গাভাস্কার, সচিন, সৌরভ, রাহুল, লক্ষ্মণ, বিরাটরা অন্য গোত্রের, যেখানে কোনও তুলনা চলে না
এই মহারথীরা রেকর্ড ভাঙবেন রেকর্ড গড়বেন, আমরা সেই মহাকাব্যের সাক্ষী থাকব
- Total Shares
এই তো কিছুদিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে দ্বিতীয় দ্রুততম হিসেবে ২৪তম শতরানের মালিক হলেন বিরাট কোহলি। ১২৩টি ইনিংস খেলে ২৪তম শতরান হাঁকালেন তিনি। পরিসংখ্যানে তাঁর আগে রয়েছেন শুধুমাত্র স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান। ডনের ২৪তম শতরানটি এসেছিল ৬৬তম ইনিংসে।
শুধু কী তাই? টেস্ট ক্রিকেটে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ শতরানের রেকর্ডের হাতছানিও এখন ভারত অধিনায়কের সামনে। বিরাটের টেস্ট শতরানের সংখ্যা এখন ২৪ তাঁর সামনে শুধু সচিন তেন্ডুলকর (৫১), রাহুল দ্রাবিড় (৩৬) ও সুনীল গাভাস্কর (৩৪)। বড় ধরণের অঘটন না ঘটলে, এই রেকর্ডটিও একদিন তাঁর পকেটে চলে আসবে।
এখানেই শেষ নয়। এখন ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজের একদিনের সিরিজ শুরু হয়েছে। আর এই সিরিজ শুরুর আগেও তো বিরাটের সামনে একগাদা রেকর্ড ভাঙা গড়ার হাতছানি। বিরাট কোহলি আর ক্রিকেট রেকর্ড - এই দু'জোড়া শব্দ যেন ক্রমশ সমার্থক হয়ে পড়ছে। কিন্তু কেন? কী এমন আছে বিরাটের মধ্যে যে তাঁর সামনেই সব রেকর্ড ভাঙার সুযোগ? বিশ্ব ক্রিকেটে তাবড় ক্রিকেটারদের সংখ্যা তো নেহাতই কম নয়।
তার আগে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক যে চলতি একদিনের সিরিজে কোন কোন রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ভারত অধিনায়ক।
অধিনায়কত্বের চাপ সামলেও দিব্যি রেকর্ড গড়ে চলেছেন তিনি [ছবি: এ এএফপি]
১) ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ১০,০০০ রান করতে কোহালির প্রয়োজন আরও ২২১টি রান। বর্তমানে তাঁর রান সংখ্যা ৯,৭৭৯। ভারতীয়দের মধ্যে তাঁর আগে রয়েছেন সচিন তেন্ডুলকর (১৮,৪২৬ রান), সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (১১,৩৬৩ রান), রাহুল দ্রাবিড় (১০,৮৮৯ রান), মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (১০,১২৩ রান)। দশ হাজার রান সংগ্রহকারী হিসেবে কোহালি হবেন ১৩তম ব্যাটসম্যান।
২) টেস্ট, একদিনের ক্রিকেট ও টি-২০ মিলিয়ে কোহালি করেছেন ১৮,২১২ রান। তাঁর আরও ২৮৫ রান দরকার অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক স্টিভ ওয়াকে টপকাতে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্টিভের মোট রান ১৮,৪৯৬। তবে তা টেস্ট ও একদিনের ক্রিকেট মিলিয়ে কারণ প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক টি-২০ খেলেননি।
৩) ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজ একদিনের সিরিজের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন সচিন তেন্ডুলকর। ৩৯ ম্যাচে সচিনের রান সংখ্যা ১৬৭৩। কোহালি এখনও পর্যন্ত ২৭ ম্যাচে ১৩৮৭ রান করেছেন। সচিনকে টপকাতে আর মাত্র ১৮৭ রান করতে হবে বিরাটকে।
৪) একদিনের ক্রিকেটে এর আগে ছ'জন ভারতীয় ব্যাটসম্যান ৫০টি অর্ধশতরান করেছেন - সচিন, সৌরভ, রাহুল, ধোনি, আজহার ও যুবরাজ। কোহালির এই তালিকায় উঠতে দরকার আর মাত্র দুটো পঞ্চাশ। ২০৩ ইনিংসে ৪৮ অর্ধশতরান করেছেন বিরাট।
বিরাট নিন্দুকেরা হয়ত বলবেন যে সচিন, সৌরভ, রাহুল বা যুবরাজের তুলনায় এখন অনেক বেশি ক্রিকেট হয়। তাই এখনকার ব্যাটসম্যানদের দ্রুত রান করা বা রেকর্ড গড়ার সুযোগটাও বেশি। যেমন সচিন-সৌরভের জমানায় এই ক্যাসেট বাজাতেন তৎকালীন পুরোনোপন্থীরা।
তর্কের খাতিরে যদি কোহলির নিন্দুকদের কথা ঠিক বলে ধরে নেওয়া হয় তাহলে পাল্টা প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। এই জমানার বাকি ক্রিকেটাররা কেন কোহলির সঙ্গে টেক্কা দিতে পারছেন না। বাকিদের ক্ষেত্রে এই রেকর্ড গড়া তো তুলনামূলক সহজ। কারণ তাঁদের একটা বিরাট চাপ সামলাতে হয় না - ভারত অধিনায়ক হওয়ার চাপ। অথচ দেখুন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কের চাপ সামলে দিব্যি রেকর্ড গড়ে চলেছেন বিরাট।
ইংল্যান্ডে গিয়ে টেস্ট সিরিজে জঘন্য খেলেছে ভারত। স্কোরবুকও সেই কথাই জানান দিচ্ছে। যদিও, আমার মতে বিরাটরা ইংল্যান্ডে জঘন্য খেলেনি। একটা সময় তো বিদেশের মাঠে ভারতীয় দলের এ ধরণের পারফর্ম্যান্স দেখতে অভ্যস্ত ছিল আসমুদ্রহিমাচল। সৌরভের ভারত আমাদের বিদেশে জিততে শেখাল। আর, অমনি আমাদের চাহিদা আকাশ ছুঁয়ে ফেলল।
এই গোত্রের কোনও তুলনা চলে না [ছবি:এপি]
এর পর অনেকেই হয়তো বলবেন যে ৪-১ ফলাফলে সিরিজ হার ক্ষমা করা যায় না। তার উপর আবার একটি টেস্টে ইনিংস ডিফিট। কখনোই তা বরদাস্ত করা যায় না। ঠিকই হয়তো বলবেন। বিরাটের ভারত আজহারের ভারত নয়। বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ক্রিকেট দলের এই ভাবে সিরিজ হারাকে আত্মসমর্পণ বলাই ভালো।
কিন্তু এই আত্মসমপর্ণের মধ্যেও তো ঝলসে উঠেছে বিরাটের ব্যাট। ওপেনাররা বলে বলে ব্যর্থ হচ্ছেন আর মিডল অর্ডারে নেমে প্রতিদিন গোটা দেশের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে বিরাটকে। এর পর যদি বিরাট রেকর্ড না ভাঙতে পারে, তাহলে আর কে পারবে?
বহুদিন ধরেই বিরাট সচিনের মধ্যে তুলনা টানা শুরু হয়ে গেছে। এই তুলনা টানার চেষ্টা একেবারেই বৃথা - সে কথা সকলেই জানেন। তাও টানবেন।
সুনীল গাভাস্কার, সচিন, সৌরভ, রাহুল, লক্ষ্মণ, বিরাটরা অন্য গোত্রের খেলোয়াড়। এই গোত্রের সদস্যদের মধ্যে একে অপরের তুলনা চলে না। টিভির পর্দায় চোখ রেখে বা গ্যালারিতে বসে এদের খেলা শুধু উপভোগ করতে হয়।
এরা রেকর্ড ভাঙবেন রেকর্ড গড়বেন। আর আমরা সেই মহাকাব্যের সাক্ষী থাকব।
[সমস্ত পরিসংখ্যান ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম একদিনের ম্যাচের আগে অবধি]