ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া: ক্যামোফ্লেজ টুপি কি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে, নাকি ব্যাণিজ্যকরণের জন্য

ভারতীয় দল সশস্ত্র বাহিনীর মতো টুপি পড়ে রাজনীতি করেনি, ব্যাণিজ্যকরণ করেছে

 |  3-minute read |   14-03-2019
  • Total Shares

এমনিতে নীল রঙের টুপি ব্যবহার করে ভারতীয় ক্রিকেট দল। কিন্তু, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সদ্য শেষ হওয়া একদিনের সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে দেশের সশস্ত্র বাহিনীগুলোর মতো ক্যামোফ্লেজ টুপি পড়ে খেলতে দেখা গেল টিম ইন্ডিয়ার ক্রিকেটারদের। পুলওয়ামা জঙ্গিহামলায় নিহত চল্লিশজন সিআরপিএফ জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে রাঁচিতে সেদিন জলপাই রঙের টুপি পড়ে খেলতে নেমেছিলেন বিরাট কোহলিরা।

ইন্ডিয়া টুডের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই ম্যাচের টস হওয়ার পূর্বমুহূর্তে স্বয়ং মহেন্দ্র সিং ধোনি সেই টুপিগুলো দলের সদস্যদের মধ্যে বিলি করেন।

এর পর যা ঘটল তা সচরাচর দেখা যায় না, যদিও ঘটনাটি একেবারেই অবাক করে দেওয়ার মতো নয়।

ভারতীয় ক্রিকেট দল খেলা নিয়ে রাজনীতি করছে - এই অভিযোগ তুলে পাকিস্তান আইসিসির কাছে ভারতীয় দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানালো। প্রত্যুত্তরে, আইসিসি জানিয়েছে যে ভারতীয় দল তাদের অনুমতি নিয়েই সেদিন ক্যামোফ্লেজ টুপি পড়ে খেলতে নেমেছিল।

ঘটনাটি এখানেই শেষ হয়েও যাওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু, তা আর হল না।

প্রথমত, এই ধরণের সম্মান জানানো কিংবা শোক প্রকাশের ঘটনা ক্রীড়াক্ষেত্রে এর আগেও হয়েছে। বাহুতে কালো ব্যান্ড পড়ে কিংবা বুকে কালো ব্যাজ লাগিয়ে খেলতে নামার বহু উদহারণ রয়েছে। যেমন, ২০০৩ সালে, জিম্বাবুয়ের 'গণতন্ত্র মৃত্যুর' শোকপ্রকাশ করতে গিয়ে হেনরি ওলোঙ্গা ও অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার কালো আর্ম ব্যান্ড পড়ে খেলতে নেমেছিলেন। ক্রিকেটের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর মধ্যে এই ঘটনাটি অন্যতম। এর পরে, এই দুই ক্রিকেটারকে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে ইউকে-তে বসবাস করতে হয়েছিল।

গত মাসে পাকিস্তানকে বয়কট করার জন্য আইসিসির কাছে যে দাবি জানিয়েছিল ভারত সেই দাবিতে আইসিসি সারা দেয়নি। ক্যামোফ্লেজ টুপি পড়ে খেলার অনুমতি দিয়ে ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা কি বিষয়টিকে ব্যালেন্স করল? বিসিসিআই আইসিসিকে জানিয়েছিল, "যে দেশে সন্ত্রাসবাদের জন্ম সে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হোক।" আইসিসি জানিয়েছিল, "এরকম কিছু করা সম্ভবপর নয়।"

আসলে, পাকিস্তানকে বয়কট করলে আর্থিক দিক থেকে লোকসান হতে পারত। কিন্তু ক্রিকেটাররা যদি ক্যামোফ্লেজ টুপি পড়ে খেলে তাহলে আর্থিক লোকসানের কোনও সম্ভাবনাই নেই। বরঞ্চ এই জাতীয়তাবাদ আবেগের জন্য টুইটার জুড়ে ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য প্রশংসা উপচে পড়ছে।

টাকার কথাই যখন উঠল তখন আরও একটি প্রসঙ্গ উল্লেখ করতেই হবে। এক বিখ্যাত ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থা কিন্তু দেশের মুড্ বুঝে চটজলদি এই টুপিগুলো তৈরি করে ফেলেছিল।

এই টুপিগুলো কিন্তু শুধুই একটি কাপড়ের টুকরো নয়। কিংবা কনো কালো ব্যান্ড কিংবা গোলাপি রিবনও নয়। এই টুপিগুলো সব ব্র্যান্ডেড যার উপর আমার ভারতীয় দলের লোগো ছাপানো আছে। ভারতীয় দলের জার্সি প্রস্তুতকারক সংস্থাই এই টুপিগুলো তৈরি করেছে।

সরাসরি মূল বিষয়টিতে আসি - এই নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই প্রতুত্কারক সংস্থা কিন্তু টুপিগুলো তৈরি করে খেলোয়াড়দের লকার রুমে পাঠিয়ে দিয়েছিল।

একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থা যে এইরকম ভয়াবহ জঙ্গিহামলা নিয়েও 'ব্যবসা' করে বেরিয়ে গেল তা কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার চোখে পড়ল না। 'গেম ও থ্রোন্সের' মতো অনুষ্ঠান তো আর মুক্তি পাচ্ছে না যে অনুষ্ঠানটি সম্পর্কিত কথা ছাপা টি-শার্ট হুহু করে বিক্রি হবে।

এটা একটা জঙ্গি হামলা।

তাই জাতীয়তাবাদ নিয়ে 'টুপি' পড়ানোর কোনও প্রয়োজন নেই। তাও আবার ব্যাণিজ্যকরণের 'টুপি'।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment