দুরন্ত ছন্দে বিরাটরা, বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট হিসেবে শুরু করবে ভারত
নতুন ফরম্যাটে ম্যাচ বেশি বলে শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চ প্রয়োজন, যা ভারতের আছে
- Total Shares
২০০৩ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারত দুরন্ত ছন্দে ছিলেন। সেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে বেশ কয়েকটি একদিনের টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলে ভারত। এর মধ্যে অধিকাংশ টুর্নামেন্টেই ফাইনালে প্রবেশ করেছিলেন সচিন-হরভজনরা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লর্ডসের মাঠে ন্যাটওয়েস্ট টুর্নামেন্ট তো ক্রিকেট ইতিহাসে চিরকালের জন্য জায়গা করে নিয়েছে।
বিশ্বকাপের আগের দুরন্ত ছন্দ সে বছর বিশ্বকাপে দুর্দান্ত কাজ দিয়েছিল। শুরুটা ভালো না হলেও টুর্নামেন্টের মধ্যিখানে হঠাৎ জ্বলে উঠে একের পর এক ম্যাচ জিতে ফাইনালে প্রবেশ করেছিল ভারত। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে ২০০৩ বিশ্বকাপে রানার হয়েছিল সৌরভের টিম ইন্ডিয়া।
সৌরভের ভারত যা পারেনি তাই করে দেখিয়েছিল ২০১১ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। সে বছর উপমহাদেশে বিশ্বকাপের আসর বসেছিল। ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে পরাজিত করে ২০১১ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় ধোনির ভারত। তিরাশির কপিলস ডেভিলসের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার ২৮ বছর পরে।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপ আসর বসছে ইংল্যান্ডে। আর, বহুদিন বাদে এমন একটি দল নিয়ে ভারত বিশ্বকাপে অংশ্রগ্রহণ করতে যে দলটি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম দাবিদার। বিরাট কোহলির ভারত যে ছন্দে রয়েছে তাতে এই বিশ্বকাপে তারা যে অন্যতম ফেভারিট তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক বিষেশজ্ঞই মনে করছেন, এ বছর ভারত বিশ্বকাপ না জিতলে সেটাই টুর্নামেন্টের 'বড় অঘটন' হবে।
আসুন একবার দেখে নেওয়া যাক কোন কোন কারণে ভারতীয় দলকে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিটের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে।
১) দুরন্ত ছন্দে
দুরন্ত ছন্দে রয়েছে ভারতীয় দল [ছবি: এপি]
বিশ্বকাপের আগের একদিনের সিরিজগুলোতে দুরন্ত ছন্দে রয়েছে বিরাট কোহলির ভারত। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজে প্রথম ম্যাচ হারলেও দুরন্ত প্রত্যাবর্তন করে সিরিজ জিতেছে ভারত। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে চলতি পাঁচ ম্যাচের একদিনের সিরিজে ইতিমধ্যেই ৩-১ এ এগিয়ে রয়েছে ভারত। বলতে গেলে, সিরিজের প্রথম তিনটি ম্যাচে প্রতিপক্ষকে হেলায় হারিয়েছে ভারত। এই সিরিজের শেষ ম্যাচ আগামী রবিবার এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ ৪-১ করবে ভারত। সব মিলিয়ে শুরুর আগের ছন্দ যদি বিরাটরা বিশ্বকাপেও ধরে রাখতে পারে তাহলে কেল্লাফতে।
২) ভরসা জোগাচ্ছে পেসাররা
নিউজিল্যান্ড সিরিজে দুটি ম্যাচের সেরা হয়েছেন তিনি [ছবি: এপি]
ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ সামি, হার্দিক পাণ্ডিয়া -- সকলেই দুরন্ত ছন্দে রয়েছেন। চলতি নিউজিল্যান্ড সিরিজে দু'টি ম্যাচে ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হয়েছেন সামি। ভারতীয় পেসাররা একদিনের সিরিজে ম্যাচের সেরা হচ্ছে এটা খুব ভালো লক্ষণ। ইংল্যান্ডের মাটিতে গ্রীষ্মের একেবারে শুরুতে বিশ্বকাপের আসর বসছে। সেই সময়টা যাকে বলে পেসারদের জন্য 'আইডিয়াল'। তাই, বলা যেতেই পারে, এই বিশ্বকাপে ম্যাচগুলোর ভাগ্য গড়তে পেসারদের ভূমিকা অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারে। আর এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় পেসাররা দুরন্ত ছন্দে রয়েছেন। সে জন্য চাপমুক্ত দেখাচ্ছে বিরাট কোহলিকে।
৩) তৈরি স্পিনাররা
কুলদীপের বল বুঝতে পারছেন না ব্যাটসম্যানরা [ছবি: এপি]
কুলদীপ, কেদার ও যুজবেন্দ্র -- ভারতের স্পিন ত্রয়ী দিনে দিনে অদম্য হয়ে উঠছে। বিশ্বকাপ যত এগোবে ততই কিন্তু দলগুলির স্পিন নির্ভরতা বাড়বে। আর তার জন্য প্রস্তুত ভারত। নিউজিল্যান্ড সিরিজে অসাধারণ ছন্দে রয়েছেন এই তিনজন, বিশেষ করে যুজবেন্দ্র। কুলদীপের বল এখনও বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ভারত সমর্থকদর এখন পোয়া বারো।
৪) রিজার্ভ বেঞ্চ
রিজার্ভ বেঞ্চ যথেষ্ট শক্তিশালী [ছবি: এপি]
দলের ক্রিকেটারদের, বিশেষ করে ব্যাটসম্যান ও পেসারদের, কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সুযোগ দিচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট। এবং, সুযোগের হাতছাড়া কোনও ক্রিকেটারই করতে চাইছেন না। বলা যেতেই পারে রিজার্ভ বেঞ্চ যথেষ্ট শক্তিশালী। এই বিশ্বকাপ রাউন্ড রবিন লিগ ফরম্যাটে হচ্ছে। অর্থাৎ, অংশগ্রহণকারী ১০টি দেশ প্রথম পর্যায়ে নিজেদের বিরুদ্ধে ন'টি করে ম্যাচ খেলবে। এর পরে সেরা চারটি দল সেমিফাইনাল খেলবে। এই ফরম্যাটে ম্যাচের সংখ্যা বেশি সুতারং একটি শক্তি রিজার্ভ বেঞ্চ একান্ত কাম্য। ভারত কিন্তু এর ব্যাপারেও তৈরি রয়েছে।
৫) বিপদে মরে রক্ষা কর
মিস্টার কুল, মহেন্দ্র সিং ধোনি [ছবি: রয়টার্স]
শুধু ভালো দল হলে চলবে না, ভালো দলের একজন ভালো অধিনায়ক চাই যিনি দলটিকে পরিচালনা করতে পারবে। বিরাট নিঃসন্দেহে ভালো অধিনায়ক। কিন্তু চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে দলকে উদ্ধার করে দেওয়ার মতো একজন নেতা বাড়তি পাওনা। আর মহেন্দ্র সিং ধোনি আমাদের সেই প্রাপ্তি মিটিয়ে চলেছেন। বিশ্বকাপের চাপের ম্যাচগুলোতে কাজে আসবে ধোনির ক্রিকেট মস্তিষ্ক।বিরাট কোহলিদের জন্য সুখবর সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ সেরা হয়ে বাড়তি অক্সিজেন জোগাড় করে ফেলেছেন ভারতের দুটি বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।
তাহলে আর কী? ফেভারিট হিসেবেই শুরু হোক ১৯৮৩ ও ২০১১ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতের ২০১৯ বিশ্বকাপ অভিযান।