শুধু ক্রিকেট নয়, অন্য খেলার ক্রীড়াবিদদের সাফল্যের কথাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে

দেশের প্রচুর ক্রীড়া প্রতিভাই সঠিক পরিকাঠামোর অভাবে অচিরেই হারিয়ে যায়

 |  3-minute read |   31-10-2018
  • Total Shares

এশিয়ান গেমসে অনবদ্য পারফর্মেন্সের পর দেশ জুড়ে আলড়োন পড়ে গিয়েছিল হেপ্টাথেলিট স্বপ্না বর্মনকে ঘিরে। তাঁর দুটি পায়ে ছ'টি করে আঙ্গুল। অর্থাৎ, তীব্র যন্ত্রণার সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই। এই ব্যাথা কিন্তু এক বা দু'দিনের জন্য স্বপ্নাকে সহ্য করতে হয়নি। যতবার অনুশীলনের জন্য তিনি জুতো পরেছেন ততবারই তাঁকে তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে।

বহুবার বহু লোকের কাছে তাঁর পায়ের জন্য মাননসই একটি বিশেষ ডিজাইনের জুতোর জন্য আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কেউই তাঁর কথায় কর্ণপাত করেনি। শেষ পর্যন্ত এশিয়াডে সোনা জিতে নিজের প্রতিভার পরিচয় দেওয়ার পর স্বপ্নার সমস্যা মিটল। এখন বেশ কয়েকটি জুতো প্রস্তুরকারক সংস্থা তাঁর জন্য বিশেষ ধরণের জুতো তৈরি করে দিতে প্রস্তুত।

body_103118062257.jpg

body1_103118062311.jpgদু'পায়ে ছ'টি করে আঙ্গুল নিয়েও সফল স্বপ্না [ছবি: রয়টার্স]

বর্মণ ব্যতিক্রমী। তাই তিনি সমস্ত বাধা পেরোতে পেরেছেন। কিন্তু এ দেশে বহু প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদই প্রয়োজনীয় কাঠামোর অভাবে অচিরেই হারিয়ে যায়।

রিও অলিম্পিক্সে অ্যাথলিট ওপি জৈশা অভিযোগ করেছিলেন যে তাঁকে সঠিক সময় জল ও এনার্জি ড্রিঙ্ক পরিবেশন করা হয়নি। যদিও ভারতীয়দের জন্য নির্দিষ্ট জল ও এনার্জি ড্রিঙ্ক বিতরণ কেন্দ্র তৈরি করা ছিল। মহিলাদের ম্যারাথন শেষ করেই অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন জৈশা।

ত্রিপুরার দীপা কর্মকার আবার বিশ্বের মাত্র পাঁচজন মহিলা জিমন্যাস্টদের মধ্যে একজন যিনি সাফল্যের সঙ্গে প্রাদুনোভা ভল্ট দিতে পারেন। স্থানীয় নেতাজি সুভাষ আঞ্চলিক কোচিং সেন্টারের বাতিল যন্ত্রপাতি দিয়ে শুরুর দিনগুলোতে অনুশীলন করতেন তিনি।

body2_103118062732.jpgরিও অলিম্পিক্সের ম্যারাথন শেষে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন ওপি জৈশা [সৌজন্যে: টুইটার]

জিম ম্যাটের উপরই প্রদুনোভ ভল্ট করতেন তিনি। ম্যাটের কণাগুলোকে দড়ির সাহায্যে এমনভাবে বাধা হত যাতে তিনি পা পিছলে না পড়ে যান।

এই সব লোকেদের কথা আমরা জানতে পারি কারণ তাঁরা নিজেদের পেশাগত জায়গায় একটা অসামান্য উচ্চতায় পৌঁছাতে পেরেছেন।

কিন্তু দেশের অনেক ক্রীড়াবিদই পরিকাঠামোর অভাবে হারিয়ে গিয়েছে এবং তাঁরা এই হারিয়ে যাওয়াটাকে নিজেদের ভাগ্য হিসেবে মেনে নিয়েছে।

কিন্তু এর উল্টো ছবিটাও রয়েছে। দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে এত না পাওয়ার মাঝেও জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা কিন্তু সফর চলাকালীন কলা এমনকি বউকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ারও আর্জি জানাতে পারেন।

বিশ্বের সবচাইতে ধনী ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে টিভি সত্ত্ব বেঁচে সবচাইতে ধনী ক্রিকেট বোর্ডের স্বীকৃতি পেয়েছে বিসিসিআই। আইপিএল সম্প্রচারের শর্ত প্রায় ২.৫২ বিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রি করা হয়েছে ষ্টার স্পোর্টসকে।

মাত্র দু'দশক আগে তীব্র অর্থ সঙ্কটে ভুগত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু ম্যাচের সম্প্রচার বেঁচে এখন সেই বোর্ডের কোষাগার উপচে পড়ছে। বিসিসিআই প্লেয়ারদের জন্য কলা কিনতে পারে এমনকি বাসও কিনতে পারে। প্লেয়ারদের জন্য রেলের কোচ বুক করতে পারে আবার ক্রিকেটারদের স্ত্রীদের জন্য বিলাবহুল ভ্রমণেরও ব্যবস্থা করতে পারে।

body3_103118063021.jpgবিসিসিআই ক্রিকেটারদের জন্য কলাও কিনতে পারেন, আবার বাসও কিনতে পারেন [ছবি: এপি]

এটা সত্যিই সুখবর।

কিন্তু দীপা কর্মকার বা স্বপ্না বর্মনদের দুঃখ দুর্দশা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করবে কে?

কেনিয়া বা জামাইকার মতো দেশগুলো আমাদের থেকে গরিব কিন্তু সেই দেশগুলোও আমাদের থেকে ভালো পারফর্ম করে কারণ আমাদের ক্রীড়া সংস্কৃতির অভাব রয়েছে। রাজনৈতিক নেতারা বিশ্বমানের পরিকাঠামোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। এর উপর ভোট রাজনীতি নির্ভর করে না। সুতারং, এই বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার কোনও মানে হয় না।

২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থাকে সাসপেন্ড করেছিল কারণ সংস্থার নির্বাচিত অনেকের বিরুদ্ধেই ফৌজদারি মামলা চলেছিল। এর ফলে সোচিতে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিক্সে ভারতীয় ক্রিড়াবিদরা দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেননি।

২০১৭ সালে মুক ও বধির অলিম্পিক্সে প্রতিনিধিত্ব করা ভারতীয় দলের সদস্যরা নয়া দিল্লিতে বিমানবন্দর থেকে বেরোতে চাননি কারণ বিমানবন্দরে কেউ তাঁদের অভ্যর্থনা দেওয়ার জন্য উপস্থিত ছিলেন না। তুরস্কে অনুষ্ঠিত ওই অলিম্পিক্সে একটি স্বর্ণপদক সহ মোট পাঁচটি পদক জিতেছিল ভারত।

ক্রিকেটের সাফল্যগুলোকে উপভোগ করা অধিকার আমাদের রয়েছে। কিন্তু তাই বলে অন্য খেলাগুলোর পরিবেশকেও মাননসই করে তুলতে হবে। যাতে অন্য খেলার ক্রীড়াবিদরা ঠিক থাকে পরিকাঠামো পায়।

আমরা সাফল্যের গল্প শুনতে ভালোবাসি। কিন্তু ক্রীড়াবিদদের সাফল্যের বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখতে হবে শুধু ক্রিকেট নয়, অন্য খেলাগুলোতেও।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

VANDANA VANDANA @vandana5

Author is a Delhi-based journalist.

Comment