বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে পরাজয়ের ঠিক পরে মস্কোয় কী করলেন ক্রোটরা?
স্টেডিয়ামের ভিতর-বাইরে ফরাসিদের ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকরাই বেশি
- Total Shares
ক্রোয়েশিয়া ভালো খেলেও পরাজিত। ফাইনালের শেষ বাঁশি বাজতেই মনে পড়ে গেল ১৯৯০ সালে আর্জেন্তিনার সেই পরাজয়ের কথা। ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট পেলেন ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদ্রিচ, কিন্তু সোনার বল পাওয়া আর বিশ্বকাপ পাওয়া তো এক নয়। ওদের আবেগ দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল। এই প্রথম ওরা বিশ্বকাপে ফাইনালে খেলল। তবে এ কথাও ঠিক যে ফ্রান্স জিতেছে যোগ্য দল হিসাবেই।
বিশ্বকাপ হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত ফরাসি ফুটবলাররা
ক্রোয়েশিয়ার চেয়ে ফ্রান্স অনেক শক্তিশালী দল। এমবাপে-পোগবা-গ্রিয়াজম্যানদের দক্ষতা নিয়ে কিছু বলার নেই। এমবাপে তো এ বারের সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের তকমা পেয়েছেন।
প্রতিবারই কোনও একটি দল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়। এতে নতুনত্ব কিছু নেই। তবে রাশিয়ার বিশ্বকাপে একটা জিনিস দেখা গেল, পেশাদারিত্ব কাকে বলে। একটা ছোট দৃশ্য থেকেই পরিষ্কার। বৃষ্টি নেমেছে, তার মধ্যেই চলছে পুরস্কার বিতরণ। সেখানে শুধু কর্মকর্তারা আছেন এমন নয়, দেশের প্রেসিডেন্টরাও আছেন। কে মাথায় ছাতা ধরল, আদৌ ধরল কিনা, সে দিকে কারও কোনও হুঁশ নেই।
কারও মধ্যে স্বতস্ফূর্ততার কোনও অভাব কোনও এক মুহূর্তের জন্য চোখে পড়ল না। পুরস্কারপ্রদান অনুষ্ঠান শেষেও তাঁরা সকলে মিলে উৎসবে মাতলেন। এই অনুভূতিটা ঠিক বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না। গ্যালারিতে বসে বিশ্বকাপ দেখার অভিজ্ঞতা সত্যিই অনন্য। তার উপরে যদি হয় ফাইনাল। এটা না দেখলে বোধহয় জীবনে কোনও একটা জিনিস বাদ পড়ে যাওয়া।
হারলেও ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকরা অনেকটাই খুশি
খেলা শুরু হয়েছিল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছটায়। খেলা শেষে পুরস্কারপ্রদান অনুষ্ঠান। সবই সুশৃঙ্খল। স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে লাগোয়া নিকোলাস স্কোয়্যার। এখানে ভিড় মহাষ্টমীর রাতে দেশপ্রিয় পার্কের ভিড়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। একজনের গায়ে গা ঠেকিয়ে লোকে দাঁড়িয়ে আছে, তবে কোথাও কোনও অসভ্যতা নেই। সকলেই আনন্দে মেতেছেন। যেন উৎসব। এই ভিড় শুরু হয়েছিল আগের রাত থেকেই।
ক্রোয়েশিয়া পরাজয়ে সুন্দর ভাবে নিয়েছে, তারা বিশ্বকাপ না পেলেও ভালো খেলা উপহার দিয়েছে। তাই দেশের ফুটবলারদের উৎসাহ দিতে উৎসবে মেতেছিলেন ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকরাও, তবে ফরাসি সমর্থকদের উচ্ছ্বাস তাঁদের মধ্যে খুব সঙ্গত কারণেই ঠিল না। বিশ্বকাপের পরে ক্রোট ফুটবলাররা তাঁদের কাছে নায়ক, দেশের নায়ক। পরাজয়ের গ্লানি তাঁদের নেই। হুলিগানদের মতো এঁরা কোনও ভাঙাভাঙি-অসভ্যতার মধ্যে নেই। কাউকে কোনও ভাবে বিরক্ত করছে না।
ফ্রান্সের সমর্থকরা সংখ্যায় ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকদের চেয়ে কমই ছিলেন। তাঁরাও একই রকম ভাবে আনন্দ করেছেন। এ যেন মহামানবের মিলনতীর্থ।
বিশ্বকাপ ফাইনাল হয়েছে এই মাঠেই
যখন আমরা ফিরছি, তখন নববর্ষের রাতে পার্ক স্ট্রিটের কথা মনে পড়ে গেল। খাবারের দোকান, ভিড়। লোকে খাবার খাচ্ছে, আনন্দ করছে।
এখানে মেট্রো রেলের পরিষবা ভীষণ ভালো। শহরের যে কোনও অংশে মেট্রো করে যাওয়া যায়। প্রতি ৯০ সেকেন্ড অন্তত একটি করে মেট্রো রেল আসছে। আমাদের সঙ্গে আলাদা গাড়ি ছিল বটে, তবে যাঁরা গণপরিবহণের উপরে ভরসা করে এসেছিলেন, তাঁদের কারও বিন্দুমাত্র সমস্যা হয়নি। একে ঠিক সময়ে ট্রেন চলাচল করে এখানে। অ্যাপক্যাব পরিষেবাও মস্কো শহরে বেশ ভালো। তবে লোকে মেট্রো রেলে চড়তে বেশি পছন্দ করেন।