বঙ্গতনয়া আরশি বন্দ্যোপাধ্যায় কী ভাবে ফরাসি সিনেমায় ঝড় তুললেন
মডেল-অভিনেত্রী ফরাসি সিনেমা 'মায়া'য় নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন
- Total Shares
বছরখানেক আগে আরশি বন্দ্যাপাধ্যায় যখন মডেলিং এজেন্সি ইনেগার কাছ থেকে একটি ফরাসি ছায়াছবিতে অডিশন করবার জন্য সুযোগ পেয়েছিলেন তখন বোধহয় এই উনিশ বছরের বঙ্গতনয়া ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি যে মাত্র এক বছরের মধ্যে টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবে তাঁর জন্যে লাল কার্পেট বিছানোর ব্যবস্থা থাকবে। ফরাসি চিত্র নির্মাতা মিয়া হ্যানসেন লভের রোমান্টিক সিনেমা 'মায়া'-র নামভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি। টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবে এই সিনেমাটির প্রিমিয়ার হবে।
অভিনেতা-পরিচালক নন্দিনী শ্রীকেন্তের উপর একজন ১৬ থেকে ১৮ বছরের ভারতীয় মহিলাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব বর্তেছিল এই সিনেমার নামভূমিকায় অভিনয় করাবার জন্য, পর্দায় যিনি একজন গোয়ার মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করবেন এবং বছর তিরিশের এক ফরাসি যুবকের প্রেমে পড়বেন। আরশির স্মৃতিতে সেদিনের কথা আজও অটুট, যেদিন শ্রীকান্ত তাঁকে ফোন করে জানিয়েছিলেন যে প্রায় শ'দুয়েক অডিশন টেপ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার পর হ্যানসেন লভ শুধুমাত্র তাঁর সঙ্গেই কথা বলতে রাজি হয়েছেন। সেদিনের কথা রোমন্থন করতে গিয়ে আরশি জানালেন, "এই ফোন আসার পরে আমি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। যথেষ্ট নার্ভাসও ছিলাম।" আরশির এই উদ্বেগের পিছনে কারণও ছিল। তখনও পর্যন্ত তিনি শুধু ফরাসি চিত্র নির্মাতার নাম শুনেছিলেন। কিন্তু তাঁর তৈরি সিনেমা আরশির দেখা হয়নি। ফোন রেখে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আরশি বিখ্যাত চিত্র নির্মাতার সিনেমা দেখতে শুরু করে দেন। অচিরেই 'থিংস টু কাম' ও 'মাই ফার্স্ট লাভ' আরশির প্রিয় সিনেমা হয়ে ওঠে।
উনিশ বছরের বঙ্গতনয়া আরশি বন্দ্যোপাধ্যায় এখন ফরাসি সিনেমায় [ছবি: মেল টুডে]
অভিনেত্রী তথা টেক্সটাইল ডিজাইনার রাতুলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা আরশি মুম্বাইয়ের রায়ান গ্লোবাল স্কুলের স্নাতক। উচ্চতার জন্যে স্কুল নাটকে তাঁর জন্য সব সময় বয়স্কদের চরিত্র বরাদ্দ থাকত। আরশি নিজে জানাচ্ছেন, "ক্লাসে সব চেয়ে লম্বা ছিলাম আমি। তাই স্কুল নাটকে শিক্ষিকা বা দিদিমার চরিত্র আমার জন্যে বরাদ্দ থাকত।"
আরশি জানাচ্ছেন যে ছোটবেলার থেকে তিনি কসমেটিক সার্জেন্ট হতে চাইতেন। কিন্তু সেই বয়স থেকে তিনি যে সিনেমারও প্রেমে পড়েছিলেন তা তাঁর ঘরের দেওয়ালে লাগানো পোস্টারগুলো থেকে পরিষ্কার। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই মডেল হয়ে ওঠার জন্যে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।
আরশি জানাচ্ছেন, তাঁকে পছন্দ করবার পর হ্যানসেন লভের কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন যে আরশি যেন এর পর থেকে কোনও ওয়ার্কশপ বা কোনও কোর্সে যোগদান না করেন। যতটা সম্ভব নিজের মতো স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেন। এর ফাঁকেই অবশ্য কোঙ্কনি ভাষা রপ্ত করতে হয়ে ছিল আরশিকে। এর দুইয়ের ফলে আরশি মায়া চরিত্রটির খুব কাছের হয়ে ওঠে। আরশির কথায়, "এই মায়া খুব মজা করতে পছন্দ করে। একই সঙ্গে একটু লাজুক প্রকৃতিরও। এক পারিবারিক ফরাসি বন্ধুর প্রেমে পড়ে যায় মায়া।" রোমান কোলিঙ্গা এই ফরাসি যুবকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
ঘনিষ্ট দৃশ্যের কথা বলতে গিয়ে আরশি ও তাঁর মা দুজনেই চিত্র নির্মাতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আরশি জানাচ্ছেন, "কোনও কিছু করবার জন্যে আমার উপর জোর করা হয়নি। অন্তরঙ্গ মুহূর্ত শুটিংয়ের সময় আমি যতটা করতে স্বচ্ছন্দ ঠিক ততটাই আমাকে দিয়ে করিয়েছে।" দিনে মাত্র সাত থেকে আট ঘণ্টা করে শুটিং হয়েছে তার উপর শনি ও রবিবার ছুটি আর ইউনিটের প্রতিটি বিভাগের মাথায় একজন করে মহিলা - এই বিষয়গুলো নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহিত মা ও মেয়ে।
আরশি মনে করেন এই ধরনের কর্মসংস্কৃতি মেনে কোনও বলিউড সিনেমার শুটিং যদি হয়, তাকে বিলাসিতা হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। তবে যশ রাজের মতো চিত্র পরিচালকদের সঙ্গে বলিউড সিনেমায় কাজ করতে আপত্তি নেই আরশির। আপাতত তিনি অবশ্য টরোন্টো নিয়েই ভাবতে চান। আরশি বলছেন, "সিনেমা জগতের প্রচুর বড় বড় নাম টরোন্টোয় উপস্থিত থাকবেন। আশাকরি তাঁদের সঙ্গে আমার পরিচয় করে নেওয়ার সৌভাগ্য হবে।"
(সৌজন্যে: মেল টুডে)
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে