হু-র সমীক্ষায় শ্রীনগর বিশ্বের দশম দূষিত শহর, সত্যিই কি তাই?

এখনও প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক শ্রীনগর-সহ কাশ্মীরের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে যান

 |  3-minute read |   08-05-2018
  • Total Shares

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) বিশ্বব্যাপী শহরকেন্দ্রিক বায়ুদূষণ সম্পর্কিত সমীক্ষায় শ্রীনগর বিশ্বের দশম দূষিত শহর। এই ঘোষণার পর কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শ্রীনগরবাসীরা, যারপরনাই বিরক্ত হয়েছেন।

২০১৬ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী ( যা ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়) বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ভারতের ১৪টি শহর রয়েছে। এই শহরগুলোর মধ্যে শ্রীনগর দশম স্থানে, যে শহরে প্রতি ঘন মিটারে ১১৩ মাইক্রোগ্রাম ধূলিকণা (যে ধূলিকণার ব্যাস ২.৫ মাইক্রন) রয়েছে। হু ১০৮টি দেশের ৪,৩০০টি শহরে এই সমীক্ষা চালিয়েছিল। গত সপ্তাহে এই সমীক্ষা প্রকাশিত হওয়ার পরেই এই সমীক্ষা শ্রীনগর ও সমগ্র কাশ্মীর উপত্যকার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়া ঝড় বইয়েছে, সংবাদমাধ্যম ফলাও করে এই সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করছে, এফএম চ্যানেলগুলোতে জোর বিতর্ক চলছে।

জম্মু-কাশ্মীর সরকার অবশ্য হু-র দাবি নস্যাৎ করেছে। রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আঞ্চলিক অধিকর্তা সায়েদ নাদিম হুসেন জানিয়েছেন যে সরকারের তরফ থেকে হু-কে কোনও তথ্যই প্রদান করা হয়নি যা দিয়ে হু এই উপসংহার টানতে পারে।

শ্রীনগরবাসীরা যখন সরকারের বক্তব্য নিয়ে আলোচনায় মুখর, তখন রাজ্যের এক দৈনিক গ্রেটার কাশ্মীর এই বিতর্ককে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞানীকে উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রটি একটি খবর প্রকাশ করেছে, যেখানে সেই বিজ্ঞানী হু-র সমীক্ষার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথিবী বিজ্ঞান দপ্তররের প্রধান অধ্যাপক শাকিল রামসু জানিয়েছেন যে হুয়ের সমীক্ষাতে কোনও ভুল নেই। তাঁর দাবি তাঁদের দপ্তরের কাছ থেকেই তথ্য সংগ্রহ করে হু এই সমীক্ষাটি সম্পন্ন করেছে। এ ছাড়াও কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় ও পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটেরিওলজির যৌথ দল একটি সমীক্ষা চালিয়ে জানিয়েছিল যে শীতকালে শ্রীনগরের বায়ুদূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পায়, যদিও শীতকালের শ্রীনগরের শোভা পৃথিবী বিখ্যাত।

dus_050718041646_050818054853.jpgভূস্বর্গ কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর

এই সমীক্ষায় বলা হয়েছে "নির্দিষ্ট কিছু দিনে শ্রীনগরের বায়ুদূষণ দিল্লির চেয়েও খারাপ ছিল'। শ্রীনগরবাসীরা মেনে নিচ্ছেন যে যে তাঁদের শহর বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর শহর নয়। কিন্তু তাই বলে এই শহরকে বিশ্বের দশম দূষিত শহরের তকমা দেওয়াও ঠিক নয়।

শ্রীনগর জুড়েই বেশ কয়েকটি অসম্পূর্ণ ও নির্মীয়মান ফ্লাইওভার প্রকল্প রয়েছে, যা জম্মু কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানীর নির্মল পরিবেশের বিরুদ্ধে গেছে।

রাজধানীর বড় বড় ক্রসিংগুলোতে বড় রাস্তা ধরে খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছে। কিন্তু উপত্যকায় অশান্তির জন্য এই কাজগুলো সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। রাস্তার মধ্যিখানে বড় বড় স্তম্ভ তৈরি করে ফ্লাইওভার তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু কাজ শেষ হচ্ছে না বলে শহরের বড় বড় রাস্তাগুলো ধুলোময় হয়ে থাকছে এই প্রকল্পগুলোর জন্য অনেক বড় রাস্তায় যান চলাচল নিষিদ্ধও করা হয়েছে। যার ফলে ছোট ছোট রাস্তাগুলো ট্র্যাফিক জ্যামে জর্জরিত।

কিন্তু শ্রীনগরকে পৃথিবীর অন্যতম দূষিত শহর বলা যাবে না। সারা বছর ধরেই শ্রীনগরের আবহাওয়া বেশ তরতাজা থাকে। গ্রীষ্মকালে মাঝে মাঝে গরম পড়লেও বৃষ্টি পড়লেই আবহাওয়া আবার স্বস্তিদায়ক হয়ে যায়।

পরিকাঠামো দিক দিয়ে মানুষের ভুলের জন্য শ্রীনগরে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রাকৃতিক খালগুলোর মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, ভারী বর্ষণের সময় যা দিয়ে বয়ে বৃষ্টির জল ঝিলম নদীতে গিয়ে পড়ত। এখনও কয়েকটি খাল দিয়ে বৃষ্টির জল ডাল লেক, নাইজিন লেক ও ঝিলাম নদীতে গিয়ে পড়ে।

কিন্তু মুখ বন্ধ হওয়ার পরে পরিমাণ অনেকটাই কমে গিয়েছে।

এত সব কিছুর পরেও শ্রীনগরের সৌন্দর্য্য কিন্তু অনবদ্য। ডাল লেকের গা ঘেঁষে ছবির মত সুন্দর রাস্তাটা, লাল চকের ঘণ্টাঘর, হাউসবোট ও শিকারা বা রাজধানী শহর থেকে সোনমার্গ, গুলমার্গ, পহেললগাম বা দুধপথরি যাওয়ার যাত্রাপথগুলো উপভোগ করতে এখনও প্রতি বছর শ্রীনগরে লক্ষ লক্ষ লোকের আগমন ঘটে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

AFFAN YESVI AFFAN YESVI @afanyesvi

The writer is a young social activist from Jammu and Kashmir.

Comment