড় মেট্রোপলিটনেই এই সমস্যা নেই। ভারতের অন্যান্য মেট্রোপলিটন দিল্লি, মুম্বাই ও ব্যাঙ্গালোর এমনকি প্রতিবেশী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেও আলাদা সাইক্লিং লেন তৈরি করে পরিবেশবান্ধব সাইকেল চালানোর উত্সাহ দেওয়া হয়েছে।

আমাদের দেশে এখনও সাইক্লিং সেই ভাবে প্রফেশনাল জায়গায় যায়নি। যাঁরাই এই স্পোর্টসে আছেন বা আসতে আগ্রহী তারা সকলেই একটা প্যাশন বা ভালবাসার জায়গা থেকেই আসেন। মানুষের আগ্রহ ধীরে ধীরে বাড়ছে, অনেকেই নিজেরা উদ্যোগী হয়ে নিজেদের মতো করেই বেরোচ্ছেন। আমি আশাবাদী, হয়ত ভবিষ্যতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

CHANDAN BISWAS CHANDAN BISWAS @knockchandan

Cyclist, who had successfully completed Solo Trans-Himalaya and SAARC Countries Cycling Expedition. Now, all set to cover 37 countries across the Asian subcontinent.

Comment