বয়স একটা সংখ্যামাত্র, বহু খেলোয়াড়ই বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখান
মধ্য তিরিশে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মেরি: মনে পড়ে যায় দিলীপ দোশি, দ্রোগবা ও লিয়েন্ডারের কথা
- Total Shares
বাংলার দিলীপ দোশির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। একজন ক্রিকেটারের ক্রিকেট জীবন যখন শেষ হতে চলে সেই মধ্যে তিরিশ অবধি তিনি শুধু প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছেন। দেশের হয়ে অভিষেক ম্যাচটি খেলার সুযোগ পেতে পেতে তাঁর বয়স বত্রিশ পেরিয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথমবারের জন্য টেস্ট ক্রিকেট খেলেন আর কী আশ্চর্য, ৩২ বছরে অভিষেক ঘটলেও তিনি ৩৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ফেলেন। শুধু তাই নয় তাঁর ঝুলিতে ১০০টি টেস্ট উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার ক্ল্যারি গ্রিমেট ছাড়া আর কোনও টেস্ট ক্রিকেটার নেই যাঁর তিরিশের পরে টেস্ট অভিষেক হওয়া সত্ত্বেও ১০০টির বেশি টেস্ট উইকেট রয়েছে।
ভবানীপুরের পয়সাওয়ালা গুজরাটি পরিবারের ছেলের সঙ্গে মণিপুরের প্রত্যন্ত এলাকার একটি কৃষক কন্যার সঙ্গে তুলনা করতে যাওয়াই বৃথা। তাও আবার একজন ক্রিকেটার আর একজন বক্সার। কিন্তু তুলনা চলে আসছেই। দু'জনেই যে তিরিশের পরেও, মানে ক্রীড়াবিদদের বুড়ো বয়সে, ভেল্কি দেখিয়েছেন। এই তো ৩৫ বছরেও বক্সিংয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেন মেরি কম।
তুলনাটা চলে আসাই স্বাভাবিক। কারণ যে কোনও ক্রীড়াবিদদের খেলোয়াড় হিসেবে মেয়াদকালটা নিতান্তই কম। তাই সকলেই চেষ্টা করেন কম বয়সে শুরু করতে। যাতে সময় থাকার সঙ্গে সঙ্গে ক্যারিয়ারে শিখরে পৌঁছাতে পারেন। কবে ক্রীড়া বিশ্বে এমন অনেক খেলোয়াড়ই রয়েছেন যাঁরা বুড়ো হাড়ে ভেলকি দেখিয়েছেন।
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মেরি কম
যেমন পাকিস্তানের ক্রিকেটার মিসবা উল-হক। ৩৩ বছর বয়সে পাকিস্তানের হয়ে ২০০৭ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ খেলেছিলেন তিনি। সচিন-সৌরভের মতো মহাতরকারা যে সাহস দেখাতে পারেননি। সমসাময়িক ক্রিকেটারদের কেউই স্কুল বা ক্লাব পর্যায়ে টি-২০ ফরম্যাট খেলেননি। তাই ক্রিকেট জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এই ফরম্যাট ক্রিকেট খেলে ক্রিকেট জীবনকে 'খেলো' করার সাহস কেউই দেখাতে পারেননি। সেদিক থেকে মিসবা কিন্তু অনবদ্য। টি-২০ ক্রিকেটেও তাঁর পারফর্ম্যান্স সত্যি সত্যিই মনে রাখার মতো। শেষ পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তিনি পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কত বয়সে জানেন? ২০১৫ সালে মিসবা ৪০ পূরণ করে ফেলেছিলেন।
বয়স্ক খেলোয়াড়দের কথা অনেক হল, এবার একটু বয়স্কা খেলোয়াড়দের কথায় আসা যাক, মানে যাঁরা বেশি বয়সে সফল হয়েছেন।
২০১১ সালে লি না প্রথম এশিয়ান হিসেবে টেনিসের গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব জিতেছিলেন। ১২ বছর টেনিস সার্কিটে কাটিয়ে ৩০ বছর বয়সে। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। দু'বছর বাদে ৩২ বছর বয়সে তাঁর ঝুলিতে ঢোকে দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্লাম খেতাবটি। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি ২০১৩ সালে। টেনিসের মতো একটা ভীষণ ভাবে শারীরিক কসরতের খেলায় একজন মহিলার কাছে তিরিশে এসে এহেন সাফল্য নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের দাবি রাখে। ২০১৪ সালে টেনিস জীবনের একদন শেষ লগ্নে এসে তিনি মহিলা টেনিসে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসেন। এটাই তাঁর জীবনের সেরা র্যাঙ্কিং। দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছানোর সাত মাসের মধ্যেই তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখিয়েছেন যাঁরা
টেনিস কোর্ট ছেড়ে এবার একটু ফুটবল মাঠে যাওয়া যাক। ফুটবলের মতো ভীষণ ভাবে শারীরিক পরিশ্রমের খেলায় শুরুটা তাড়াতাড়ি করাই ভালো। শেষটাও যে চটজলদি হয়ে যায়। কিন্তু দিদিয়ের দ্রোগবার জীবনটা একটু অন্যরকম। ১৫ বছরে প্রথম ফুটবলে পা দিয়েছিলেন তিনি। ২১ বছর বয়সে তিনি প্রথমবারের জন্য কোনও পেশাদার ক্লাবে যোগ দেন। বুড়ো বয়সে কেরিয়ারের শীর্ষ অবস্থায় পৌঁছালেন তিনি। ২০১৫ সালে দ্রোগবাকে দলে পেতে রীতিমতো মরিয়া ছিল চেলসি।
আবার বাংলায় ফিরে আসা যাক। লিয়েন্ডার পেজের কথা আমরা ভুলব কী ভাবে। ১৯৯৬ সালের আটলান্টা অলিম্পিক্সের ব্রোঞ্জ জয়ী এই টেনিস খেলোয়াড় এখনও অবধি চুটিয়ে এটিপি টূর্ণামেন্টগুলো খেলে চলেছেন, ৪৫ বছর বয়সেও। বছর তিনেক আগেও, ২০১৫ সালে মিক্সড ডাবলসে অস্ট্রেলিয়া ওপেন, যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ও উইম্বলডন জিতেছেন তিনি। ২০১৬ সালে জিতেছেন ফরাসি ওপেন। এবছরেও এটিপি টুর্নামেন্টে দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রের উইনস্টন-সালেমে রানার হয়েছেন ডাবলস বিভাগে।
আসলে কয়েকজন খেলোয়াড় আছেন যাঁদের কাছে বয়স মানে শুধু একটি সংখ্যা। সমস্ত প্রতিকূলতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বুড়ো হারে ভেল্কি দেখান তাঁরা।