ইস্তেহারে স্কুল শিক্ষাব্যবস্থা সম্প্রসারণের কথা উল্লেখ করা উচিত রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর

শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপির মানসিকতায় কোনও প্রভেদ নেই, তাই ভরসা গান্ধী পরিবারের উপর

 |  5-minute read |   20-03-2019
  • Total Shares

আর মাসখানেকের মধ্যেই দেশের ১৭তম লোকসভার সদস্যদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। জুনের প্রথম সপ্তাহতেই কেন্দ্রে এক নতুন সরকারের আবির্ভাব ঘটবে। খুব শীঘ্রই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করা শুরু করে দেবে, যেখানে চাঁদ পাইয়ে দেওয়ার মতো প্রতিশ্রুতি থাকাটাই স্বাভাবিক। 

body_032019033149.jpgশীঘ্রই রাজনৈতিক দলগুলো ইস্তেহার প্রকাশ করবে,কিন্তু সেখানে শিক্ষা ব্যবস্থার কথা উল্কলেখ থাকবে না [ছবি: রয়টার্স]

যে ইস্যুগুলো এই নির্বাচনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে সেগুলো হল - কৃষি সমস্যা, বেকারত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা ও রাফাল চুক্তির মতো আলোচ্য কেলেঙ্কারিগুলো। কিন্তু একটি বিষয় নিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলই খুব একটা চিন্তিত নয় - দেশের স্কুলগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা।

নির্বাচনী ইস্তেহারে কোনও রাজনৈতিক দলই স্কুলগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা সংস্করণের কথা উল্লেখ করে না।

আমার মতে, এই ইস্যুটিকেই জরুরি ভিত্তিতে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

দুর্ভাগ্যবশত, দেশ স্বাধীন হওয়ার একাত্তর বছর পরেও, কোনও সরকারই দেশজুড়ে একক শিক্ষক ব্যবস্থা (ইউএসই) প্রচলনের কথা বলেনি।

ভারতের প্রেক্ষাপটে এই ইউএসই-র মানে কী?

এই প্রকল্পের মাধ্যমে গোটা দেশের সমস্ত স্কুল পড়ুয়ারাই 'একই ভাষায় ও একই বিষয়গুলো' নিয়ে পড়াশুনার সুযোগ পাবে।

অর্থাৎ, যে ভাষায় পড়াশুনা করলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে সুযোগ পাওয়া যাবে শুধুমাত্র সেই ভাষাতেই দেশের সমস্ত পড়ুয়ারা প্রাথমিক স্তর থেকে পড়াশুনা করবে। আর, এ ক্ষেত্রে, ইংরেজি ভাষাকেই আমাদের মেনে নিতে হবে, ভারত ও বিদেশে এই ভাষাটির গ্রহনযোগ্যতার কথা ভেবে।

গরিব বড়লোক নির্বিশেষে কেউ যদি দেশের সমস্ত বাচ্চাদের ইংরেজি শিক্ষার বিরোধিতা করেন তাহলে তিনি বাচ্চাদের নৈতিক অধিকার খর্ব করতে চাইছে। বর্তমান, ইংরেজি শিক্ষা শুধুমাত্র দেশের বড়লোকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। অনেকটা যেমন, সংস্কৃতি-মাধ্যমের গুরুকুলগুলো শুধুমাত্র একটি বর্ণের ছাত্রদের শিক্ষাগ্রহণের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল।

স্কুল শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ুয়াদের যে দুটি ভাষায় শিক্ষা দেওয়া উচিত -  সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

কিছু রাজ্যের পড়ুয়াদের তিনটি ভাষাতে শিক্ষাগ্রহণ করতে হয়। এর ফলে, পড়ুয়াদের উপর চাপ বৃদ্ধি হয়। তাদের রাজ্যে যে ভাষায় কথা বলা হয়ে থাকে সেই ভাষা কি তাদের শেখা উচিত, নাকি তাদের বেশি করে হিন্দি ও ইংরেজি শেখা উচিত। হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলোর বাচ্চারা সেদিক থেকে ভাগ্যবান। তারা শুধুই হিন্দি ও ইংরেজিতে শিক্ষালাভ করে থাকে।

প্রতিটি রাজ্যের ভাষাকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং স্নাতক স্তর অবধি সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজগুলোতে সেই ভাষায় শিক্ষা দেওয়া উচিত।

আর, হ্যাঁ, ইংরেজিতে শিক্ষাদান তো সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

'দুই পায়ে হাঁটার' (ইংরেজির সঙ্গে কোনও একটি আঞ্চলিক ভাষা) এই শিক্ষাব্যবস্থা গোটা দেশ জুড়ে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া উচিত।

পড়ুয়াদের শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কেও শিক্ষা দেওয়া উচিত। আমাদের সমাজের পক্ষপাতমূলক আচরণ শ্রমিকদের নিচু চোখে দেখতে শেখায়। শ্রমিক-বিরোধী সাইকোলজি জাতীয়তাবাদ বিরোধিতার মূল কারণ। কিন্তু শ্রমিকদের মর্যাদা দেওয়ার শিক্ষা পেলেই একজন দেশদ্রোহীকে জাতীয়তাবাদী করে তোলা সম্ভব।

body1_032019033450.jpgশিক্ষাব্যবস্থায় গরিব বড়লোক বৈষম্যতা ঘোচাতে সকল পড়ুয়ার ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা করা উচিত [ছবি: রয়টার্স]

আমাদের দেশের বাচ্চাদের জানা উচিত যে জাতীয়তাবাদ মানে দেশের উৎপাদনী প্রক্রিয়াকে সম্মান জানানো। জাতীয়তাবাদ মানে শুধুমাত্র একটি ধর্মকে সম্মান জানানো কিংবা 'দেশের শত্রুদের' মোকাবিলা করতে যাওয়া নয়।

স্কুল পর্যায় থেকেই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যদি সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে তাহলে দেশের ধর্ম ও লিঙ্গ বৈষম্যে সমস্যারও সমাধান হবে।

আমার মতে, দেশের প্রতিটি স্কুলগুলোতে পড়ুয়াদের এই প্রার্থনাটা শেখানো উচিত:

God, you created all of us equal,

God, you created male and female equal,

God, you created no caste among us,

God, you allowed no untouchability among us,

God, you created all of us equal,

God, you told us to work and live,

God, you told us to respect our parents,

God, we pray to you as proud Indians,

God, you created all Indians equal.

(আমার রচিত ফ্রম অ্যান শেপার্ড বয় তো অ্যান ইন্টেলেকচুয়াল: মাই মেমোয়ার্স থেকে সংগৃহিত)

শহরাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা ও গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেকার পার্থক্যগুলো কমিয়ে দিতে পারলে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার প্রচুর সমস্যার সমাধান ঘটবে।

body2_032019033857.jpgদেশের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে [ছবি: রয়টার্স]

আমাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ভিত্তি কিন্তু আমাদের স্কুল শিক্ষাব্যবস্থা। আর, এই স্কুল শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক রদবদল করতে হলে অন্তত একটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলকে তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

এখানে, বিজেপি ও কংগ্রেস দুটি দলই স্কুল শিক্ষাকে একই চোখে দেখছে। স্কুলে কতটা ধর্মীয় বা ধর্ম সংক্রান্ত শিক্ষা দেওয়া হবে, তারা শুধুমাত্র সেই বিষয়টি নিয়েই চিন্তিত। কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থার বর্ণ বিভাজন নিয়ে তারা চিন্তিত নন। গরিবদের যে ইংরেজি শিক্ষাগ্রহণের কোনও অধিকার নেই, সেই বিষয়টি নিয়ে দুটি দলই মাথা ঘামায় না।

সংবিধানে যে সমতার কথা উল্লেখ রয়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কিন্তু সেই 'সমতার' বিরোধী।

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন কংগ্রেসের আমলে হয়েছে। আর, এই শিক্ষাব্যবস্থায় সামান্য যে কয়েকটি ভালো গুন রয়েছে সেগুলোও মুছে ফেলতে চাইছে বিজেপি। আমার মতে, তারা চায় না শুধুমাত্র একটি শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন হোক। বিজেপি চায়, শিক্ষাব্যবস্থাটাকে হিন্দুত্ব-মুখী করে তুলতে।

বিজেপি যে ভাবে হিন্দি ও ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করে তা কিন্তু কোনও  ধরণের উন্নয়নের পরিপূরক নয়।

কংগ্রেস যদি তাদের জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে চায় তাহলে তাদের দেশের স্কুলগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে হবে।

গোটা দেশ জুড়ে যদি শুধুমাত্র একটি শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন ঘটানো যায় তাহলে দেশ থেকে বৈষম্যতা লোপ পাবে।

যারা ভোট দিতে যাচ্ছেন তাদেরও এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। কারণ, এই ইস্যুটি কিন্তু তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ছাত্রাবস্থায় ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা করেছেন। তাঁর যদি তাঁদের ইস্তেহারে শিক্ষাব্যবস্থা সম্প্রসারণের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন তাহলে দেশে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও যারপরনাই উপকৃত হবে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

KANCHA ILAIAH SHEPHERD KANCHA ILAIAH SHEPHERD

The author is political theorist and social activist.

Comment