শুধুমাত্র আইপিএলের পারফর্ম্যান্সের নিরিখে জাতীয় দল! নির্বাচনী প্রক্রিয়া বড়ই উদ্ভট
রঞ্জি বা দলীপে ঝুড়ি ঝুড়ি রান করে বা উইকেট পেয়েও জাতীয় দলে ব্রাত্য থাকতে হচ্ছে
- Total Shares
একটা সময় ছিল যখন কোনও উঠতি ক্রিকেটার জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখলে রঞ্জি ট্রফি কিংবা দলীপ ট্রফির মতো ঘরোয়া টুনামেন্টগুলোকে পাখির চোখ করতেন। নির্বাচকমণ্ডলীরও কড়া নজর থাকত এই টুর্নামেন্টগুলোর উপর। ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ভালো পারফর্ম করা মানেই জাতীয় দলের দরজা খুলে যাওয়া। সুনীল গাভাস্কার থেকে শুরু করে মহম্মদ আজহারউদ্দিন, সৌরভ কিংবা রাহুল দ্রাবিড় থেকে শুরু করে যুবরাজ কিংবা হরভজন সকলেই ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফর্ম্যান্সের সুবাদে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন।
পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে গ্রেগ চ্যাপেল ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার পর অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে কী ভাবে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। সেখানে থেকে মহারাজ আবার মহারজকীয় ভঙ্গিমায় জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দলে ফিরেছিলেন সৌরভ। ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফর্ম্যান্সই দক্ষিণ আফ্রিকাগামী বিমানে তাঁর টিকিট পাকা করে দিয়েছিল।
কিন্তু সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচকরা ও টিম ম্যানেজমেন্ট একটি উদ্ভট প্রক্রিয়া মেনে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের নির্বাচন করছেন। এই প্রক্রিয়াতে ঘরোয়া ক্রিকেটের কে কেমন খেলছে তা গুরুত্ব পাচ্ছে না। শুধুমাত্র আইপিএলের পারফর্ম্যান্সকে মাপকাঠি করে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে অনবদ্য খেলেও জাতীয় দলে ব্রাত্য শাহবাজ নাদিম ময়াঙ্ক আগরওয়ালরা [ছবি: এএফপি]
কুণাল পাণ্ডিয়াকে দেখুন। বরোদার হয়ে মনে রাখার মতো কোনও পারফর্ম্যান্স নেই তাঁর। তবুও শুধুমাত্র মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে ভালো খেলে জাতীয় দলে ঢুকে পড়লেন তিনি। কী আশ্চর্য, প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়ে গেলেন!
কিন্তু রঞ্জি বা দলীপে বহু ক্রিকেটার অনবদ্য পারফর্ম করেও জাতীয় দলে ডাক পাচ্ছেন না। হাতেগোনা কয়েকজন সুযোগ পেলেও, তাঁদের প্রথম একাদশে রাখা হচ্ছে না।
গত দু'বছর ধরে করুণ নায়ার ও মায়াঙ্ক আগরওয়াল ঘরোয়া ক্রিকেটে ঝুড়ি ঝুড়ি রান পাচ্ছেন। দু'জনেই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। ছ'টি টেস্ট খেলেছেন নায়ার। একটি ৩০০ রানের ইনিংসও খেলে ফেলেছেন। কিন্তু এর পরেও করুণের বদলে শিখর ধাওয়ানকে টেস্ট দলে বেশি উপযুক্ত মনে করা হচ্ছে। একের পর এক ম্যাচে ব্যর্থ হয়েও দলে রয়ে যাচ্ছেন শিখর।
আর এক জনের কথা বলব এই প্রসঙ্গে। শাহবাজ নাদিম। ঝাড়খণ্ডের এই বাঁ-হাতি স্পিনার গত কয়েকটি মরসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে অনবদ্য খেলেছেন। ২০১৫-১৬ মরসুমে রঞ্জিতে ৫১টি উইকেট পেয়েছেন। শেষ বার রঞ্জি ট্রফিতে তাঁর দখল ৬১টি উইকেট। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে শাহবাজের আগে মাত্র পাঁচজন বোলার রঞ্জিতে এক মরসুমে ৫০টি উইকেট পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। এর পরেও শাহবাজ এখনও অবধি জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামেননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি-২০ দলে ছিলেন। সিরিজ জিতে যাওয়ার পরেও নিয়মরক্ষার ম্যাচগুলোতেও তাঁকে খেলানো হল না।
আইপিএলের পারফর্মেন্সের নিরিখে টি-২০ জাতীয় দল গড়া হচ্ছে। ভালো কথা। কিন্তু আইপিএলের মতো একটি টি-২০ টুর্নামেন্টের পারফর্ম্যান্স কী ভাবে একদিনের ও টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়ার মাপকাঠি হতে পারে সেই বিষয়টি কোনও ভাবেই আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।
মহেন্দ্র সিং ধোনিকে টি-২০ দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আইপিএলের পারফর্ম্যান্সের নিরিখে তাঁর বদলে ঋষভ পন্থকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যোগ্য ক্রিকেটার হিসেবে টি-২০ দলে সুযোগ পেয়েছেন পন্থ। কিন্তু টেস্ট দলে তাঁর চাইতেও যোগ্য উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান রয়েছে ভারতে। অথচ এই মুহূর্তে বিরাটের টেস্ট দলেও পন্থই প্রথম পছন্দের।
হিসেবটা ঠিক মিলছে না। কেমন জানি সব গুলিয়ে যাচ্ছে।