ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারতেই হুলিগান তাণ্ডব, রবিবারের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন
সমর্থকদের সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে পুলিশ, সংযত থাকার বার্তা রাজপুত্রের
- Total Shares
"ইটস কামিং হোম" আর না। এখন "উই আর কামিং হোম"। ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় গোলের পরেই আমাদের স্থানীয় বাঙালিদের হোয়াটস-অ্যাপ গ্রুপগুলোতে আসতে থাকল ইংল্যান্ড দলের হাস্যকর সব মেমে। গোটা দেশের আম জনতার একটাই বক্তব্য, এ যেন অনেকটা গাছে তুলে দিয়ে মই কেড়ে নেওয়ার মতো। এই দলটাকে নিয়ে শুরু থেকে কোনও প্রত্যাশা ছিল না, দলে নেই কোনও আইকনিক ফুটবলার। অথচ এরা ২৮ বছর পরে চলে গেল এক্কেবারে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। আর সেখানে কিনা হার ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে। এমন একটা দেশ, ১৯৯০ সালের বিশ্ব মানচিত্রে যার কোনও অস্তিত্ব ছিল না।
হতাশ ইংল্যান্ডের সমর্থকরা
এখন, মানে এই প্রতিবেদনটা লেখার সময়টা হচ্ছে বৃহস্পতিবারের লন্ডনের সাত সকাল। বলা বাহুল্য গতকাল রাতে খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গেই লন্ডন জুড়ে লন্ডভন্ড শুরু হয়ে গিয়েছে ব্রিটিশ হুলিগানিজমের ট্র্যাডিশনটা বজায় রেখে। পশ্চিম লন্ডনের প্যাডিংটন স্টেশনের বাইরে সেই রাতে হয়েছে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ। গ্রেপ্তারও হয়েছে বেশ কয়েকজন মত্ত যুবক। পূর্ব লন্ডনের শোরডিচে পাবগুলোর সামনে কয়েক হাজার সমর্থক ভোর রাত অবধি তাণ্ডব চালিয়েছে। হ্যাকনি অঞ্চলে এখনও বড় সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন করা আছে. শুধু লণ্ডন নয়, বার্মিংহাম, ম্যাঞ্চেস্টারেও একই অবস্থা। বার্মিংহামে পচা ডিম ছোড়াছুড়ি হয়েছে নিজেদের মধ্যে। সেটার থেকে বাঁচতে আবার অনেকে খালে ঝাঁপ দিয়েছেন।
গতকাল লন্ডনের সবচেয়ে বড় জমায়েতটা ছিল হাইড পার্কে, অন্তত ৩০,০০০ মানুষ খেলা দেখতে এসেছিলেন। ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি। অতিরিক্ত সময়ে ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় গোলের পর মোটামুটি সবাই ধরে নিয়েছিলেন এ বারেও আর হল না। খেলা শেষে পুলিশকে মোটামুটি নাকানি চোবানি খেতে হয়েছে ওই হুলিগান ক্রাউডকে নিয়ন্ত্রণ করতে। খেলা শেষ হওয়ার আগেই সমর্থকদের মধ্যে একাংশ হাতাহাতি শুরু করে দেয়। বিয়ারের বোতল ছিল মূল হাতিয়ার। পিকাডিলি স্কোয়ারের জায়ান্ট বিল বোর্ড স্ক্রিনে খেলা একসময় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে।
তাণ্ডব হুলিগানদের, ফাইল চিত্র
আসলে এই প্রত্যাশার পারদ এতটাই চড়েছে গত শনিবারের পরে, গতকালের হারটাকে হজম করাটা সহজে গা সওয়া হবে না ব্রিটিশদের। প্রিন্স উইলিয়াম থেকে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে, সবাই নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে "শোকবার্তা" প্রকাশ করে গেছেন গতকাল রাত থেকে। "জানি এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর। কিন্তু আমাদের ফুটবলাররা গোটা দেশের মাথা উঁচু করেছেন আজ। এবারের বিশ্বকাপ অভিযান আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।" প্রিন্স উইলিয়াম টুইটে এটাই লিখেছেন।
I know how disappointed @england must feel right now but I couldn’t be more proud of this team and you should hold your heads high. You’ve had an incredible #WorldCup, made history, and gave us fans something to believe in. We know there is more to come from this @england team. W
— Kensington Palace (@KensingtonRoyal) July 11, 2018
আমাদের মতো লন্ডনবাসীরা শুধু নয়, এখানে ঘুরতে আসা অসংখ্য পর্যটকদের মনেও একটাই প্রশ্ন। গতকাল রাতের ম্যাচ হারার দুঃখের বহিঃপ্রকাশ কি শেষ হয়ে গেল, নাকি আরও বাকি আছে! লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশের তরফে গতকাল রাত থেকে প্রতিনিয়ত টুইট করে বলা হচ্ছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে। উইকএন্ড আসতে তখনও দুদিন বাকি। অনেকেই বলছেন, যত ফাইনাল এগিয়ে আসবে, হয়ত ক্ষোভটা আরও বাড়বে। এখন না হয় সবাই মুষড়ে পড়েছে, কিন্তু ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালে খেলতে দেখে দৃশ্যটা ঠিক কি হবে কেউ জানে না।
বলা বাহুল্য আমরা যথেষ্ট চিন্তায় আছি।