'নতুন' সচিন তেন্ডুলকরকে পেয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট, তিনি বিরাট কোহলি
১০,০০০ রানের গণ্ডি টপকালেন তিনি, ক্রিকেট ভক্তদের প্রত্যাশা এখন আকাশচুম্বী
- Total Shares
২০০৮ সালে মার্চ মাসে পশ্চিম দিল্লির এক অতি সাধারণ পরিবারের তরুন দেশের হয়ে অনুর্দ্ধ ১৯-বিশ্বকাপ খেলতে মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছিল। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১২ রানে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারতের সেই দলটি। ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতি মেনে হওয়া সেই ম্যাচে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল পশ্চিম দিল্লির সেই তরুন ছেলেটি। গোটা ক্রিকেট বিশ্বই সেদিন জেনে গিয়েছিল যে এক ক্রিকেট প্রতিভার উদয় হয়েছে। ভবিষ্যতে যিনি বিষ ক্রিকেটের রঙ্গমঞ্চ কাঁপিয়ে দেবেন।
সেই অনুর্ধ ১৯-বিশ্বকাপে অনবদ্য পারফর্মেন্স ও সেই বছরের আইপিএলে বেশ কয়েকটি অনবদ্য ইনিংস তাঁকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। সেদিনের সেই তরুণ, আজকের বিরাট কোহলি, মাত্র এক বছরের ভারতের প্রতিটি ঘরে ঘরে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিল।
২০০৮ সালের ১৮ অগস্ট শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার মাটিতে একদিনের অভিষেক হয় তাঁর। সেই ইনিংসে মাত্র ১২ রান করেছিলেন তিনি। আর পাঁচটি তরুণ ক্রিকেটারের মতো সেদিন থেকে ভারতীয় দলে নিজের জায়গা পাকা করার কঠিন লড়াই শুরু হয় তাঁর।
এক দশক বাদে চিত্রটা অন্যরকম। ইতিমধ্যেই, ২১৩টি একদিনের ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে তাঁর। একদিনের ক্রিকেটে দ্রুততম ১০,০০০ রানের গণ্ডি পেরোনোর রেকর্ড এখন বিরাট কোহলির পকেটেই।
আজ থেকে ১৭ বছর আগে সচিন তেন্ডুলকর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১০,০০০ একদিনের রানের গণ্ডি টপকে ছিলেন। সচিনের ১০,০০০ রান জেচুল ২৫৯টি ইনিংস খেলে। বিরাটের ১০,০০০ এল ২০৫ নম্বর ইনিংসে। অর্থাৎ, সচিনের থেকে ৫৪টি ইনিংস কম খেলে।
অবসর গ্রহণের পর বিভিন্ন জায়গায় সচিন বলেছিলেন যে তিনি চান তাঁর রেকর্ড যেন কোনো ভারতীয় ব্যাটসম্যানই টপকান। সেদিক থেকে বিরাটের জন্য গর্ববোধ করতেই পারেন সচিন।
বিরাটের এই ভারতীয় ক্রিকেটের শীর্ষে পৌঁছানোর গল্প কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। পঞ্চম ভারতীয় ব্যাটসম্যান ও বিশ্বের তেরোতম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি দশহাজারী ক্লাবের সদস্য হলেন। এর আগে ভারতীয়দের মধ্যে সচিন ছাড়াও, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড় ও এম এস ধোনি এই কীর্তি স্থাপন করেছিলেন।
কোহলির ক্রিকেট জীবন নিয়ে গবেষণা করতে বসলে তাঁর ক্রিকেট জীবনকে দু'ভাগে ভাগ করতে হবে - অধিনায়ক হওয়ার আগে ও অধিনায়ক হওয়া পরে। শুরু থেকেই তিনি প্রতিভাবান। তিনি স্পিন ও পেস দু'ধরনের বোলিংয়ের বিরুদ্ধেই সমান স্বচ্ছন্দ্য। তাঁর রানিং বিটুইন দ্য উইকেট, ফিল্ডিং ও ক্যাচিং দক্ষতাও অসাধারণ।
১০ বছর আগে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একদিনের অভিষেক হয়েছিল বিরাট কোহলির [ছবি: রয়টার্স]
ক্রিকেট ভক্তদের চাহিদা আকাশচুম্বী
তাঁর কেরিয়ারের প্রথম পাঁচ বছরেই তাঁর প্রতিভার ঝলক আমরা দেখে ছিলাম। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ও ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন তিনি। অলরাউন্ড দক্ষতার সৌজন্যে ২০১৩ সালে তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনির সহকারী হিসেবে নির্বাচিত হন।
ব্যাটসম্যান হিসেবে সেই সময় অনবদ্য ছন্দে ছিলেন তিনি। কিন্তু 'ক্রিকেটার' বিরাটের জন্ম তখনও হয়নি। মাঝে মাঝেই ছোটখাট ভুলভ্রান্তি করে ফেলছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের ইংল্যান্ড সফরটা বেশ খারাপ কেটেছিল বিরাটের। সফরে শর্ট বল ও দেরিতে সুইং করা বলগুলো নিয়ে বারংবার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁকে।
কিন্তু কোনও কিছুই টলাতে পারেনি তাঁকে। এক তরুণ ক্রিকেটার থেকে তিনি অকালেই হয়ে উঠলেন দলের নেতা। তাঁর অদম্য জেদ, আত্মত্যাগ ও সাফল্যের খিদের জোরে। তাঁর দুর্বলতাগুলো নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছেন তিনি যাঁর প্রভাব তো আজ সকলেই প্রত্যক্ষ করতে পাচ্ছে।
অধিনায়কের মুকুট পড়ার পর তাঁর খেলার মানও উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। বিরাটের সমসাময়িকরা ওই মানে পৌঁছানোর শুধুমাত্র স্বপ্নই দেখতে পারেন। সত্যি, অধিনায়কের মুকুট কিন্তু তাঁর খেলার প্রভূত উন্নতি ঘটাল।
একেবারে সামনের থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিরাট কোহলি [ছবি: এপি]
চলছে, চলবে চলুক
খুব দ্রুত বিশ্বক্রিকেটের পট পরিবর্তন হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে, বাইশ গজে নতুন নতুন প্রতিভার আবির্ভাব ঘটছে। বিরাট কিন্তু পরিবেশ, পরিস্থিতি, প্রতিদ্বন্ধি ও পিচের অবস্থার নির্বিশেষে রান করেই চলেছেন। ক্রিকেট ভক্তরা তাঁর কাছে যা প্রত্যাশা করে থাকেন তিনি খুব স্বচ্ছন্দ্যেই সেই প্রত্যাশা পূরণ করে থাকেন।
একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেন বিরাট কোহলি। খেলার সময় তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন। অনুশীলনের সময় তাঁর পরিশ্রম কঠোরতম। এই পরিস্থিতিতে সাজঘরে তাঁর মতো একজনের সঙ্গে কাটানো কিন্তু বেশ জটিল হয়ে উঠতে পারে। তাঁর মানে কেউই পৌঁছাতে পারবে না। কিন্তু তাঁকে দেখে একজন অনুপ্রাণিত আবার অন্যজন হীনমন্য হয়ে পড়তে পারেন। সহ খেলোয়াড়রা যদি তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হতে পারেন তাহলে তা ভারতীয় ক্রিকেটের জন্যেই মঙ্গল।
কোহলির বয়স ২৯। কয়েক মাস আগে আর একজন কিংবদন্তি ১০,০০০ রান করলেন। সেই কিংবদন্তির, অর্থাৎ মহেন্দ্র সিং ধোনির, বয়স এখন ৩৮। ২০১৯ সালেই শেষ বিশ্বকাপ খেলবেন ধোনি। সব ঠিকঠাক চললে বিরাট হয়ত ২০২৭ বিশ্বকাপও খেলবেন। কিন্তু কেরিয়ারের শেষ লগ্নে তিনি যে কোথায় গিয়ে থামবেন এই মুহূর্তে তা অনুমান করতে যাওয়াই মূর্খামি।
২০২৭ অবধি তিনি যদি পূর্ন ছন্দে থাকেন তাহলে কোনও একদিনের রেকর্ডই সুরক্ষিত হয়। তিনি সর্বদাই তাঁর লক্ষে অবিচল থাকেন এবং একের পর এক কীর্তি স্থাপনের জন্য মরিয়া হয়ে থাকেন। বিরাট ছন্দে রয়েছে এবং সেই ছন্দ থামার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।
ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে আমাদের অভিযোগ করার কোনও কারণ নেই।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে