সিডনির মাঠে বসে মনে হল ভারতে খেলা দেখছি, চারিদিকে শুধুই তেরঙ্গা

চিলি চিকেন-ফ্রাইড রাইসের উপায় নেই, বিয়ার ও হটডগ খেয়ে বিরাটদের খেলা উপভোগ করলাম

 |  3-minute read |   27-11-2018
  • Total Shares

দেশটার নাম অস্ট্রেলিয়া, শহরটার নাম সিডনি। প্রতিটি দেশের বা শহরের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যা একটি দেশের সঙ্গে অন্য একটি দেশের বা একটি শহরের সঙ্গে অন্য একটি শহরের তফাৎ গড়ে দেয়। তাই তো সিডনির সঙ্গে কলকাতার বা ভারতের অন্য কোনও শহরের তফাৎটা বেশি করে চোখে পড়ে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া যেখানে ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি আর ভারত উন্নয়নশীল দেশ।

গত সাড়ে তিন বছর ধরে আমি ডন ব্র্যাডম্যানের দেশে রয়েছি। স্টিভ ওয়ার শহরে। আর এই শেষ সাড়ে তিন বছর ধরে এই তফাৎটাই আমি লক্ষ করে গিয়েছি। কিন্তু গত রবিবারের সন্ধ্যেবেলায় এই তফাৎটা কেমন যেন এক ঝটকায় মিলিয়ে গেল।

তিরিশ অস্ট্রেলীয় ডলার, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় মোটামুটি ১৬০০ টাকা খরচ করে ভারত অস্ট্রেলিয়া চলতি সিরিজের শেষ টি-২০ ম্যাচটির টিকিট কেটেছিলাম। আর সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রবেশ করে প্রথমেই মনে পড়ল ভারতের কোনও স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখছি। ইডেন, চিপক বা মোহালির সঙ্গে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের বিরাট কোনও তফাৎ আমি খুঁজে পেলাম না।

body_112718053425.jpgউপস্থিত দর্শকদের নব্বই শতাংশই ভারতীয় ছিল [সৌজন্যে: লেখক]

এর প্রধান কারণ, গ্যালারিতে ভারতীয়দের সংখ্যা বেশি। আমরা যে স্ট্যান্ডে বসেছিলাম সেই স্ট্যান্ডে মাত্র চারজন অস্ট্রেলীয়। ঠিক আমাদের পিছনের সারিতে। আমরা তিন বাঙালি পরিবারের ছ'জন মিলে খেলা দেখতে এসেছি। আমাদের মধ্যে কথাবার্তাও বাংলাতে হচ্ছে। সব দেখে শুনে মনে হচ্ছিল যেন কলকাতার কোনও স্টেডিয়ামে বসে আমরা খেলা দেখছি। আর এই চার জন অস্ট্রেলীয়র আগমন অতিথি হিসেবে। নিজেদের দেশকে সমর্থন করবে বলে।

শুধু আমাদের স্ট্যান্ডে কেন। গোটা স্টেডিয়াম জুড়েই ভারতীয়দের আধিপত্য। গ্যালারির যেদিকেই তাকাই না কেন শুধুই তেরঙ্গা চোখে পড়ছে। সেদিন মাঠে ৩৭,৩৩৯ জন দর্শক উপস্থিত ছিলেন। এদের নব্বই শতাংশই ভারতীয়। যে দশ শতাংশ অস্ট্রেলীয় সমর্থক ছিলেন তাঁদের সিংভাগই বিরাটদের ব্যাটিংয়ের মাঝপথে স্টেডিয়াম ত্যাগ করেছিলেন।

ইডেন থেকে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের তফাৎটা অবশ্য চোখে পড়েছিল দু'ইনিংসের মাঝের ব্রেকের সময়। যখন আমরা ফুড স্টলগুলোর দিকে গিয়েছিলাম। ইডেনের মতো বিরিয়ানি, চিলি চিকেন ফ্রায়েড রাইস, ফ্রেঞ্চ টোস্ট কিংবা এগ বা চিকেন রোলের বালাই নেই। এখানে পাওয়া যাচ্ছে হট ডগ কিংবা বার্গার। আরও একটি জিনিস সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ফুড স্টলে পেয়ে গেলাম যা কলকাতা কেন ভারতের কোনও ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাওয়া যায় কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে - বিয়ার। ন'ডলার, মানে কমবেশি ৫৭৫ টাকা, খরচ করে কিনে ফেললাম এক মগ বিয়ার।

তারিয়ে তারিয়ে বিয়ারে চুমুক দিতে দিতে বিরাটের অনবদ্য ব্যাটিং উপভোগ করার চেয়ে মনোরম আর কীই বা হতে পারে?

body1_112718053532.jpgআমাদের স্ট্যান্ডে মাত্র চারজন অস্ট্রেলীয় ছিলেন, ঠিক পিছনের সারিতে [সৌজন্যে: লেখক]

শুধু স্টেডিয়াম নয়। স্টেডিয়ামের বাইরেও কলকাতার সঙ্গে প্রভূত মিল রয়েছে।

আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে স্টেডিয়াম ৩০ কিলোমিটার। এই তিরিশ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করার জন্য আমরা প্রথমেই হর্নসবি স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেনে চাপলাম। এনএসডাব্লু লিঙ্কের রেলগাড়ি চেপে আমরা পৌছালাম সিডনি সেন্ট্রাল স্টেশনে। সেন্ট্রাল স্টেশনে স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে স্টেডিয়াম যাওয়ার জন্য শাটেল বাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। কলকাতাতেও এরকম ব্যবস্থা থাকে, বিশেষ করে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে খেলা থাকলে।

আরও একটি মিল লক্ষ করলাম ম্যাচের শেষে। ইচ্ছে থাকলেও ভারতীয় সমর্থকরা বেশিক্ষণ উৎসব করতে পারলেন না, কারণ রাত হয়েছে। পরেরদিন সোমবার। সকাল সকাল অফিস যেতে হবে। তবে সবচেয়ে প্রধান কারণটি অন্য। কলকাতার মতোই গন্তব্যে যাওয়ার সময়ে পর্যাপ্ত শাটেল নেই। অগত্যা আমাদেরও হাঁটা শুরু করতে হব।

মিনিট ২০ হাঁটার পরে যখন সেন্ট্রাল স্টেশন পৌছালাম তখনও অবশ্য ক্লান্তি আমাদের গ্রাস করেনি। কী ভাবে করবে? বিদেশের মাঠে বসে দেশের জয় দেখে বাড়ি ফেরার মজাই আলাদা। তাও আবার চারপাশে যখন ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের লোকেরা তেরঙ্গা হাতে দেশের জয়গান করতে করতে চলেছে।

বিজ্ঞাপনের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, 'এ স্বাদের ভাগ হবে না।'

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SABYASACHI SARKAR SABYASACHI SARKAR

The writer is a software developer based in Sydney, Australia.

Comment