ব্রাজিল হারতে পারে, কিন্তু আর্জেন্তিনা ও পর্তুগালের মতো আত্মসমর্পণ করবে না
রোনাল্দো ও মেসির বিদায়ঘণ্টা বাজাল সাম্পাওলি ও সান্তোসের ভুল স্ট্র্যাটেজি
- Total Shares
এই বিশ্বকাপে গোটা বিশ্ব তিনজনের দিকে তাকিয়ে ছিল - রোনাল্দো, মেসি ও নেইমার। আর, এই তিনজনের মধ্যে মেসির পারফর্ম্যান্স সবচেয়ে হতাশাজনক। মেসিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। নীল-সাদা জার্সিতে রাশিয়ায় মেসির সফল না হতে পারার অন্যতম কারণ আর্জেন্তেনীয় কোচ জর্জ সাম্পাওলির ভুল স্ট্র্যাটেজি। একমাত্র নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচটি ছাড়া প্রত্যেকটা ম্যাচেই ভুল স্ট্রাটেজিতে খেলেছে আর্জেন্তিনা।
আশির দশকে মারাদোনার আর্জেন্তিনা ৫-৩-২ ছকে খেলত। এই ছকে মারাদোনা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার- কাম-উইথড্রয়াল স্ট্রাইকার। সাম্পাওলির উচিৎ ছিল মেসিকেও এই স্ট্রাটেজিতে খেলানো। আগুয়েরো আর হিদেনকে সাইডলাইনে বসিয়ে রেখে মেসিকে মিডফিল্ডে খেলানোর কোনও যুক্তি নেই। গতকাল তো মেসিকে 'ফলস নম্বর নাইন' হিসেবে খেলানো হল। এই ভুলের কোনও ক্ষমা নেই।
বিশ্বকাপে মেসির বিদায় সাম্পাওলির ভুল স্ট্রাটেজিতেই ছবি: এএফপি
হিগুয়েন ও আগুয়েরো প্রথম একাদশে থাকলে আর্জেন্তিনার পক্ষে খেলাটা বার করা সুবিধা হত, যেটা নাইজেরিয়া ম্যাচে দেখা গেছে। নাইজেরিয়া ওদের ফরওয়ার্ড লাইনটাকে আটকাতে পারেনি। কারণ, একজনকে আটকানো আর তিনজনকে আটকানোর মধ্যে তফাৎ আছে। তিনজনকে আটকাতে চার জন ডিফেন্ডার ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তাতে ডিফেন্সের ফাঁকফোকরগুলো বেরিয়ে আসত।
৬১ শতাংশ বল পজেশন নিয়েও ম্যাটা হারল আর্জেন্তিনা। কেন?
কারণ, এত ভালো বল পজেশন থাকা সত্ত্বেও মেসিকে বল ধরতে দেওয়া হয়নি। 'ওয়ান-ম্যান' টিমের বিরুদ্ধে এটাই ফ্রান্সের স্ট্রাটেজির ছিল। ফ্রান্স সফল। উল্টোদিকে, সাম্পাওলির উচিৎ ছিল মেসিকে আগলে রাখা। কিন্তু তিনি তাই করলেন না। ফ্রান্স মেসিকে খেলার জায়গা দিল না। এই পরিস্থিতিতে সামনে দুটো স্ট্রাইকার থাকলে মেসি অন্তত তাঁর সেই বিখ্যাত ঠিকানা লেখা থ্রুগুলো বাড়াতে পারত। পেনিট্রেটিং জোনেও আর্জেন্তিনা চাপ বাড়াতে পারত। মাত্র ৩৯ শতাংশ বল পজেশন নিয়ে ফ্রান্স কোনও মতেই চারটে গোল করতে পারত না।
এর থেকে আরও একটা জিনিস প্রমাণিত। আর্জেন্তিনার ডিফেন্স অতীব দুর্বল। তাই সাম্পাওলির উচিৎ ছিল পাঁচজন ডিফেন্ডার নিয়ে একজনকে ব্লকার হিসেবে রাখা।
৬৯ শতাংশ বল পজেশন রেখেও ছিটকে গেল পর্তুগাল
এবার আসা যাক পর্তুগালের কথায়। সন্ধ্যার সাম্পাওলির ভুলের পুনরাবৃত্তি করলেন রাতের ফার্নান্দো সান্তোস।
রোনাল্দোকে জোনাল মার্কিং করে উরুগুয়ে সফল। দ্বিতীয়ার্ধে রোনাল্দোকে একটাও হেড করতে দেয়নি উরুগুয়ে। রোনাল্দোকে দিয়ে খেলাতে না পারলে এই ম্যাচ পর্তুগাল জিততে পারবে না, উরুগুয়ে তো সেই সাপ্লাইলাইনটাই বন্ধ করে দিল।
রোনাল্দো ছাড়া পর্তুগালের আর কোনও ফুটবলার নেই যারা যে কোনও জায়গার থেকে গোল করতে পারবে। তাই দ্বিতীয়ার্ধে তারা চেষ্টা করেছে ফ্ল্যাঙ্ক বরাবর আক্রমণ করে বলটা রোনাল্দোর মাথায় তুলে দিতে। কিন্তু উরুগুয়ে রোনাল্দোকে হেড করতে দেয়নি। বল মাঠের বাইরে পাঠিয়ে পর্তুগালকে কর্নার দিয়েছে। কিন্তু বল রোনাল্দোর মাথায় ঠেকাতে দেয়নি।
এখানে আরও একটি বিষয় আমরা বলা উচিৎ রেফারিং নিয়ে। উরুগুয়ের দুটো হলুদ কার্ড হয়। কিন্তু রেফারি দেখাননি। সেই সময় একজন ডিফেন্ডার হলুদ কার্ড দেখলে গোটা ম্যাচে তিনি সাবধানতা অবলম্বন করতে বাধ্য। তাতে পর্তুগালের সুবিধাই হত। ম্যাচে ৬৯ শতাংশ বল পজেশন ছিল পর্তুগালের।
কাকতালীয় মনে হলেও বিষয়টি সত্যি। এই দুটো ম্যাচ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখছি একই রকম স্ট্রাটেজি নিয়ে ফ্রান্স আর উরুগুয়ে বাজিমাত করল। আর, একই রকম ভুল স্ট্র্যাটেজিতে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল আর্জেন্তিনা ও পর্তুগাল, সারা বিশ্ববাসীর মন ভেঙে দিয়ে। আগেই বলেছি এই বিশ্বকাপ তিনজনের উপর নির্ভর করছিল। মেসি রোনাল্দো আর নেইমার।
আজ নেইমারের পালা।
ব্রাজিল কিন্তু শুধুমাত্র নেইমার-নির্ভর নয়
এই ম্যাচে কিন্তু গতকালের পুনরাবৃত্তি হবে না। ব্রাজিল হারতে পারে। কিন্তু আর্জেন্তিনা বা পর্তুগালের মতো আত্মসমর্পণ করবে না।
ব্রাজিল কিন্তু শুধুমাত্র নেইমার-নির্ভর নয়। পা বাঁচানোর জন্য কিনা জানি না, কিন্তু নেইমারের এই পড়ে যাওয়ার অভিনয় আর দেখা যাচ্ছে না। ব্রাজিলের আজকে জেতার সম্ভাবনা প্রবল। যদি নেইমারকে সামনে খেলায় আর 'ফ্ল্যাঙ্ক' দুটো একটু পিছন থেকে খেলতে হবে। এ ক্ষেত্রে নেইমারকে মার্কিং করতে বাধ্য হবে মেক্সিকো। আর তাহলে অন্য প্লেয়ারদের গোল ঢোকার রাস্তাটা খুলে যাবে। আর এটা ব্রাজিলের পক্ষে সম্ভব। যেটা আর্জেন্তিনা বা পর্তুগালের কাছে সম্ভব ছিল না।
রোনাল্দো ইউসেবিও থেকে গেল।বিশ্বকাপ পেল না। মেসিরও মারাদোনা হয়ে ওঠা হল না। নেইমার কী ১৯৯৪ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে?