কেকেআরে থাকাকালীন তৎকালীন বোলিং কোচ ওয়াসিম আক্রমের শিক্ষা অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে সামিকে
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন, "তুই ফিট থাকতে পারলে দেশের হয়ে ৩০০ উইকেট নিবি"
- Total Shares
২০১০ সালে টাউন ক্লাবের হয়ে কলকাতার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে খেলেছিলেন সামি। সে বছর আমিও সেই দলে ছিলাম। প্রথম ম্যাচে কভারে ফিল্ডিং করতে করতে দেখেছিলেম উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা এক তরুণ প্রতিভাবান পেস বোলার কী দক্ষতার সঙ্গে বল করছেন। সেদিনই আমার মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মে ছিল যে এই ছেলে একদিন প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেট শাসন করবেন।
তবে সত্যি কথা বলতে গেলে আমি কোনও দিনও ভাবিনি যে দেশের হয়ে এতটা সফল হবেন মহম্মদ সামি। তিনি যে আমার প্রত্যাশাকে অনেকখানি ছাপিয়ে গিয়েছেন তা আজ আর সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এই তো অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পার্থ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ছ'টি উইকেট নিলেন তিনি। আমি অন্তত অবাক হইনি। প্রথম ইনিংসেও অসাধারণ বল করছিলেন সামি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আরও বেশি উইকেট পেলেন না। এই মুহূর্তে ৩৮টি টেস্টে সামির শিকার সংখ্যা ১৩৯। অনবদ্য বললেও কম বলা হবে।
আসলে সামির এহেন উত্থানের পিছনে দু'টি কারণ রয়েছে। প্রথমত, সামি যখন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের দরজা নাড়ছেন ঠিক সেই সময়তেই বাংলার দুই প্রতিভাবাবান পেসার - ম্যাকাও (শিবশঙ্কর পাল) ও রণদেব (বসু) অবসর নিলেন। ফলে, যে শূন্যতার সৃষ্টি হল সেখানে সুযোগ পেলেন সামি। আর এই এই সুযোগ তিনি পুরদস্তুর কাজে লাগলেন।
সঠিক পথেই দৌড়াচ্ছেন সামি [সৌজন্যে: ইন্ডিয়া টুডে]
আরও একবার পড়ে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছিলেন তিনি। যখন তিনি খানিকটা আচমকাই আইপিএলে কেকেআর দলে খেলার সুযোগ পেলেন। সেই সময়ে ওয়াসিম আক্রম ছিলেন কেকেআরের বোলিং কোচ। সেই ওয়াসিমের কাছে শিক্ষা নিতে কখনও সঙ্কোচ করেননি সামি। যার ফল আজ পাচ্ছেন। ওয়াসিমের শিক্ষা তাঁকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে।
সামির সবচেয়ে বড় গুণ পেস ও সুইংয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ। তাঁর সেরা অস্ত্র ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতাগুলো খুব দ্রুত বুঝে নিতে পারে। এর ফলে পরিকল্পনামাফিক বল করতে সুবিধা হয়। জাতীয় দলেও যোগ্য সম্মান পান তিনি। বিরাট কোহলির পছন্দের বোলার। একটা জিনিস দেখলেই তা বোঝা যায়, সামি চোটপ্রবণ। তাই তাঁকে একদিনের ক্রিকেটে বেশি ব্যবহার করা হয় না। আবার গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট বা ম্যাচে তাঁকে প্রথম একাদশে ডেকে নেওয়া হয়। এর থেকে বোঝা যায় যে ভারতীয় দলের কাছে বাংলার এই পেসারটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
সব শেষে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি কথা দিয়ে এই লেখা শেষ করব। সল্টলেকের যাদবপুর গ্রাউন্ডে একটি রঞ্জি ম্যাচ চলাকালীন মহারাজ সামিকে ডেকে বলেছিলেন, "তুই ফিট থাকতে পারলে জাতীয় দলের হয়ে ৩০০ উইকেট নিবি।"
ঈশ্বরের কাছে একটি প্রার্থনা, সৌরভের এই ভবিষ্যদ্বাণী যেন একদিন সত্যি হয়।