প্রশিক্ষক বা কর্মকর্তারা ক্রীড়াবিজ্ঞানে উৎসাহ নন, তাঁরা ওঝা ও জ্যোতিষের উপর ভরসা রাখেন
বিশ্বকাপে খেলা কোনও দেশের কল্পিত নাগরিক হয়ে অশালীন শব্দের অন্তাক্ষরী করা আমাদের কাজ
- Total Shares
সেদিন ফুটবলাররা মাঠ কাঁপিয়েছিলেন। আজ দর্শকরা গ্যালারিতে থাকবেন।
রাশিয়ার সঙ্গে এই ভূখণ্ডের ফুটবলের যোগাযোগ সেই পাঁচের দশকের শুরু থেকে। ১৯৫৩ সালে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করে আহমেদের নেতৃত্বে। এরপর সে দেশের জাতীয় দল আর ক্লাব দল ভারতে বহু প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ভারতীয় ফুটবল অবশ্য এর ফলে খুব একটা এগিয়েছে, তেমনটা নয়।
বিশ্বকাপ কয়েক আলোকবর্ষ দূরে। ভারতীয়দের কাজ প্র্রতি চার বছর অন্তর বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী কিছু দেশের কল্পিত নাগরিকত্ব গ্রহণ করে সামাজিক মাধ্যমে অশালীন শব্দের অন্তাক্ষরী করা। এই সংস্কৃতি এ দেশের ফুটবল কর্তাদের অপদার্থতা ও অক্ষমতার সৌজন্যে।
ভারত কেন বিশ্বকাপ খেলে না? আরও বড় প্রশ্ন ভারতীয় ফুটবল দল কেন এশিয়ান গেমসে অংশ নিতে পারে না?
সুনীল ছেত্রীদের কি এশিয়ান গেমসে খেলার যোগ্যতাও নেই?
বিশ্বকাপ তো পরের ব্যাপার। ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নরিন্দর বাত্রার একগুঁয়েমির মাসুল দিচ্ছেন সুনীল ছেত্রীরা। এই নরিন্দর বাত্রার মাথার উপর নাকি এ দেশের রাজনৈতিক কেষ্টবিষ্টুদের হাত রয়েছে। এই 'ম্যানিয়াক'পনার ফল ভুগতে হবে ভারতীয় ফুটবলকে। বেশ কিছুদূর পিছিয়ে যাবে এ দেশের ফুটবল। এই মূর্খামির হাত ধরে।
এ যেমন একটা দিক আর একটা দিক হল ফুটবল কর্তাদের ক্রীড়াবিজ্ঞানের বিষয় সম্যক ধারণা না থাকা। এ দেশে এখনও স্পোর্টস মেডিসিন বা স্পোর্টস সায়েন্স বলতে চোট লাগা খেলোয়াড়ের সুশ্রূষা বোঝায়। বাস্তবে এই বিজ্ঞানটা অনেক কিছু বিষয়ের সমষ্টি। যেমন স্পোর্টস সাইকোলজি স্পোর্টস ফিজিয়োলজি স্পোর্টস নিউট্রিশন, স্পোর্টস বায়োমেকানিকস প্রভৃতি।
বড় বড় ক্লাবগুলোর দিকে তাকালে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। ক্লাবে চিকিৎসক নিয়োগ করা হয় ,কিন্তু স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের তেমন একটা জায়গা নেই। জেনারেল ফিজিশিয়ান, কমিউনিটি মেডিসিন বা ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞদের মাঝেমধ্যে মাঠে ঢুকতে দেখা যায়।
আরও একটা বিষয়ের প্রতি কিছু প্রশিক্ষক ও কর্তারা বিস্বস্ত। তা হল ওঝাগিরি, জ্যোতিষী। কলকাতা ময়দানে ওঝাদের আনাগোনা এখনও রয়েছে। বড় কোনও ক্লাব টানা ব্যর্থ হলে এদের দেখা মেলে। ঘটা করে গ্রহ শান্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কর্মকর্তারা ওঝা বা জ্যোতিষদের উপর ভরসা রাখেন বেশি
কিন্তু কী হবে ক্রীড়া বিজ্ঞানের? সাতের দশকে বাঙালি ফুটবলারদের ক্লাব মন্দির জার্সি মা এ সব বলে মোটিভেট করা হত। বদলে যাওয়া সময়ে ভিন রাজ্যের বা ভিন দেশি ফুটবলারদের প্রাচীন ভোকাল টনিক দিয়ে উজ্জীবিত করা যায় না। এর জন্য স্পোর্টস সাইকোলজিস্টদের প্রয়োজন। অ্যাকাডমি লেভেল থেকে বড় ক্লাবের আসার সময়টাতে এবং পারফর্ম্যান্স ধরে রাখতে ফুটবলারদের উপযুক্ত খাবার দাওয়ার সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। সেটা পারেন স্পোর্টস নিউট্রিশনিস্টরা। এ দেশের ফুটবলে তাদের জন্য লক্ষ্মণের গন্ডি কাটা রয়েছে। প্রবেশ করার সাধ্য নেই।
ফুটবল খেলায় শরীরের প্রয়োজনীয়তা কতটা এই বিশ্বকাপ তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তবু কেউ কেউ বলেন আফ্রিকার দেশগুলোতে তো বিজ্ঞানের প্রয়োগ হয় না। তারা তো দিব্যি বিশ্বকাপ খেলে। মুশকিল হল আফ্রিকানরা জন্মসূত্রেই ওই চেহারাটা পেয়ে থাকেন। আর আমাদের বিজ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। অন্য দিকগুলোতে বিজ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ না হওয়ার জন্য আফ্রিকানরাও খুব বেশিদূর এগোতে পারে না।
ভারতীয় ফুটবলে কুসংস্কার নামক ক্রনিক রোগটা রয়েছে বহাল তবিয়তে। এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনও প্রচেষ্টা এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি কর্তা ব্যক্তিদের মধ্যে। তাই বিশ্বকাপটা অন্য গ্যালাক্সির বিষয় বলেই মনে হয়। আর, এই সময়টাতে কল্পনার পাখা মেলে কেউ বা ব্রাজিল কেউ বা আর্জেন্তিনাতে বসবাস করতে শুরু করি। আর, বিশ্বকাপ শেষ হলেই শুরু হয় পরবর্তী চার বছরের জন্য ডিপ্রেশন।
ট্র্যাডিশন যেন অমরত্ব লাভ করেছে।