সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে সৌরভের লাভ-ক্ষতির অঙ্ক
বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন সৌরভ? সমীকরণটি কী?
- Total Shares
বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে বিসিসিআই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পিডিএফ ফাইলটা হোয়াটসঅ্যাপে পেয়ে গেলাম। ৩৫ পাতা। শুরু থেকে না পড়ে, শেষ থেকে পড়লাম। যা যা বুঝতে পারলাম সেগুলো আগে বলি।
ক্রিকেট বোর্ড এখন চলবে নতুন নিয়মে
১। বয়স ৭০, আর নয়। না বোর্ড না রাজ্য সংস্থায়। এমনকি ক্লাব প্রতিনিধি হয়ে রাজ্য সংস্থাতেও নয়। ২। ন’বছরের কার্যকাল বোর্ড, রাজ্যে কিংবা বোর্ড-রাজ্য মিলিয়ে হলেও , আর কোথাও নয়। ৩। তিন বছরের কুলিং পিরিয়ড রইল। কিন্তু টানা ৬ বছর পর। টানা বোর্ড কিংবা রাজ্য সংস্থায় হতে পারে। আবার বোর্ড-রাজ্য মিলিয়েও হতে পারে। ৪। পাঁচ জন পদাধিকারী হবে বোর্ড আর রাজ্য সংস্থায়। সভাপতি, সহ-সভাপতি, সচিব, যুগ্ম-সচিব, কোষাধ্যক্ষ। ৫। এ ছাড়া পেশাদার সিইও, সিএ ও অভিজ্ঞ আইনবিদ। সব পদের নির্বাচনে থাকতে হবে স্বচ্ছতা। বেচাল বুঝলে, মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করবে। বোর্ড আর রাজ্য সংস্থা—দু’টি ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানতে হবে। ৬। নয়া সংশোধিত সংবিধান বানিয়ে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বার্ষিক সাধারন সভা সেরে ফেলতে হবে। ৭। বার্ষিক সাধারন সভার নির্বাচন সামলাতে নিয়োগ করতে হবে, নির্বাচন কমিশনের প্রাক্তন কোনও প্রতিনিধিকে। তিনি নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করবেন। ভোটার তালিকাও বানিয়ে দেবেন। ৮। কোনও মন্ত্রী এবং আমলা বা কোনও প্রতিনিধির নামে ফৌজদারি মামলা থাকলে, তিনি পদাধিকারী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। ৯। বোর্ড/রাজ্যে ন’জনের (সভাপতি, সহ-সভাপতি, সচিব, যুগ্ম-সচিব, কোষাধ্যক্ষ, সিইও, সিএফ ও, আইনজীবী এবং আরও একজন সদস্য) একটি বিশেষ পরিষদ বা বডি দৈনন্দিন কাজ চালাবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে। কারও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত খাটবে না। ১০। কার্যকরী সমিতি থাকতে পারে নানান আলোচনার জন্য। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনার পরই ৯ জনের বিশেষ কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। ১১। ৫ জনের জাতীয় নির্বাচন কমিটিই ফিরছে। ৭ টি টেস্ট/১০টি একদিনের আন্তর্জাতিক/৩০টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারই এই পদে বসতে পারবেন। ১২। বোর্ড/রাজ্য সংস্থার ওয়েব সাইটে সংবিধান, আয়ব্যয়ের হিসাব-সহ সব তথ্য রাখতে হবে। যাতে তথ্যের অধিকার আইন মেনে তথ্য পাওয়া যায় ওয়েব সাইটে। ১৩। প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন থাকতে হবে।
বোর্ডের প্রেডিডেন্ট হওয়ার কতটা সম্ভাবনা রয়েছে সৌরভের?
সিএবি'র জন্য যা যা হতে পারে: ১। ৭০ বছর বয়সে একঝাঁক দুঁদে কর্তার বিদায় নিশ্চিত। কোনও ক্লাবও সিএবি-তে এই বয়সের প্রতিনিধি পাঠাতে হয়তো আর পারবে না। ২। বোর্ড অব ট্রাস্টি বাতিল হতে পারে, কারণ এই কমিটির কোনও কার্যকারিতা থাকবে না। ৩। ন’বছরের জন্য বাদ যাবেন যাঁরা, তাঁরা ক্লাব প্রতিনিধি হয়ে সিএবি আসতে পারেন। সাব কমিটিতে থাকা নিয়ে সমস্যা হওয়ার ইঙ্গিত নেই। ৪। অভিষেক ডালমিয়া - প্রায় সাড়ে তিন বছর হতে চলেছে। তিনি তাঁর যুগ্মসচিব পদেই আরও তিন বছর থাকতে পারেন। তারপর তিন বছর কুলিং পিরিয়ড পেরিয়ে ফিরলে থাকবেন আর তিন বছর পদাধিকারী পদে। ওঁর ন’বছর হয়ে যাবে। সম্ভাবনা: এবার যুগ্ম সচিব পদ ছেড়ে পরের তিন বছরের জন্য সচিব পদে দাঁড়ানো। তারপর কুলিং পিরিয়ড পেরিয়ে সভাপতি পদে যোগ দেওয়া। তাহলে সিএবিতেই কেটে যাবে। বোর্ডে কোনও পদে বসা হবে না। অন্যথায় কুলিং পিরিয়ডের পর বোর্ড সচিব হতে পারেন। কিন্তু ৭০ বছরের আগে তাঁর আরও বয়স পড়ে থাকবে রাজ্য অথবা দেশের ক্রিকেটে দায়িত্ব সামলানোর। তবে লোধা কমিশন এ ব্যাপারে কোনও প্রস্তাব দেয়নি। ৫। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়: যুগ্ম সচিব ও সভাপতি পদ মিলিয়ে ৪ বছর হয়ে গেছে। কুলিং পিরিয়ডে যাওয়ার আগে তাঁর সম্বল ২ বছর। সিএবি সভাপতি হয়ে বা বিসিসিআইয়ের কোনও পদে এলে তিন বছরের মোয়াদ দু’বছরে শেষ হবে। সিএবি হোক বা বিসিসিআই- এক বছরের জন্য নতুন সভাপতি খুঁজবে!! বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের প্রাক্তন কোনও কর্তা সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে যে কোনও নির্বাচন প্রক্রিয়া সামলাবেন। তিনি যদি পুরো টার্মের জন্য না পারেন, তাঁর সুযোগ হাতছাড়াও হতে পারে। সম্ভাবনা: অনেকেই বলছেন, সৌরভের বোর্ড সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সমীকরণ অত সহজ নয়। বিসিসিআইয়েই সর্ব্বোচ্চ আসনে তিনিই বসতে পারবেন যিনি সত্তরোর্ধ্ব অভিজ্ঞ প্রশাসকদের নির্দেশে ভারতীয় বোর্ড চালাবেন। সৌরভ কখনও শ্রীনিবাসন শিবিরের নন, বরঞ্চ উল্টোটাই। নিন্দুকরা বলছেন ইদানীং নাকি সৌরভ বোর্ড রাজনীতিতে পোক্ত হয়ে উঠেছেন, শ্রীনির সঙ্গে সুসম্পর্ক বাড়ানোর কোনও সুযোগই ছাড়েননি। কিন্তু শ্রীনির প্রিয়পাত্র বাংলার বিশ্বরূপ দে। বিশ্বরূপ আর সৌরভের সম্পর্ক মোটেই মধুর নয়। বিশ্বরূপ ফাঁকা জমি নিশ্চয় দেবেন না। আর সৌরভের বিরোধী গোষ্ঠী যদি সিএবি নির্বাচনে শেষ হাসি হাসে, তা হলে তাঁর নাম বোর্ডের পদে বসার জন্য পাঠাবে কিনা, তা নিয়েও ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে।
সৌরভ শিবির সিএবিতে দাদাগিরি দেখালে সৌরভ চাইবেন নিজের পছন্দের কাউকে (৬৪ বছরের কম বয়সী কেউ) সভাপতি বসিয়ে তাঁকে দিয়ে সিএবি নিয়ন্ত্রণ করে যেতে। আর নিজে দু’বছরের জন্য বিসিসিআইয়ের মাঠে নামতে। আবারও সৌরভকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্ক বুঝে পা ফেলতে হবে। সিএবি'র জন্য তাঁর ভরসা রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধিরা। অথচ তাঁদের হাত ধরে বিসিসিআইতে চেয়ার দখল মুশকিল। সেখানে আজও শ্রীনি, ঠাকুর, জেটলি, শাহরা সব সাজাবেন। তাই বোর্ড কঠিন, রাজ্য সহজ। সৌরভের ক্ষেত্রে আরেকটা বড় ইস্যু হতে পারে স্বার্থের সংঘাত। তিনি সিএবি'র সভাপতি অথচ স্বীকার করেন, আইএসএলে তিনি এটিকে'র কর্ণধার। তিনি নিজের নামে স্কুলে ক্রিকেট ট্রেনিং দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন মোটা অর্থের বিনিময়ে। সিএবি'র সভাপতি থেকেও পেশাদার হয়ে ক্রিকেট ধারাভাষ্যকারের কাজ করছেন। টিভিতে সর্বভারতীয় নিউজ চ্যানেলে আকর্ষনীয় শো করেন অর্থের বিনিময়ে।
সিএবি'র আইনজীবী ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি দু’টি নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যানকে শো-কজ চিঠি ধরিয়ে ছিলেন। " কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট" নিয়ম লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে। কিন্তু সভাপতি সৌরভ যেভাবে ঊষাবাবুকে লেখা চিঠির ( মেলের মাধ্যমে) পাল্টা উত্তর প্রচার মাধ্যমের মাঝে বিলিয়েছেন, তা বিষ্ময়কর। ঊষাবাবুও তাঁর পাল্টা জবাবের চার পাতার চিঠিও প্রচার মাধ্যমের মধ্যে বিলিয়ে দেন। ঊষাবাবু , কিন্তু একই দোষে দোষী সি এ বি সভাপতিকে আগে এই শো-কজের চিঠি ধরানোর সাহস দেখাননি। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনামায় লিখেও দিয়েছে, কুলিং পিরিয়ডে অন্য কোনও সংস্থায় যুক্ত থাকা যাবে না। আসলে ব্যাক্তি বিশেষে এদেশে নানান নিয়ম!! নয়া সমীকরণ : সি এ বি'তে নয়া সভাপতি হতে পারেন সৌরভ ঘনিষ্ঠ কলকাতার এক প্রথম সারির ব্যবসায়ী। কিন্তু তাহলে, তাঁকে আই পি এল দলের, আই এস এল দলের মালিকানা ছাড়তে হবে। আসলে "রায় "তো এখন ট্রেলর, " ফিল্ম আভি বাকি " হ্যায়।