এশিয়া কাপ: ভারত পাকিস্তান ম্যাচ কেন তার অতীতের জৌলুশ হারিয়েছে
পাকিস্তান ক্রিকেটাররা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভারতের ওপেনিং জুটি ১০০ রান করে ফেলল
- Total Shares
এই মুহূর্তের ক্রিকেট বিশ্ব সর্বদাই ব্যস্ততার তুঙ্গে থাকে। যে পরিমাণ ম্যাচ এখন খেলা হয় তা আগে কোনও দিনও হত না। এর ফলে, ক্রিকেটারদের মুখে প্রায়ই ফিটনেসের অভাবের অভিযোগ শোনা যায়। কিন্তু এই ব্যস্ততার বেশ কিছু ইতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। বেশি ম্যাচ খেললে নিজেদের ভুলভ্রান্তিগুলো শুধরে নিয়ে আবার নতুন করে শুরু করে খেলার মান উন্নয়ন করা যায়। তবে, দেখে শুনে মনে হচ্ছে, পাকিস্তান এই সুবিধাটুকুর সদ্ব্যবহার করতে পারল না।
এ বছরের এশিয়া কাপের আসর বসেছে দুবাইতে। গত রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এই টুর্নামেন্টে দ্বিতীয়বারের জন্য ভারত পাকিস্তান মুখোমুখি হল।
এই ম্যাচের চিত্রনাট্য আর ১৯ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়া টূর্ণামেন্টের প্রথম ভারত পাকিস্তান ম্যাচের চিত্রনাট্য হুবহু এক। দুটি ম্যাচেই টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান।
যারা খুব মন দিয়ে ক্রিকেট দেখে তারা আশা করে বসেছিল যে আগের ম্যাচের ভুলভ্রান্তিগুলো শুধরে ফেলে এই ম্যাচের জন্য একটি নতুন ছক কষতে দেখা যাবে পাকিস্তানকে। আগের ম্যাচ থেকে দল যে ইতিবাচক অভিজ্ঞতাগুলো সঞ্চয় করেছিল সেই অভিজ্ঞতাগুলোর উপর নির্ভর করবে পাকিস্তানের দ্বিতীয় ম্যাচের পরিকল্পনা।
ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ কখনই পাকিস্তানের হাতে ছিল না [ছবি: এপি]
ব্যাট হাতে খুব সাবধানে শুরু করেছিল পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানরা। উল্টোদিকে, রান রেট নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও বাউন্ডারি আটকাতে মরিয়া চেষ্টা করছিল ভারতীয় পেসাররা। কিন্তু, এর পর যা ভবিতব্য ছিল তাই ঘটল।
দ্রুত বেশ কয়েকটি উইকেটে পড়ল আর বর্ষীয়ান শোয়েব মালিককেই (৯০ বলে ৭৮ রান) পাকিস্তান ইনিংসকে সম্মানজনক অবস্থায় পৌছিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হল। চির-শত্রুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের এই অলরাউন্ডারের ট্র্যাক রেকর্ড সর্বদাই ভালো আর সেদিনও ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে অসাধারণ খেলে তিনি তাঁর দক্ষতার প্রমান দিলেন। ইনিংস শেষে বেশ কষ্টার্জিত ২৩৭ রান তুলল পাকিস্তান।
একদিনের ক্রিকেট এখন ব্যাটসম্যান সহায়ক হয়ে উঠেছে। তা সত্ত্বেও পাকিস্তানের এই রানকে আমি সম্মানজনক বলব কারণ বোলারদের কাছে তখনও অবধি ম্যাচ জয়ের সুযোগ ছিল।
৯০ বলে ৭৮ রানের লড়াকু ইনিংস খেললেন শোয়েব মালিক [ছবি: এপি]
একটি সুবর্ন সুযোগ এসেও ছিল। কিন্তু রোহিত শর্মার ক্যাচ ফস্কাল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। আর, সেই সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান পাকিস্তানের ভরাডুবির চিত্রনাট্য শুরু হয়ে গেল।
জীবনের সেরা ছন্দে রয়েছে শিখর ধাওয়ান যা যে যে কোনও ক্রিকেটপ্রেমী মাত্রেই উপভোগ করতে বাধ্য। অসাধারণ ড্রাইভ, অনবদ্য কাটশট এবং বেশ কয়েকটি চোখধাঁধানো পুলশট খেললেন তিনি। যা দেখে, মধ্য গগনের যুবরাজ সিংয়ের কথা মনে পড়তে বাধ্য।
পাকিস্তান কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভারতের ওপেনিং জুটি ১০০ রান করে ফেলেছে। এই নিয়ে তাদের ১৩ তম শতরানের যুগলবন্দি। এই সংখ্যা যে ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে সে বিষয় অধিকাংশ ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাই নিশ্চিত।
শিখর ও রোহিত মোট ১৩ বার ওপেনিং জুটিতে শতরান করলেন [ছবি: পিটিআই]
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেদের শতরানটাও সম্পন্ন করে ফেললেন শিখর ও রোহিত। পাকিস্তানের দেওয়া ২৩৮ রানের টার্গেটটা তখন ভারতের ওপেনিং জুটির কাছে খুব ছোট বলে মনে হচ্ছিল। একটি ভুল বোঝাবুঝির জন্যে রানআউট হলেন ভারতীয় বা-হাতি। কিন্তু অধিনায়ক রোহিত নির্ভরশীল অম্বাতি রাইডুকে সঙ্গে নিয়ে বাকি কাজটা সহজেই সম্পন্ন করে ফেললেন।
পাকিস্তানের ফিল্ডিংও আশানরুপ হয়নি। বেশ কিছু সুযোগের হাতছাড়া করেছে পাকিস্তান। ফিল্ডিংয়ের মান এতটাই নিম্নমানের ছিল যে তা আধুনিক ক্রিকেটে একেবারেই অচল।
এশিয়া কাপ ফাইনালে চির-প্রত্বিদ্বন্ধী দুই দেশ যদি আবার মুখোমুখি হয় তাহলে পাকিস্তানকে আগের দুই ম্যাচের স্মৃতি একেবারে মুছে ফেলতে হবে। আর, তা না করতে পারলে মাঠে নামার আগেই কিন্তু পরাজিত হবে পাকিস্তান।
ঈশ্বর জানেন যে এই স্মৃতি মুছে ফেলতে পারাটা এখন পাকিস্তানের কাছে কতটা প্রয়োজনীয়, এখন না পারলে আর কখনই পারবে না।
শুভেচ্ছা রইল, পাকিস্তান ক্রিকেট দলের জন্য।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে