ভারত বনাম ইংল্যান্ড: আমাদের কেন বিরাট কোহলির মতো করে হারতে শেখা উচিৎ
সাংবাদিক সম্মেলনে ভারত অধিনায়কের ভাষা শুনে মনে হচ্ছে তাঁকে ঔদ্ধত্য গ্রাস করেছে
- Total Shares
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪-১ এ সিরিজ হার সহ্য করা যায় না। কিন্তু বিরাট কোহলি মনে করেন যে এই দলটাই শেষ ১৫-২০ বছরের সেরা ভারতীয় দলগুলোর মধ্যে সেরা।
আপনি যদি একমত না হতে পারেন, হবেন না।
ক্যাপ্টেন কোহলির তাতে কিছু যায় আসে না।
Is the best Indian side in the last 15 years? #ENGvIND pic.twitter.com/0Yj3kHk7Yy
— cricketnext (@cricketnext) September 11, 2018
একটা বিষয় আপনি সর্বদাই নিচিত থাকতে পারেন। বিদেশের মাঠে ভারতীয় দল গো-হারান হারলেই কোহলি তাঁর যাবতীয় রাগ, ক্ষোভ ও হতাশা সংবাদমাধ্যমের উপর উগরে দেবেন। ইংল্যান্ডে সিরিজ হারের পরও এর অন্যথা হয়নি।
যে ভাষায় ম্যাচ শেষের সাংবাদিক সম্মেলনে কোহলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন তার থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার -ঔদ্ধত্য থাকলেই ক্রিকেট জগতে প্রবেশ করার অধিকার আপনার রয়েছে, নচেৎ নেই।
কোহলি যখন দাবি করছেন যে গত ১৫ বছরের ভারতীয় দলগুলোর মধ্যে তাঁর দলটাই সর্বশ্রেষ্ট, (ভারত ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জিতলেও দাবি মেনে নিতে হচ্ছেই। কারণ বসেরা সর্বদাই ঠিক কথা বলেন) তখন দেখে নেওয়া যাক কোহলির এহেন দাবির সূত্রটা ঠিক কোথায়।
এই কথাটা সর্বপ্রথম শোনা যায় দলের কোচ রবি শাস্ত্রীর গলায়। এখানে উল্লেখ্য, শাস্ত্রীর আর জাতীয় দলের কোচ থাকা উচিৎ কিনা তা নিয়েই ইতিমধ্যে প্রচুর প্রশ্ন উঠেছে।
তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক যে নিজের গদি বাঁচাতে শাস্ত্রী এই মন্তব্যটি করেননি।
এবার আসুন শাস্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে একটু কাটাছেড়া করা যাক।
শাস্ত্রী বিশ্বাস করেন যে গত ১৫-২০ বছরের ভারতীয় দলগুলোর থেকে বর্তমান ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা বিদেশ সফরে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য।সিরিজের চতুর্থ টেস্ট হেরে সিরিজ খোয়াবার ঠিক পরেই শাস্ত্রী এই মন্তব্যটি করেন।
ক্যাপটেন, আপনি এত ক্রুদ্ধ কেন? [ছবি: রয়টার্স]
সেদিন তিনি বলেছিলেন, "আমাদের ছেলেরা কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে। ইংল্যান্ড ভালো ক্রিকেট খেলেছে। কিন্তু তাই বলে আমাদের ছেলেদের খাটো করে দেখার কোনো মানে হয় না। বিদেশের মাঠে তারা স্বাচ্ছন্দ্য, সেয়ানে সেয়ানে লড়তে পারে এবং জিততেও পারে। শেষ তিন বছরের (যখন থেকে কোহলি অধিনায়ক হয়েছেন) পরিসংখ্যান দেখুন আমরা বিদেশে ন'টি ম্যাচ জিতেছি। এর মধ্যে তিনটি সিরিজ জয় (একটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দুবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে) রয়েছে আমাদের। গত ১৫-২০ বছরে আর কোনও ভারতীয় দল এত কম সময়ের মধ্যে এত ভালো পারফর্ম করতে পারেনি। এই দলের বেশ কিছু অপরিহার্য ক্রিকেটার রয়েছে।"
শাস্ত্রী বলেছেন যে গত তিন বছরে ভারত বিদেশের মাটিতে তিনটে সিরিজ সহ ন'টি টেস্টে জয় পেয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, এর মধ্যে দুটি সিরিজ শ্রীলঙ্কার (২০১৫ ও ২০১৭) বিরুদ্ধে ছিল এবং একটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। এ গুলো ছাড়া ভারত ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খেলেছে।
খেলোয়াড়রা যেন নিজেদের খেলার উর্দ্ধে ভেবে না বসে, কোচের উচিৎ সেদিকে নজর রাখা [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
২০১৮ সালে ভারত সাতটি টেস্ট খেলে মাত্র দুটি টেস্ট জিততে পেরেছে - একটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জানুয়ারী মাসে, অন্যটি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ট্রেন্টব্রিজে। দুটি সিরিজই ভারত জিততে পারেনি।
ইংল্যান্ড সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট হয়ে ছিল লর্ডসে। সেখানে ইংল্যান্ড ১৫৯ রান ও এক ইনিংসে হেরে ছিল।
ঔদ্ধত্য ভুলে যান, এর জন্য সামান্য গর্ববোধ করারও তো কিছু নেই।
দল ভেঙে পড়লে কোচের উচিৎ সেই দলকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করে তোলা। কিন্তু খেলোয়াড়রা যাতে বাস্তব থেকে দূরে সরে না যায় সে দিকেও নজর দেওয়া উচিৎ কোচের। একজন প্রকৃত কোচ সর্বদাই খেলোয়াড়দের বোঝাবেন যে কোনও খেলোয়াড়ই খেলার থেকে বড় নয় - তা সে দলের সাধারণ সদস্যই বা অধিনায়ক যেই হোক না কেন।
ব্যাট হাতে নিজেকে প্রমান করেছেন, এবার নেতা হিসেবেও প্রমান করতে হবে [ছবি: পিটিআই]
সিরিজে কোহলির প্রচুর সিদ্ধান্ত নিয়েই সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু এই ভুলগুলো থেকেই তো শিক্ষা নিতে হবে। কিন্তু তাই বলে মাঠে নিজে যে ভুলগুলো করেছেন তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে অসম্মান বা একজন ক্রিকেট প্রেমিকে আঘাত করাটা ঠিক নয়।
অন্য খেলাগুলোতে সাফল্য কম বলে আমাদের দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে ক্রিকেট মানে 'অনেক কিছু'। এর জন্যেই, কোহলিদের উপর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার চাপ বাড়তে বাধ্য।
কোহলি অনবদ্য ব্যাটসম্যান। কিন্তু তাঁর ঔধত্যের ছায়ায় সেই প্রতিভা তো ঢেকে যাচ্ছে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে