সৌরভের সেকাল-একাল: ইমরান খানের ছবি তো উপলক্ষ্য মাত্র

জওয়ানদের মনোবল বাড়াতে কারগিলে গিয়েছিলেন জাডেজা-কপিলরা, আর সৌরভ?

 |  4-minute read |   22-02-2019
  • Total Shares

বলিহারি বাহাদুরি!

‘দাদাগিরি’ নাকি ‘বাহাদুরি’?

সিএবিকে এই প্রশ্নটা করতে বাধ্য হলাম। সদর দরজা নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে ‘সাংবাদিক’দের রুখতে হল। কারণ? উত্তর কে দেবেন? সিএবি-র সভাপতি? নাকি অন্যতম যুগ্মসচিব?

সিদ্ধান্তটা যুগ্মসচিবের মস্তিষ্কপ্রসূত নয়। হলেও তাতে সিলমোহরটা লাগিয়েছেন যিনি, তিনি সংস্থার সভাপতি। কিংবা খোদ সভাপতির ফোন যায়, সংস্থার দেড় তলার অফিসে বসা অফিস সুপারিন্টেনডেন্টের কাছে। সিএবি-তে বিতর্ক নয়, তাই পুলওয়ামাতে জঙ্গি হামলার পাকিস্তান বিরোধী বাতাবরণে গা বাঁচানোর খেলায় মত্ত বাংলার ক্রিকেটের ‘রাজা-মহারাজা’রা।

kkk_022219025204.jpgকার্গিলে জয়ধ্বজা: তখন সেনাদের মনোবল জোগাতে সেখানে যান কপিল দেব, অজয় জাডেজা। (ফাইল ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)

পুলওয়ামায় মারাত্মক জঙ্গি হানায় ৪০ জনেরও জওয়ানের প্রাণ চলে যাওয়ার পরে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার জন্য পুরো দেশ যখন প্রতিবেশী দেশকে ধিক্কার দিচ্ছে, বিভিন্ন রাজ‍্য ক্রিকেট সংস্থা প্রাক্তন পাক অধিনায়ক ইমরান খানের ছবি সরাচ্ছে বা ঢেকে রাখতে তৎপর, তখন বাংলার রাজপ্রাসাদে রোখা হলো সাংবাদিকদের।

কেন?

সিএবিতে এদিন একটি জাতীয় নিউজ চ‍্যানেলের সাংবাদিক ও তাঁর ক‍্যামেরাম‍্যান সেই ছবি সহ খবরটাই যে করে ফেললেন!

এখন প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার ইমরানের ইয়া বড় সাইজের ছবির কোনও নড়চড় হয়নি বাংলার ক্রিকেট সদর দফতরে, আর একই দিনে মুম্বাইয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সদর দফতর থেকে একের পর এক সরানো হলো পাক ক্রিকেটের নানান স্মারক ও স্মরণীয় ক্রিকেটারদের পোট্রেট।

সিএবি কর্তাদের যুক্তি হতেই পারে: আরে ইমরান? উনি তো প্রাক্তন এক স্বনামধন্য ক্রিকেটার! তিনি তো তখন ওই দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না!

ঠিকই তো।

কিন্তু কারগিল লড়াইয়ের সময় সিএবি-র সভাপতি ছিলেন না ভারতীয় দলের ক্রিকেটারটি। অজয় জাডেজা, কপিলদেবরা কারগিলে হাজির হয়ে জওয়ানদের মনোবল বাড়িয়েছিলেন, তখন জাতীয় ক্রিকেটার সৌরভ কী করেছিলেন? স্মৃতির রেকর্ডিংয়ের রিওয়াইন্ড বাটনে চাপ দিতেই অনেক কিছু মনে পড়ে গেল।

অনেক কিছু জানা আছে, কিন্তু সব আজও প্রকাশ‍্যে আনার ইচ্ছে নেই। আজকের সিএবি-র সভাপতি যে সেদিনের সেই জাতীয় ক্রিকেটার!

সেবার জাতীয় দলে দারুণ খেলার জন্যে সিএবি-র বার্ষিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সৌরভকে সম্মানিত করা হয়েছিল। সম্ভবত তৎকালীন সভাপতি প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়াই সফল ক্রিকেটার সৌরভের হাতে ২ লক্ষ টাকার চেক তুলে দিয়েছিলেন। সেই দিনই সৌরভ কলকাতায় সেনাবাহিনীর সদর দফতর ফোর্ট উইলিয়ামে গিয়ে সমান অঙ্কের অর্থ, অর্থাৎ ২ লক্ষ টাকা কারগিল যুদ্ধে শহিদ তহবিলে জমা দিয়েছিলেন। সেই ইচ্ছের বা ভাবনার জন্ম যদি হয়ে থাকে বীরেন রায় রোডে সৌরভদের বাড়ির দোতলার লম্বা নরম সোফায় ( তখনকার দিনের ) বসে ( স্বাক্ষী ছিলাম, তাই ভুলিনি) – তার চূড়ান্ত আবেগের নিদর্শন দেখা গেল সেনার সদর দফতরে।

কিন্তু সেই সময় দেখেছিলাম, কারগিল ঘিরে নানান কার্যকলাপ। রাজনীতির কারবারিদের, সঙ্গে আরও অন‍্য অনেকের। কত জনের ভাবনা কত দিকে বইতে পারে!

আজ প্রশ্নটা এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে। সিএবি, থুড়ি সিএবি সভাপতি এ ভাবে সাংবাদিকদের আটকাবেন কত দিন? রাস্তায় দাঁড়িয়ে খবর করতে অবশ‍্য কেন ওঁরা সময় গুণবেন, সেটা ওঁরা জানেন। আমাকে আজ এমন অবস্থায় পড়তে হলে সাংবাদিক হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তাদের বোঝাতাম , কেন একটা প্রতিবাদী প্রতিবেদন লেখা উচিত। জানি, তারকাপ্রীতিতে জুনিয়ররা তো বটেই অফিসের ‘স‍্যার’  কিংবা ‘দাদা’রা এমনই দিনে   ‘‘চিন্তা নেই দেখে নিচ্ছি’’ ফোন বার্তা কিংবা হোয়াটস‍্যাপ বার্তা পাঠাবেন বিশেষ কর্তাদের।

ভুল ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই সিএবি'র সদর দরজা রাতে আবার দরাজ হল। কিন্তু হঠকারিতার জের কাটতেই ড‍্যামেজ কন্ট্রোল করতে সেই সিএবি সভাপতিকে প্রচার মাধ্যমের সামনে মুখ খুললেন। ‘‘ময়দানে চাই না পাকিস্তান।’’ সৌরভের মুখে স্পষ্ট কথা, নাকি হাওয়ামোরগের ভূমিকায় সিএবি?

প্রায় দুই দশক বাংলা ক্রিকেটে সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলব, সৌরভ এটা কেন করলেন বা হতে দিলেন?!

gan1_022219023911.jpgসৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)

সিএবি পাকিস্তানী ক্রিকেটার ইমরানের ছবি বৃহস্পতিবারও সরায়নি, আগামী দিনেও সরাবে না। কিন্তু বোর্ডের সদর দফতরে বুধবার যা করা হল, তাতে এবার কী হবে? ছবি সরানোর কথা তো গণমাধ্যমের নয়, সদস‍্যদের কেউ যদি এবার বলেন? গোটা দেশের আবেগে আঘাত হেনেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। তিনি ইমরান খানই হোন, আর যিনিই হোন। ক্রিকেটার সিধুও আজ বুঝে গেছেন, খেলা আর দেশের আবেগ নিয়ে ছেলেখেলা করা যায় না।

সিএবি সাংবাদিকদের কত দিন গেটের ওপারে রাখবে? ছবিটি বা সেই ছবিগুলো সরানোর পর বলতে পারবেন কী? “এ নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে না” বা “নো কমেন্টস।”

ভাবাচ্ছে একটা বিষয়: বোর্ডের তরফ থেকে কেন সকল সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হল না যে, মুম্বইয়ে সদর দফতরে কী করা হচ্ছে? সিএবি তে তো এ সব বিষয় দেখার  কথা লাখপতি মাসিক মাইনের সিইও-র।  যখন ভিন্ন রাজ‍্য সংস্থায় এমন সব ঘটছে তিনি কী করছিলেন? প্রচারমাধ্যম তো সেকেন্ডের মধ্যে সব জানিয়ে দেয়। অবশ‍্য আমার মতো অনেকেই জানেন যে এই বাবুটি ‘বড়বাবু’র আজ্ঞাবহ।

“মহারাজার বার্তা নাই, খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা বৃথা তাই।”

বোর্ডের প্রশাসনিক বড় পদে বসে সাবা করিম। বাংলা থেকে জাতীয় দলে খেলেছিলেন, সৌরভের রুমমেটও ছিলেন এক সময়। সৌরভ সাবাকে ফোন করে বোর্ডের পরবর্তী ভাবনার আঁচ করে নিতে পারতেন। কিংবা উল্টোটা। সৌরভ-সাবাদের আজ আর সেই সখ‍্য নেই। নাকি একই ভাবে সিএবি আর বোর্ডের সঙ্গে মেলবন্ধন‌ আলগা।

এই ঘটনার ধাক্কা সামলাতে সিএবিকে  বেশি কিছু কাঠখড় পোড়াতে হতে পারে। হয়তো তা বড় আকারে পরিণত হওয়ার আগে রাজ‍্য স্তরের রথী-মহারথীদের মঞ্চে দেখা যাবে। তবে একটা কথা বুঝতে আর বাকি নেই, সিএবি-তে যোগ্য প্রশাসকের বড়ই অভাব।

“ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না” – প্রশাসনিক এই পাঠটাই যে শেখা হয়নি তাঁদের।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

DIPANKAR GUHA DIPANKAR GUHA @dg_1965

The writer is a Senior Sports Journalist

Comment