মহেন্দ্র সিং ধোনির থেকে শেখার মতো পাঁচটি ‘কুল’ জিনিস
ক্রিকেটের বাইরেও তাঁর কাছ থেকে শেখার আছে
- Total Shares
হেলিকপ্টার শট, লম্বা চুল আর যিনি শান্তভাবকে নিজের সমার্থক করে ফেলেছেন... মহেন্দ্র সিং ধোনি, যাঁর “শুধু নামটাই যথেষ্ট।”
তাঁর ভক্তরা তো বটেই, দলে তাঁর সহকর্মীরাও তাঁকে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নামেই ডাকেন। ভারত বিজয়ী হোক বা পরাজিত, তাঁর সেই নির্বিকল্প শান্ত ভাবের কোনও পরিবর্তন হয় না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সীমিত ওভারের খেলায় তিন ধরনের ট্রফিতেই (টোয়েন্টি ২০ বিশ্বকাপ, বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) তাঁর নেতৃত্বে জয়ী হওয়ার পরেও, টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম বার দলকে এক নম্বরে নিয়ে যাওযার পরেও, চেন্নাই সুপার কিংসকে (সিএসকে) তিনবার আইপিএল ট্রফি এনে দেওয়ার পরেও, দু’বার টোয়েন্টি ২০-তে এবং ২০১৩ সালে ৪০ বছর পরে অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইট ওয়াশ করে দেওয়ার পরেও এবং নিজের প্যাশনের জন্য রেলের টিকিট চেকারের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরেও তিনি একই রকম ভাবে শান্ত রয়ে গেছেন।
বাইরে থেকে তাঁরে বেশ শান্তই দেখায়, তবে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে তিনি একজন আগ্রাসী মনোভাবের ক্রিকেটার এবং এমন ভারতের একজন অধিনায়ক সকলেই যাঁকে ভালোবাসেন।
তবে ক্রিকেট ছাড়াও মহেন্দ্র সিং ধোনির থেকে অন্তত পাঁচটি জিনিস শিখতে পারি।
১) হেলিকপ্টার শট
অন্তত এক দশক ধরে দেখে আসছি যে হেলিকপ্টার শটের প্রচুর ভক্ত তৈরি হয়ে গেছে। কিন্ত কখনও ভেবে দেখেছেন কি যে এর নেপথ্যে কী নিদারুণ একটি ভঙ্গিমা রয়েছে? তিনি এমন ভাবে খেলেন যেন আগামী নিয়ে তাঁর কোনও তাপ-উত্তাপ নেই। আমি যখন এই ব্যাপারটা নিয়ে গভীর ভাবে ভাবলাম তখন বুঝলাম যে ব্যাপারটা এই রকম – এর পর বলে কিছু হয় না। তা হলে আশপাশে কী হচ্ছে তা নিয়ে কেন মাথা ঘামাতে যাব? যা করতে হয় করে ফেল! জীবন মানে এখন, এই মুহূর্তটাই।
এক দশক ধরে তাঁর হেলিকপ্টার শটের অনেক ভক্ত তৈরি হয়েছে। (ছবি: বিসিসিআই)
২) নির্বিকল্প শান্ত
ভাবচাপের মুখে কখনও কি তাঁকে ভেঙে পড়তে দেখেছন? কক্ষনো নয়! তাঁর এই মানসিকতা তাঁকে শুধুমাত্র ম্যাচ জিততেই সাহায্য করেনি, একই সঙ্গে তিনি কঠিন পরাজয়ের সঙ্গে কী ভাবে মানিয়ে নিতে হয় তাও শিখেছেন। খুব কম সময়ই মাঠে তাঁর আবেগ দেখা গেছে, তা তিনি ক্রিজেই থাকুন আর স্টাম্পের পিছনেই থাকুন। তাঁর সমস্ত আগ্রাসনকেই তিনি খেলার পরিকল্পনায় কাজে লাগিয়েছেন। তিনি অধিনায়ক থাকুন বা না থাকুন, তিনি তাঁর ওই শান্ত ভাব দিয়েই সকলকে উৎসাহ দিতে থাকেন। তাই তাঁর থেকে দ্বিতীয় যেটি শিক্ষণীয় তা হল, শান্ত থেকে জয়ী হওয়ার শিক্ষা।
৩) তরুণ তুর্কিদের উৎসাহদান
তিনি তরুণদের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। যদি নতুনরা তাঁকে বলেন যে ‘মাহিভাই’ই আমাদের সদগুরু, তা হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তিনি সব সময়ই নতুন প্রতিভা খুঁজে বার করার চেষ্টা করেন এবং নিজের ১০০ শতাংশ দিয়ে তাঁদের উৎসাহ দেন।
অর্থাৎ তিন নম্বর শিক্ষা হল: আরও অনেক বাতি প্রজ্জ্বলিত করলেও মূল বাতির আলো কমে যায় না।
তিনি অধিনায়ক থাকুন বা থাকুন, তিনি সহযোদ্ধাদের সামনে উদাহরণ তৈরি করেন। (ছবি: পিটিআই)
৪) সম্পূর্ণ ভাবে অকুতোভয়
তাঁর মনে সব সময়ই বিকল্প উপায়ের একটি ভাবনা থাকে। তিনি সব সময়ই এই বিকল্প ভাবনা ভাবতে থাকেন। তবে সাহসী পদক্ষেপ করার ব্যাপারে তিনি কখনোই পিছপা হন না, তার ফল যাই হোক না কেন। তিনি এতটাই অকুতোভয় যে, তাঁর অভীষ্ঠের পথে যত কঠিন বাধাই আসুক না কেন তিনি তা করবেনই। তিনি যখন ওই বিশাল বিশাল ছক্কা হাঁকিয়েছেন তখন আউট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তাঁর মধ্যে ছিল না। তার পরে ভাবুন কতগুলি ম্যাচ তিনি জিতিয়েছেন। এতদিন যে পথে চলতে ভয় পেয়েছে এখন সাহস করে সেই পথে পা ফেলে দেখুন, জয়ী আপনি হবেনই।
বারে বারে ম্যাচ জিতেয়েছেন ধোনি। (ছবি: পিটিআই)
৫) ধোনিবাদ
তাঁর রসবোধ এবং একেবারে নিজস্ব ভঙ্গিমায় হাসানোর ক্ষমতা বেশ সুন্দর ও মজাদার। যাঁদের রসবোধ আছে তাঁরা না হেসে পারবেন না।
তিনি তাঁর দলের সহ-খেলোয়াড় ও ফ্যানদের কী ধরনের মজার কথা বলতে পারেন দেখুন। “আপনানা (সংবাদমাধ্যম) প্রতি দু’মাস অন্তর আমার বান্ধবী বদলে দেন, অন্তত আরও কিছুদিন স্থায়ী হতে দিন!” আবার, “সত্যি কথা বলতে কী, এই ডাকওয়ার্থ-লুইস ব্যাপারটা যে কী তা আমার বোধগম্য হয় না, আমি আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করি।” কিংবা, “ওই শ্রী, বান্ধবী ওদিকে নেই, এদিকে চলে আয়।” “রায়ুডু, দেখ ভাই, ওর পায়ের নড়াচড়া দেখে একটু বোঝার চেষ্টা কর, মাঝখানে ভলিবলের মতো দাঁড়িয়ে থাকিননি।” “বলের দিকে মন দে, শোয়ার সময় অনেক পাবি।”
দুই দলের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ায় ভারত যে সিরিজ জিতল তাতে সবেচেয়ে প্রবীণ ভারতীয় হিসাবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ হয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।
তাঁর সমসাময়িকদের পিছনে ফেলে এখনও লড়াই করে যাচ্ছেন ধোনী এবং নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্দ করে যাচ্ছেন।
মাহিকে আমার প্রণাম!!!
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে