যোগ্য উত্তরসূরীর অভাব: ২০১৯ বিশ্বকাপ অবধি ভারতের উইকেটরক্ষক থাকুন মহেন্দ্র সিং ধোনি
তিনি ফর্মে নাই থাকতে পারেন, কিন্তু তাঁর দলে থাকার আরও অনেক কারণ রয়েছে
- Total Shares
মে মাসে ইংল্যান্ডে বসতে চলেছে ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসন। আর, সেই টুর্নামেন্টে অন্যতম ফেভারিট হিসেবে যোগ দেবে ভারত। কোচ রবি শাস্ত্রী ও অধিনায়ক বিরাট কোহলির এই ভারতীয় দলটিকে দেখে মনে হচ্ছে সমস্ত জড়তা কাটিয়ে দলটি বিশ্বকাপ জয়ের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের মাঠে একদিনের সিরিজে ও এশিয়া কাপে ভারতীয়দের পারফর্ম্যান্স বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
এশিয়া কাপে ভারতের অভিযান সুমধুর ভাবে শেষ হয়েছে। সপ্তমবার এশিয়া কাপ জিতেছে ভারত। উপমহাদেশীয় দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বার ভারত এশিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু কাপ জেতার পরেও দলের মিডল অর্ডার নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। শুধু এশিয়া কাপ নয়, ইংল্যান্ডে হারা সিরিজেও প্রয়োজনের সময়ে ভারতের মিডল অর্ডার ব্যর্থ হয়েছিল।
সমালোচনাও কম হয়নি ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে। বিশেষ করে সেই মহেন্দ্র সিং ধোনিকে নিয়ে।
অফ ফর্মে, তাই সমালোচনার মুখে পড়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি [ছবি: পিটিআই]
জাতীয় দলের জার্সি পরার যোগ্যতা তাঁর আর আছে কিনা সে নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে। ধোনির সমালোচকরা মনে করছেন, বিশ্বকাপ শুরুর মাস ছয়েক আগে, মানে এখনই, ধোনির সরে দাঁড়ানো উচিত। একদিনের ক্রিকেটেও ধোনির পরিবর্তে অন্য কেউ ভারতের হয়ে উইকেট রক্ষা করুন।
এটা সত্যি যে শেষ কয়েক মাস ধরে একদমই ভালো খেলতে পাচ্ছেন না ধোনি। তাই বলে তিনি যে জাতীয় দলের জন্য অনুপযুক্ত, সেটা কিন্তু ঠিক নয়।
২০১৮ সালেই তো চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে অনবদ্য খেলেছিলেন তিনি। চেন্নাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ঝুড়ি ঝুড়ি রান করে সেই টুর্নামেন্টে ধোনির গড় ছিল ৭৫.৮৩ ও স্ট্রাইক রেট ১৫০.৬৬। এই টি-২০ লিগের পর মাত্র দু'টি একদিনের সিরিজ খেলেছে ভারত। আর মাত্র সেই দুটো সিরিজেই রান পাননি ধোনি।
সবচেয়ে বেশি স্ট্যাম্পিংয়ের রেকর্ড ধোনির পকেটেই [ছবি: পিটিআই]
২০১৮ সালে একদিনের ক্রিকেটে তাঁর গড় রান মাত্র ২৮.১৩ যা তাঁর কেরিয়ারের গড় (৫০.৬১) থেকে অনেকটাই কম। প্রাক্তন অধিনায়ক আর দলের অন্যতম বর্ষীয়ান ক্রিকেটার হিসেবে তিনি খুব ভালোই জানেন যে দল তাঁর থেকে আরও অনেক বেশি আশা করে।
৩০০টি একদিনের ম্যাচের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও দশ হাজারের বেশি একদিনের রানের মালিক মহেন্দ্র সিং ধোনি কিংবদন্তি থেকে কোনও অংশে কম নন। আর কিংবদন্তিদের যে ফর্মে ফিরতে মাত্র একটি ম্যাচ লাগে তার নিদর্শন তো অতীতে বহু রয়েছে। ধোনিও ফর্মে ফিরবেন।
একটা সত্যি কথা আমাদের মেনে নিতেই হবে। একদিনের ক্রিকেটে মহেন্দ্র সিং ধোনির যোগ্য উত্তরসূরি এখনও ভারত পায়নি।
ঈশান কিষান, সঞ্জু স্যামসন ও ঋষভ পন্থরা অসামান্য প্রতিভাবান। কিন্তু কিংবদন্তির যোগ্য উত্তরসূরি তাঁরা এখনও হয়ে উঠতে পারেননি। ধোনি যা করার ক্ষমতা রাখেন, তাঁরা এখনও তা করে উঠতে পারেন না।
বিপদে পড়লে কোহলি ধোনির দ্বারস্থ হন [সৌজন্যে: টুইটার]
আরও একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। বিশ্বকাপের আর মাত্র মাস ছয়েক বাকি। এই সময়টাতে ভারত খুব বেশি একদিনের ক্রিকেট খেলবে না। সুতরাং, ঠিক এই সময়ে ধোনির মতো একজন বড় মাপের ক্রিকেটারকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কিন্তু বুমেরাং হয়ে যেতে পারে।
তাঁর পরিবর্তে খুব সম্ভবত ঋষভকেই নেওয়া হবে। কিন্তু বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে প্ৰস্তুত করার কোনও সময়ই পাবেন না তিনি। বিশ্বকাপের আগে যে কয়েকটি হাতে গোনা যে ম্যাচ তিনি পাবেন এর প্রত্যেকটি তাঁর কাছে 'অগ্নিপরীক্ষা' হয়ে উঠবে। একজন উঠতি তরুণ ক্রিকেটারের জন্য চাপটা একটু বেশিই হয়ে যাবে।
তার উপর ভারতের মিডল অর্ডারে বিস্তর সমস্যা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ধোনিকে সরিয়ে দেওয়া মানে সমস্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। এবি ডিভিলিয়ার্স সরে যাওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকা যে সমস্যায় পড়েছে।
কাগজে কলমে, মানে সরকারিভাবে ধোনি আর এখন ভারতীয় দলের অধিনায়ক নন। তিনি উইকেটরক্ষক ও লেট মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ধোনির নেতৃত্বে আমরা একাধিক বিশ্বকাপ জিতেছি। দলের সাজঘরে এমন একজন ক্রিকেটারের উপস্থিতিটাই তো বহু মূল্যবান।
মাঠে অধিনায়ক বিরাট কোহলি সর্বদাই ধোনি-সমর্থক। যখনই বিপদে পড়েন তখনই ধোনির শরণাপন্ন হন বিরাট। আসলে ধোনির মতো গেম-রিডিং ক্ষমতা এই দলের আর কারুর নেই। ফিল্ড প্লেসমেন্ট থেকে শুরু করে তরুণ বোলারদের সাহায্য করা - উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে ধোনির এই অবদানগুলো তো অনস্বীকার্য। আর তাই তো ভারতীয় দলে এখনও মহেন্দ্র সিং ধোনির প্ৰয়োজন ফুরিয়ে যায়নি।
ভারতীয় দলে এখনও ধোনির প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি [সৌজন্যে: বিসিসিআই]
দলের স্পিন বিভাগের দুই স্তম্ভ কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চাহাল তো ধোনির পরামর্শেই গত এক বছরে বিশ্বমানের হয়ে উঠেছে।
ডিআরএস নিয়েও ধোনির সাফল্যের পরিসংখ্যান সকলেই জানেন। ধোনির 'ডিআরএস দাবি' খুব কম সময়তেই নাকচ হয়েছে। তাই তো এক ইংরেজ ধারাভাষ্যকর মজা করে বলেছিলেন যে ডিআরএস-এর নামকরণ ধোনি রিভিউ সিস্টেম করা হোক। ক্রিকেটে ডিআরএস এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ডিআরএস-এর দাবি জানাতে পারাটাও এখন ক্রিকেট স্ট্র্যাটেজির গুরত্বপূর্ণ অঙ্গ। আর, এই খেলাটাতেও ধোনি সিদ্ধহস্ত।
উইকেটের পিছনে নড়াচড়াতেও ৩৭ বছরের ধোনি এখনও বিশ্বসেরা। সবচেয়ে বেশি স্টাম্পিংয়ের রেকর্ড এখন তাঁর দখলেই। বিশ্বের তাবড় তাবড় ব্যাটসম্যানরা তাই এখনও উইকেট রক্ষক ধোনিকে সমীহ করে চলেন।
ধোনির যোগ্য উত্তরসূরী নেই। তাই অন্তত ২০১৯ সালের মে অবধি অর্থাৎ বিশ্বকাপ পর্যন্ত তাঁর জায়গা নিয়ে কোনও রকম ঝুঁকি নেওয়াটা উচিত কাজ হবে না।
বিশ্বকাপ জিততে বা অন্তত বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল অবধি পৌঁছাতে চাইলে ধোনিকে প্ৰয়োজন পড়বেই। কোচ ও অধিনায়ক এই কথাটি বেশ ভালোভাবেই জানেন। আশা করি ধোনির সমালোচকরাও অচিরেই তাঁদের ভুল বুঝতে পারবেন।
এই মুহূর্তে ভারতীয় দলের বেশ কয়েকটি সমস্যা রয়েছে। আর তা কোনও মতেই ধোনি নন।
কপিল দেবের একটি উক্তি মনে পড়ে গেল এই প্রসঙ্গে। ১৯৮৩র বিশ্বজয়ী অধিনায়ক বলছেন, "২০১৯ বিশ্বকাপ জিততে বিরাটের অগ্রাসন আর ধোনির স্থিতপ্রাজ্ঞ ভারতের একান্ত প্ৰয়োজন।"
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে