এই বিশ্বকাপের তারকা কোস্তা রিকার আকোস্তা খেলবেন ইস্টবেঙ্গলে
৪ বছর বাদে আবার আমরা অন্য দেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে গলা ফাটাব
- Total Shares
১৫ জুলাই রাশিয়ার মাটিতে এ বারের ফুটবল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কে হবে, তা নিশ্চত হয়ে যাবে। ঠিক তার ১৫ দিন পর ভারতীয় ফুটবল মক্কা কলকাতা পেতে চলেছে কারেন্ট এক বিশ্বকাপ ফুটবলারকে। অগস্ট ২০১৮ থেকে মে ২০১৯ পর্যন্ত, কোস্তা রিকার হয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা ডিফেন্ডার-- জনি আকোস্তা জামোরাকে পাচ্ছে লাল-হলুদ ব্রিগেড। কোয়েস ইস্টবেঙ্গল এফসি চুক্তি চূড়ান্ত করে নিল আকোস্তার সঙ্গে। ভারতীয় ফুটবলে হয়তো এখনও পর্যন্ত এটাই সেরা বিদেশি ফুটবলার আনার চুক্তি। বিশ্বকাপে খেলেই এক মাসের মধ্যেই ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে চুক্তিবদ্ধ এক বিশ্বকাপার!!
আকোস্তার বয়স এখন ৩৬। তাতে কী? সেদিনই তো টিভি'র পর্দায় দেখেছিলাম, ব্রাজিল দলকে কি কঠিন চ্যালেঞ্জটাই না ছুড়ে দিয়েছিলেন কোস্তার আকোস্তারা! শেষ মুহূর্তে গোল করে জেতে ব্রাজিল। কিন্তু তারকা নেইমারদের কোস্তা রক্ষণে নড়তে-চড়তে দেয়নি সেদিন আকোস্তারা। এমন একজন - এবার ভারতীয় ফুটবলে পা রাখতে চলেছেন।
উইকিপিডিয়া ঘেঁটে আরও যা যা তথ্য মিলল, তাও নজর কাড়া। কে এই আকোস্তা? উইকি জানাচ্ছে, দেশের হয়ে এই ফুটবলারের অভিষেক ২০১১ সালে। মার্চ মাসে আর্জেন্তিনার বিপক্ষে এক আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে। সে বারই বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার পর্বের ৭টি ম্যাচ খেলেন তিনি। সে বারই ছিল কনকাকাফ গোল্ড কাপ। তাতেও কোস্তা রিকা দলে ছিলেন। সেইবার তিনি দেশের হয়ে খেলেন কোপা আমেরিকাতেও। লাতিন আমেরিকার ফুটবলের ধাঁচ জানা এক ফুটবলার হলেন আকোস্তা।
দেশের হয়ে প্রথম গোলটাও আকোস্তা করেছিলেন ২০১৪ বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং ম্যাচে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে কোস্তা রিকা দলেও জায়গা করে নেন। রাউন্ড ১৬ তে গ্রিসের বিপক্ষে তাঁকে পরিবর্ত হয়ে মাঠে নামান কোচ। দল কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন তাঁর সতীর্থ অস্কার দুয়ার্তে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ায়। আকোস্তাকে তখনই নামানো হয়।
এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে তাঁকে প্রথম একাদশে রেখে দল সাজান কোচ। প্রতিপক্ষ - নেদারল্যান্ডস। দলকে ভরসা জুগিয়েছিলেন যথাসাধ্য। ম্যাচের ফয়সালা হয় টাইব্রেকারে। নিজে সঠিক নিশানায় বল পাঠালেও, দল শেষমেশ হারে ৩-৪ গোলে। ২০১৮ তেও বিশ্বকাপে খেললেন আকোস্তা। ৩৬ বছর বয়সে এ সব শক্ত চ্যালেঞ্জ নিতে তিনি পিছপা নন।
ভারত তথা কলকাতা ফুটবলে অবশ্য এর আগেও আরও একজন কোস্তা রিকা ফুটবলার খেলেছেন। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের মতো বড় ক্লাবে নয়। ২০১২-১৩ তে ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাব এনেছিল কার্লোস হেনদ্রিচকে। ওই ক্লাবের কর্তা নবাব ভট্টাচার্য বলছিলেন সেই কোস্তা রিকা কার্লোসের কথা। "র্যান্টি মার্টিন্সকে বল বাড়াবে এমন বিদেশি ফুটবলার খুঁজছিলাম। অস্টেলিয়ার মেলবোর্ন ভিকট্রি ক্লাব থেকে নিয়েছিলাম ওকে। ওখানকার এ লিগে টানা ৩ বছর খেলছিল। পরে জেনেছিলাম, জাতীয় দলের হয়ে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে গোল করেছিল। বিশ্বকাপে খেলা দেখে কিন্তু আমরা নিয়নি।"
এখনও পর্যন্ত এটাই সেরা বিদেশি ফুটবলার আনার চুক্তি
বোঝাই যাচ্ছে, আকোস্তা ভারতীয় ফুটবলে এক চমক।
কিন্তু ৩৬ বছর বয়সী টাটকা বিশ্বকাপার কলকাতার ক্লাব ফুটবলে কেন? প্রচুর অর্থের চুক্তি? তাহলে ইউবি গিয়ে, এখন কোয়েসের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে লাভই হয়েছে লাল-হলুদ ব্রিগেডের। ক্লাব কার দখলে থাকবে— মোহনবাগান যখন সেই ঢিল ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত, তখন ইস্ট বেঙ্গল "ডবল মাস্টার স্ট্রোক" দিয়ে পরের মরসুমের দৌড়ে এগিয়ে রইল।
কিন্তু আকোস্তা কলকাতা লিগে খেলবেন!! জাতীয় লিগে? মনে তো হয় না। ইস্টবেঙ্গলের এই বিশ্বকাপারকে দলে নেওয়া খুবই ইঙ্গিতবহ। লাল-হলুদ কর্তারা কোয়েসের একসঙ্গে পা ফেলার মঞ্চেই ঘোষণা করেছিলেন, এবার ক্লাব আইএসএলের বিড পেপার তুলবে। আকোস্তা, আমার বিশ্বাস, আইএসএলের জন্যই আসছেন। চুক্তির সময়সীমা আগস্ট থেকে মে।
গত মরসুমে ম্যাড়মেড়ে আইএসএল মনে হচ্ছে এ বার আই লিগের সমান্তরাল চললেও, ইস্ট বেঙ্গলের মতো সমর্থকপুষ্ট দলকে টেনে নিলে আকর্ষণ অনেকগুণে বাড়বে।
বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে কোস্তা রক্ষণে নড়তে-চড়তে দেয়নি আকোস্তারা
কিন্তু কী লাভ ভারতীয় ফুটবলের? বিচিত্র নিয়মের জাঁতাকলে এশিয়ান গেমসেই তো খেলার ছাড়পত্র দেয় না দেশের অলিম্পিক সংস্থা। অথচ ২০২৬ বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলার স্বপ্নে মশগুল আমরা!! কারেন্ট বিশ্বকাপারের সঙ্গে গা ঘষতে নামছি, অথচ কর্তাদের ভাবনা চিন্তায় বিস্তর ফারাক। রাজনীতির দাঁড়িপাল্লায় সারাক্ষণ মাপজোক চলছে। এ এক বিচিত্র ভাবনার ভারত!! তাতে কী যায় আসে! ৪ বছর বাদে আবার আমরা আমাদের স্বপ্নের সওদাগরদের ব্যানার-ফেস্টুন ঝুলিয়ে, অন্য দেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে গলা ফাটাব – বিশ্বকাপ জেতানোর জন্য। আর আকোস্তারা আসবে, অর্থ নেবে- বিস্ময়ে আমাদের দেখে দয়া পরবশ হয়ে হাসবে।
তবে হ্যাঁ, ঘটি-বাঙালের ফুটবল তো রইল, সেই লড়াইতেই তো আমাদের প্রতি বছরের "বিশ্বকাপ"। আজ "চক্ দে ইস্ট বেঙ্গল" তো, কাল "চক্ দে মোহনবাগান"। এই বেশ ভালো আছি। ছিলাম। থাকবও!!!