বিরাট বাহিনীর ফ্যাব ফাইভ বলতে আমরা ব্যাটসম্যান নয় দলের পেস ব্যাটারিকেই বুঝি

বিদেশের সবুজ উইকেটে টেস্ট জিততে হলে পেস বিভাগ শক্তিশালি হতেই হবে, ভারতের এই অভাব পূরণ হয়েছে

 |  3-minute read |   28-08-2018
  • Total Shares

ভারতীয় দলের গত তিন-চার দশকের ইতিহাস ঘাটতে বসলে দেখা যাবে যে তা বরাবরই ব্যাটসম্যান আর দেশের মাটিতে স্পিনার নির্ভর। সেই সত্তর দশক থেকেই ভারতীয় দলে একত্রে কখনই একজন, বা বড়জোর দু'জনের, বেশি পেস বোলারকে দেখা যায়নি যাঁরা একার হাতে ম্যাচের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিতে পারেন। আর, ভালো মানের পেস ব্যাটারির অভাবে আমরা বরাবরই বিদেশের মাঠে ব্যর্থ হয়েছি।

সত্তরের শেষ থেকে আশির দশকের পুরোটাই ভারতীয় দলের পেসার বলতে আমরা হরিয়ানার কপিল দেবকেই বুঝতাম। কপিলের সঙ্গে চেতন শর্মা বা মদন লাল ছিলেন। কিন্তু তাঁরা সেই অর্থে ম্যাচ উইনার নন। কপিল যুগের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় দলের পেস বোলিং বিভাগের ব্যাটন চলে যায় দক্ষিণাঞ্চলের হাতে। কিন্তু সেখানেও কর্ণাটকের জাভাগল শ্রীনাথ বা ভেঙ্কটেশ প্রসাদ ছাড়া আর সেই অর্থে ম্যাচ উইনার কে ছিলেন?

সৌরভ-যুগের সূচনার পর বহুদিন ধরে জাতীয় দলে খেলেছেন জাহির খান ও আশিস নেহেরা। কিন্তু উনিশ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে, জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করার পরেও নেহেরার টেস্ট ম্যাচ সংখ্যা সর্বসাকুল্যে মাত্র ১৭। এই উনিশ বছরের বেশিরভাগ সময়তেই তিনি চোটাঘাতের সমস্যায় দলের বাইরে ছিলেন। সেই সময় ভারতীয় ক্রিকেটে ইরফান পাঠানেরও আবির্ভাব ঘটেছিল। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে হ্যাট্রিক করা সত্ত্বেও, তিনিও পাঁচ বছরের বেশি টেস্ট দলে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনি। সৌরভের 'টিম ইন্ডিয়া-য়' ফ্যাব ফাইভ বলে একটি শব্দবন্ধের জন্ম হয়েছিল। এই ফ্যাব ফাইভ বলতে কিন্তু আমরা দলের পাঁচজন ব্যাটসম্যানদের কথাই বুঝতাম - সচিন, সৌরভ, রাহুল, লক্ষণ ও শেহবাগ।

body-copy_082818054427.jpgসত্তরের শেষ থেকে আশির দশকে পেসার বলতে কপিল দেবকেই বুঝতাম

বিরাট-যুগে অবশ্য ভারতীয় ক্রিকেটের পট পরিবর্তন ঘটেছে। এখন আমরা ফ্যাব ফাইভ বলতে দলের ব্যাটসম্যান নয়, পেস ব্যাটারিকেই বুঝি - ইশান্ত শর্মা, জসপ্রীত বুমরাহ, উমেশ যাদব, ভুবনেশ্বর কুমার ও মহম্মদ শামি।

এখন আমাদের পেসাররা টেস্ট ম্যাচে ২০টি উইকেট দখল করার মতো যোগ্যতা রাখেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় তার প্রমান আমরা পেয়েছি। ইংল্যান্ডেও, একমাত্র লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্ট বাদ দিলে, বাকি দুটিতে টেস্টে পেসাররাই অধিকাংশ উইকেট পেয়েছেন। এই ফ্যাব ফাইভের বাইরেও হার্দিক পান্ডিয়ার মতো অলরাউন্ডার তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাঁচটি উইকেট দখল করে নেন।

বিরাট বাহিনীর পেস বোলিং বিভাগটা এখন এতটাই স্বয়ংপূর্ন যে পেসাররা কেউই একে ওপরের উপর নির্ভরশীল নয়। অর্থাৎ, এদের একজন না খেললেও বাকিদের উপর তার প্রভাব পড়ে না। কারণ, এরা প্রত্যেকেই ম্যাচ উইনার। একার হাতে ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা এদের প্রত্যেকেরই রয়েছে।

ভারতীয় ক্রিকেটের এই পরিবর্তনের সূচনা ২০১৩-১৪ সাল থেকে হয়েছিল। সেই সময় থেকেই বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান পেসার ভারতীয় ক্রিকেটের মহাকাশে আবির্ভূত হন।

এই পট পরিবর্তন কিন্তু কোনও একদিনের ম্যাজিক নয়। ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। সুপরিকল্পিত একটি রোড ম্যাপ তৈরি করে একসঙ্গে এতজন প্রতিভাবান পেসারদের উৎপন্ন করার জন্যে।

body1_082818054458.jpgপেসারদের ক্ষেত্রে ফিটনেস খুব প্রয়োজনীয়, সেদিকে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে।

বুমরাহকে দেখুন। বুড়ো আঙুলের চোটে ভুগছিলেন তিনি। কিন্তু মাত্র এক মাসের মধ্যে ফিট হয়ে তৃতীয় টেস্টে দলে ফিরলেন। ফিরেই, প্রত্যাবর্তন টেস্টেই অসাধারণ খেললেন।

ভারতীয় দোলের বর্তমান ফ্যাব ফাইভ কি এই টেস্ট সিরিজের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিতে পারবেন? এই ধরণের ভবিষ্যৎদ্বাণী করতে যাওয়াই বৃথা। 

বরঞ্চ, আরও গভীর বিষয় মনোযোগ করা যাক। ফ্যাব ফাইভের বাইরেও এখন গোটা দেশ জুড়ে অনেক প্রতিভাবান পেসার রয়েছেন যাঁরা যে কোনও মুহূর্তে জাতীয় দলের জায়গা করে নিতে পারেন। সুযোগ পেলে এরাও ম্যাচ উইনার হয়ে উঠতে পারেন।

দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে চিন্তা করলেই বলতেই হবে ভারত সমর্থক হিসেবে এই বিষয়টি আমার কাছে যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক।

অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্টইন্ডিজ এমনকি পাকিস্তানের সবুজ উইকেটে টেস্ট সিরিজ জিততে হলে পেস বিভাগকে শক্তিশালী হতেই হবে। ভারতের সেই অভাবটা বোধহয় এতদিনে পূর্ন হল।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

NAYAN BASU NAYAN BASU @thetaleslived

The writer is a L&D professional and a blogger

Comment