ছোটদের ফুটবলদল সফল হচ্ছে, সাবালক হচ্ছে কি ভারতীয় ফুটবল
কী ভাবে নিজেদের খেলার টেকনিক ঠিক করছে ক্ষুদে ফুটবলাররা
- Total Shares
এখনকার প্রজন্ম আর মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল নিয়ে বিচলিত নয়। তারা বার্সেলোনা, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড বা রিয়েল মাদ্রিদ নিয়ে আলোড়িত হয়। দেশের ক্লাবকে দেশের ফুটবলাররা সমর্থন করবে না এমনটা আবার হয় নাকি? কিন্তু এর একটা ভালো প্রভাবও রয়েছে। টেলিভিশনের পর্দায় দিনরাত এই ক্লাবদলগুলোর খেলা দেখতে দেখতে তাদের মনের মধ্যে বড় বড় বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের স্টাইলগুলো একেবারে গেঁথে গেছে। যার প্রভাব কিন্তু এখনকার শিক্ষার্থী ফুটবলারদের মধ্যে স্পষ্ট লক্ষ করা যায়।
আমি এখন কোয়েম্বাট্টুর আর চেন্নাইতে একটি ফুটবল শিবির চালাই। অবাক হয়ে দেখি ফুটবল স্ট্রাটেজি থেকে শুরু করে খেলার আদব-কায়দা সম্পর্কে তারা কতটা ওয়াকিবহাল। আসলে লক্ষ্যটা যে বদলে গেছে! তারা এখন বাইচুং ভুটিয়া বা রমন বিজয়ন হতে চায় না, তাদের লক্ষ্য মেসি, ক্রিস্তিয়ানো রোনাল্দো কিংবা নেইমার।
সম্প্রতি অনূর্ধ্ব-২০ প্রতিযোগিতায় ভারত আর্জেন্তিনাকে ২-১ গোলে পরাজিত করেছে। তাও প্রায় আধ ঘণ্টা মতো ১০জনে খেলে। এই টুর্নামেন্টে এর ঠিক আগের ম্যাচেই বর্তমান অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভেনেজুয়েলার সঙ্গে ম্যাচ ড্র করেছিল ভারত। আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে অনূর্ধ্ব-২০ দলের জয়ের দিনেই কয়েক মাইল দূরে জর্ডনে অনূর্ধ্ব-১৬ ভারতীয় দল ইরাককে পরাজিত করে। এই ইরাকের দলটাই আবার এবছর অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায়ের এশীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দেশের পরবর্তী প্রজন্মের এহেন পারফর্ম্যান্স দেখে মনে নতুন স্বপ্নের সঞ্চার হয় বৈকি!
অনেকেই প্রশ্ন করতে শুরু করে দিয়েছে যে খুদেদের এই জয়ের পরে কি ভারত আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বকাপ খেলতে পারবে কি? আমি নিশ্চিত নই যে আগামী ১০ বছরের মধ্যে ভারত বিশ্বকাপ খেলবেই খেলবে, কিন্তু এই স্বপ্ন সত্যি হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
এখন এই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে হলে আমাদের কয়েকটি জিনিস নিশ্চিত করতে হবে। প্রথমেই দেখতে হবে যেন এই প্রতিভাগুলো হারিয়ে না যায় বা এই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই প্রতিভাগুলো বিকাশ যেন রোধ না হয়। আরও একটি জিনিসের উপর নজর দিতে হবে, এরা যেন যতটা সম্ভব একসঙ্গে সময় কাটাতে পারে। আমার তো মনে হয়, বিশ্বমানের কোনও অ্যাকাডেমিতে এদের এক সঙ্গে তালিম দেওয়া যেতে পারে।
এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি, বর্তমানে সুনীল ছেত্রীর ভারত খুব ভালো ফুটবল খেলছে। তার পিছনে আইএসএলের অবদান অনেকখানি। বিশ্বমানের কয়েকজন ফুটবলার খেলেন আইএসএলে। এঁদের সঙ্গে একই দলে খেলে বা এঁদের বিরুদ্ধে খেলে ভারতীয় ফুটবলের মান কিন্তু অনেকটাই বেড়েছে। একই ব্যবস্থা শুরু করতে হবে ছোটদের জন্যও।
আইএসএল দলগুলোর একটি করে জুনিয়র দল আছে। কিন্তু আইএসএল খেলা দশটি দলেরই এবার একটি করে অ্যাকাডেমি খুলতে হবে। যেখানে বিশ্বমানের পরিকাঠামো থাকবে।
প্রতিভা রয়েছে। ইন্টারনেট, টিভির যুগে তারা নিজেরাই অন্য দেশগুলোর সঙ্গে নিজেদের তফাৎটা কোথায় বুঝতে পারছে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে সেই তফাৎটাকে যত দ্রুত সম্ভব মুছে ফেলা যায়। আর্জেন্তিনা, ভেনেজুয়েলা বা ইরাক ম্যাচে খুদেরা তো তাই করে দেখাল। প্রার্থনা একটাই, বড় বেলাতেও তারা যেন এই খেলাটা ধরে রাখতে পারে।
এই খুদেদের জন্যে শুভেচ্ছা রইল।